আজ থেকে নগরে ৭, উপজেলায় বসবে ২ শতাধিক পশুরহাট

22

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের আকাশে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দেখা গেছে জিলহজ মাসের চাঁদ। সেই হিসেবে আগামি ১০ জুলাই উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে পবিত্র ঈদ-উল আযহা। আত্মত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বীবিত হয়ে দেশের মুসলিম জনগোষ্ঠী প্রস্তুতি নিচ্ছেন পশু কুরবানী দেয়ার। আর সেই লক্ষ্যে ১৭টি শর্তে আজ থেকে চট্টগ্রাম নগরে বসছে ৪টি অস্থায়ী পশুর হাট। ৩টি স্থায়ী পশুরহাট মিলিয়ে নগরবাসী মোট ৭টি পশুর হাট থেকে তাঁদের কুরবানীর পশু কিনতে পারবেন।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরীতে স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে তিনটি। এর বাইরে ১৭টি শর্ত দিয়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে আরো ৪টি হাটের অনুমোদন দিয়েছে জেলা প্রশাসন। স্থায়ী-অস্থায়ী সব মিলিয়ে এবার নগরীতে পশুর হাট বসবে ৭টি। ঈদ-উল আযহার ১০ দিন আগে থেকে অর্থাৎ আজ ১ জুলাই থেকেই হাটগুলো চালু হবে।
এছাড়াও নগরের বাইরে ১৪ উপজেলায় বসবে দুই শতাধিক পশুর হাট। নির্ধারতি ১৭টি শর্ত মেনেই এসব পশুর হাট বসাতে হবে।
অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর ক্ষেত্রে ১৭টি শর্ত হলো- অস্থায়ী পশুর হাট-বাজার প্রধান সড়ক থেকে ন্যূনতম ১০০ গজ দূরে সুবিধাজনক স্থানে বসাতে হবে। যাতে কোনো অবস্থায় প্রধান সড়কের যানবাহন চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি না হয়। পশুর হাটের মাঠের চৌহদ্দির বাইরে এবং রাস্তায় কোনো পশু রাখা যাবে না বা খুঁটি স্থাপন করা যাবে না। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ও বিস্তার প্রতিরোধে পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, প্রবেশ ও বাহির পথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং সাবান-পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে। হাটে একদিকে প্রবেশ এবং অন্যদিকে বের হওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। যাতে জটলা সৃষ্টি না হয় সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। এছাড়া বৃদ্ধ ও শিশুদের পশুর হাটে প্রবেশ নিরুৎসাহিত করতে হবে। অনলাইনে পশু ক্রয়-বিক্রয়কে উৎসাহ প্রদান এবং হাটে ইজারাদাররা নিজস্ব পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করবেন। হাটে পশুর সুস্থতা যাচাইয়ে ভেটেরিনারি চিকিৎসকের অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। বাজার এলাকা নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার রাখতে হবে।
যোগাযোগ করা হলে সিএমপির কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, কোভিড-১৯ পজিটিভিটির হার বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সিএমপি তিনটি অস্থায়ী পশুর বাজার স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে।
চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসন চারটি অস্থায়ী পশুর হাট স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে। তিনি বলেন, ঈদ-উল আযহার ১০ দিন আগে বাজারগুলো শুরু হবে। অর্থাৎ আগামিকাল থেকে হাটগুলো বসবে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, নগরের পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়েও হাট বসাতে হলে ১৭টি শর্ত মানতে হবে। অন্যথায় হাট বসানো যাবে না। হাট বসানোর জন্য নগর ও উপজেলায় আমাদের কাছে অনেকগুলো আবেদন জমা পড়েছে। সেগুলো থেকে যাচাই-বাছাই করে নগরে ৪টি অস্থায়ী হাট বসানোর অনুমোদন দিয়েছি। উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা বাজারগুলো তদারকি করবেন। উপজেলায় মোট কতটি হাট বসবে সেটা এখনো নির্ধারণ হয়নি বলেও তিনি জানান।
পবিত্র ঈদ-উল আযহা উপলক্ষে নগরে যে তিনটি স্থায়ী হাট রয়েছে সেগুলো হচ্ছে- সাগরিকা বাজার, বিবিরহাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের হাট। নতুন অনুমোদন পাওয়া অস্থায়ী হাটগুলো হলো কর্ণফুলী গরুর বাজার, সল্টগোলা রেলক্রসিং সংলগ্ন হাট, দক্ষিণ পতেঙ্গার বাটারফ্লাই পার্কসংলগ্ন খালি মাঠ ও পতেঙ্গা লিংক রোড সংলগ্ন খেজুর তলা মাঠ।
অন্যদিকে বরাবরের মতো এবারও চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলায় স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে দুই শতাধিক পশুর হাট বসার কথা রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় পৌরসভার তত্ত¡াবধানে পরিচালিত হবে এসব হাট। এর বাইরে স্থানীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের স্বার্থে বিভিন্ন মাঠে-ময়দানে ছোট ছোট পশুর হাট বসানোর প্রস্তুতি থাকে প্রতিবছর। উপজেলা পর্যায়ের এসব হাটকেও নির্ধারিত ১৭টি শর্ত মানতে হবে। এসব হাটের স্বাস্থ্যবিধি ও নির্দেশনাগুলো পর্যবেক্ষণ করবে উপজেলা প্রশাসন।
উপজেলা পর্যায়ে কতগুলো হাট বসবে সেটা এখনো চ‚ড়ান্ত না হলেও ১৪ উপজেলায় ২ শতাধিক পশুর হাট বসছে সেটা অনেকটা নিশ্চিত। এরমধ্যে উত্তর চট্টগ্রামের সাত উপজেলায় ১৪০টি এবং দক্ষিণের সাত উপজেলায় ৮৫টির মতো পশুর হাট বসার কথা রয়েছে। কয়েকবছরের ধারাবাহিকতায় এবারও হাটগুলো বসার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় এবারও মিরসরাইয়ে ৩১টি, সীতাকুÐে ১০টি, ফটিকছড়িতে ৪৯টি, হাটহাজারীতে ১৫টি, রাউজানে ১৩টি, রাঙ্গুনিয়ায় ৭টি, স›দ্বীপে ১৫টি, বাঁশখালীতে ১২টি, সাতকানিয়ায় ২৩টি, লোহাগাড়ায় ১৫টি, চন্দনাইশে ১৭টি, বোয়ালখালীতে ৫টি, আনোয়ারা ৩টি এবং পটিয়ায় ১০টি পশুর হাট বসতে পারে। তবে শেষ মুহূর্তে পশুর হাটের সংখ্যা কমবেশিও হতে পারে।
করোনা পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ায় কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পশুর হাট বসানোতে ২০২০ সাল থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করছে সরকার। কঠোর নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও যানজটসহ জনসমাগম কমাতেও সক্ষম হয়েছে সরকার। এই সময়ে অনলাইন ভিত্তিক পশু বিক্রি বেড়েছে। তাছাড়া অনেক এলাকায় পশুর হাটের সংখ্যাও কমে যায় করোনার এই দুই বছরে। এবার ১৭টি নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে পশুর হাটের সংখ্যা আরো কমে যেতে পারে।
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরের মতো এবারও বন্দর নগরীর পশুর হাটে কোরবানির পশু কেনার ওপর কর অপরিবর্তিত থাকবে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (সিসিসি) রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামশুল তাবরিজ বলেন, গরুর হাটে পশু বিক্রয় মূল্যের ওপর পাঁচ শতাংশ কর দিতে হবে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, পশুর হাটে দায়িত্ব পালনের জন্য মোট ৩০টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, মেডিকেল টিম ক্রেতাদের কাছে কোরবানির পশুর স্বাস্থ্যের অবস্থা নিশ্চিত করবে।