আবদুল হামিদ

16

আবদুল হামিদ, বাংলাদেশী প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সাবেক রাষ্ট্রপতি। তিনি বাংলাদেশের ২০ ও ২১তম (ব্যক্তি হিসেবে ১৭তম) রাষ্ট্রপতি ছিলেন । তিনি প্রথম মেয়াদে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল এবং দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি ২১তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি সপ্তম জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার হিসেবে ১৪ জুলাই, ১৯৯৬ সাল থেকে ১০ জুলাই, ২০০১ সাল পর্যন্ত এবং ১২ জুলাই, ২০০১ সাল থেকে ৮ অক্টোবর, ২০০১ সাল পর্যন্ত স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন। নবম জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসাবে ২৫ জানুয়ারি, ২০০৯ সাল থেকে ২৪ এপ্রিল, ২০১৩ সাল পর্যন্তও দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের অসুস্থতাজনিত কারণে তার মৃত্যুর ৬ দিন পূর্বেই ১৪ মার্চ, ২০১৩ তারিখে তিনি বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে আসীন ছিলেন।
১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় তাকে ২০১৩ সালে স্বাধীনতা দিবস পদকে ভূষিত করা হয়।
১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি তারিখে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোঃ তায়েব উদ্দিন এবং মাতার নাম তমিজা খাতুন। তিনি নিকলী জিঃ সিঃ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। কিশোরগঞ্জ সরকারি গুরুদয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি ও বিএ পাশ করেন। সরকারী গুরুদয়াল কলেজের ভিপি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরামর্শক্রমে ঢাকা সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে আইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। কিশোরগঞ্জ জজ কোর্টে ওকালতি করেছেন। কিশোরগঞ্জ বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন বেশ কয়েকবার।
দাম্পত্য জীবনে তিনি স্ত্রী রাশিদা হামিদের সাথে সংসারধর্ম পালন করছেন। রাশিদা হামিদ কিশোরগঞ্জ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী। তাদের বড় সন্তান রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দলের সংসদ সদস্য। এছাড়াও তাদের এক ছোট ছেলে রাসেল আহমেদ তুহিন এবং অপর ছোট ছেলে রিয়াদ আহমেদ তুষার এবং এক কন্যা স্বর্না হামিদ।
আবদুল হামিদ আইনজীবী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। ১৯৫৯ সালে ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৬১ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালে ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়ার অভিযোগে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন।
১৯৬৩ সালে গুরুদয়াল সরকারী কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৬৪ সালে কিশোরগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগের সভাপতি, ১৯৬৫ সালে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতি এবং ১৯৬৬-১৯৬৭ মেয়াদে অবিভক্ত ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ সালে ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাকে পুনরায় কারাগারে প্রেরণ করেন। ১৯৬৯ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।
তিনি ১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে তৎকালীন ময়মনসিংহ-১৮ নির্বাচনী এলাকা থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম গণপরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন।
তিনি কিশোরগঞ্জের অন্যতম মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। ১৭ মার্চ ১৯৭১ সালে কিশোরগঞ্জের রথখোলা মাঠে ছাত্র জনসভায় স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করেন। ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি
১৯৭২ সালে তিনি গণপরিষদ সদস্য মনোনীত হন। ৭ মার্চ ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন ময়মনসিংহ-৩০ (বর্তমান কিশোরগঞ্জ-৫) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ৭ মে ১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[৬] তিনি ২৭ ফেব্রæয়ারি ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৩ জুলাই ১৯৯৬ থেকে ১০ জুলাই ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১২ জুলাই ২০০১ থেকে ২৮ অক্টোবর ২০০১ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১ অক্টোবর ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১ নভেম্বর ২০০১ সাল থেকে ২৯ অক্টোবর ২০০৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে দায়িত্বপালন করেন।
২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২৫ জানুয়ারি ২০০৯ সালে তিনি পুনরায় জাতীয় সংসদের স্পিকার মনোনীত হয়ে ২৩ এপ্রিল ২০১৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্বপালন করেন।
আবদুল হামিদকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়। কোনরূপ প্রতিদ্ব›িদ্বতা ছাড়াই আবদুল হামিদ বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। ২৯ এপ্রিল, ২০১৩ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থীরূপে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন ২১ এপ্রিল তারিখে। অতঃপর এ নির্বাচনে অন্য কোন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল না করায় ও প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাইপূর্বক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবুদ্দিন আহমদ ২০ এপ্রিল তারিখে তাঁকে দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন। এর ফলে তিনি জাতীয় সংসদের ইতিহাসে দ্বিতীয় স্পিকার হিসেবে দেশের তৃতীয় অবস্থান থেকে প্রথম অবস্থানে উন্নীত হলেন ও তার স্পিকার পদটি শূন্য হয়ে যায়। তার পূর্বে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস ১৯৯১ সালের ৫ম জাতীয় সংসদের স্পিকার থাকাকালীন রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ২৪ এপ্রিল, ২০১৩ তারিখে ভারপ্রাপ্ত স্পিকার এ এম এম শওকত আলী কাছ থেকে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
আবদুল হামিদ ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রæয়ারি ধারাবাহিকভাবে দ্বিতীয় মেয়াদে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং ২৪শে এপ্রিল ২১তম (পুনঃ নির্বাচিত) রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘতম রাষ্ট্রপতি। সূত্র : উইকিপিডিয়া