আবারও বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কার্যকর বিকল্প নিয়ে ভাবতে হবে

12

 

আবারও করোনার হানা দেশব্যাপী। দিনের পর দিন তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে সংক্রমণ। আক্রান্তের সংখ্যার সাথে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। এ অবস্থায় কয়দিন ধরে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে কিনা, নাকি বন্ধ করে দিতে হবে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে দেখা গেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অন্তপ্রাণ চেষ্টায় ছিল করোনা সংক্রমণ সহনীয় অবস্থায় যতদিন থাকবে, ততদিন সরাসরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণি কার্যক্রম চালু রেখে পাঠদান করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপুমনি গণমাধ্যমে গত কয়েকদিন ধরে এমনটিই বলে আসছিলেন। কিন্তু গত বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের পরিসংখ্যানে করোনার ভয়াবহ সংক্রমণের চিত্র দেখে গতকাল ২১ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রæয়ারি দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ করে দেয়া হল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের অবশেষে আবারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করলো সরকার। গতকাল শুক্রবার সকালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি এ ধাপে আপাতত দুই সপ্তাহের জন্য দেশের সকল স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন। এর আগে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণাসহ নতুন কয়েক দফা বিধি-নিষেধ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গতকাল শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) জারি হওয়া পরিপত্রে বলা হয়, আজ থেকে আগামী ৬ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত স্কুল, কলেজ ও সমপর্যায়ের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে বলে জানানো হয়। অনলাইন পোর্টাল ও টেলিভিশনের খবরে দেখা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের চলমান সকল পরীক্ষা ও শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে পরীক্ষা চালু করে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণারয় থেকে বলা হয়েছে মন্ত্রী পরিষদের সিদ্ধান্তের আলোকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও আগের মত অনলাইন ক্লাস ও অ্যাসাইনমেন্ট-এর মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে।
আমরা জানি, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শুরুর দিকে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপর বেশ কয়েক ধাপে ছুটি বাড়িয়ে প্রায় ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ খিস্টাব্দে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয় এবং সরাসরি শ্রেণিপাঠদান শুরু করা হয়। দীর্ঘ ছুটির মধ্যে সরকার বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে প্রথমে প্রাইমারি ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য সংসদ টেলিভিশনের মাদ্যমে শ্রেণি কার্যক্রম চালু করা হয়। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ প্রজ্ঞাপনে অনলাইনে ক্লাস চালু করা নির্দেশ প্রদান করলে প্রতিষ্ঠানগুলো ঘরে বসে অনলাইনে শ্রেণি কার্যক্রম চালু করে। এরপর অনলাইনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ আশানুরূপ না হওয়ায় বিকল্প শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসাবে অ্যাসাইনমেন্ট-এর ব্যবস্থা করা হয়। দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের সউৎসাহে অ্যাসাইনসমেন্ট গ্রহণ ও জমা দেয় সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। সরকার বলেছে, এবারও বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে টেলিভিশন, অনলাইন ও অ্যাসাইনমেন্ট পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে। আমরা জানি সরকার শিক্ষা কার্যক্রম াব্যাহত রাখার জন্য যে উদ্যোগ আগে নিয়েছে এবং আবারও একই পদ্ধতিতে ফেরার কথা ভাবছে, তাতে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু অতীতে এ বিকল্প পদ্ধতির শিক্ষা কার্যক্রমের মূল্যায়ন নিয়ে ইতোমধ্যে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে। অনলাইন ক্লাস চালু থাক, তাতে সমস্যা নেই, কিন্তু সরকার ডাকঢোল পিটিয়ে যে অ্যাসাইনমেন্ট শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিয়েছিল, করোনার ভয়াবহতার মাঝেও শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট সংগ্রহ করে, এরপর রাতদিন ঘরে বসে অ্যাসাইমেন্ট লিখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জমা দেয়ার পর এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষায় এর কোন মূল্যায়ন নম্বর যুক্ত না করায় হতাশ হয়েছেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা। এটিই সঠিক যে, কষ্ট করে একটি কাজ সম্পাদন করার পর এর সঠিক মূল্যায়ন না হওয়া দুঃখজনক। শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এবার এ পদ্ধতি আবারও চালু করা হলে অতীতের মত শিক্ষার্থী বা শিক্ষকরা আন্তরিকতা দিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট জমা বা মূল্যায়ন করবে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ রয়ে যাবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনলাইন ক্লাস ও অ্যাসাইনমেনট-এর কার্যকারিতা নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে হবে। এছাড়া উল্লেখিত তিন পদ্ধতি ছাড়া আর কোন বিকল্প পথে শিক্ষা কার্যক্রম ফলপ্রসূ অব্যাহত রাখা যায় কিনা- উপায় নিয়েও ভাবতে হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন সীমিত সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হচ্ছে, সংক্রমণ কমলে আবারও খুলে দেয়া হবে। আমরা আশা করি, মহামারি করেনার প্রকোপ দ্রুত কমে যাবে। দেশের অর্থনীতির চাকার গতি বাড়বে সেইসাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও খুলে দেয়া হবে।