আজকের তরুণ আগামী উন্নতরাষ্ট্রের চালিকাশক্তি

8

বয়স অনুপাতে আমাদের দেশে মোট জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ হচ্ছে তরুণপ্রজন্ম। যারা আগামীদিনে পরিবার, সমাজ, সরকার পরিচালনা থেকে শুরু করে, রাষ্ট্রীয় যাবতীয় কাজের অংশীদার হবে। শুধু তাই নয়, আমরা যারা বর্তমানে উন্নয়নশীল বাংলাদেশের প্রৌঢ় নাগরিক, আসন্ন ২০৪১ সালে আমাদের অনুপস্থিতিতে তখনকার উন্নত বাংলাদেশের নাগরিক হবে আজকের তরুণ প্রজন্মের নবীন সদস্যগণ। তখন তারাই হবে সমাজ থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত সর্বকার্য পরিচালনার চালিকাশক্তি। তাই তাদেরকে আগামী উন্নতরাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার দায়িত্ব যেমন আমাদের, একইভাবে উন্নতরাষ্ট্রের নাগরিক হয়ে গড়ে উঠার দায়িত্বও তাদের রয়েছে। আমরা যার যার অবস্থানে থেকে, তরুণ প্রজন্মকে উন্নত রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে ব্যর্থ হলে ধ্বংস হবে জাতি। আজকের তরুণ প্রজন্মকে দেশের শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে অবগত হয়ে স্বদেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। পরিবার সমাজ এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সকলক্ষেত্রে কোনটা উচিত কোনটা অনুচিত সেই বিষয়ে বিশ্লেষণ ও অনুধাবন করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা অর্জন করে নিতে হবে। উন্নত দেশের সাথে খাপখাওয়াতে হলে প্রয়োজন সুশিক্ষা। তবে শিক্ষা অর্জনের সাথে সাথে বহুমুখী জ্ঞান অর্জন করে নিতে হবে। এটা অস্বীকার করার উপায় নাই, দেশে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে জ্ঞান-বিবেক বিহীন সনদধারী শিক্ষিত প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে। যা আসন্ন উন্নত রাষ্ট্রের জন্যে কাম্য নয়। তাই অধিকতর জ্ঞান আহরণের জন্যে তরুণ প্রজন্মকে দৈনিক কমপক্ষে একটি করে পত্রিকা পড়তে হবে। নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সৎ সুহৃদদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলতে হবে, সময় সুযোগ হলে ভ্রমণে বের হয়ে নিজেরা সমৃদ্ধ হতে পারে। সর্বোপরি জীবনের একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করে লক্ষ্য পূরণে সচেষ্ট হতে হবে। এটা ভুলে গেলে চলবেনা, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে ইতিহাসের সকল বড় অর্জন ও পরিবর্তন তারুণ্যশক্তির প্রভাবে হয়েছে। তাই উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় ও উন্নত রাষ্ট্র গঠনে তরুণ সমাজের ভূমিকাকে সামনে রাখতে হবে, তাদেরকে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ও নেতৃত্ব প্রদানে যোগ্যতা অর্জন নিশ্চিত করতে হবে। ২০৪১ সালে উন্নতরাষ্ট্রের নাগরিককে হতে হবে সৎ আদর্শ, ঘুষ দুনীর্তিমুক্ত সুশৃঙ্খল জাতি। এখানে উল্লেখ্য, কেবল বড়বড় রাস্তাঘাট সুউচ্চ ভবন ব্রীজ কালভার্ট সেতুসহ অবকাঠামো নির্মাণ হলে রাষ্ট্র উন্নত হয়না। উন্নত রাষ্ট্রের নাগরিকের কথাবার্তা, আচার আচরণ, মানসিকতাও উন্নত হতে হবে। পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, যুগে যুগে সকল প্রকার বাঁক পরিবর্তন করেছে তরুণ সমাজ। কাজেই উন্নতরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আজকের নতুন প্রজন্মের চিন্তা চেতনার উপর। আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস, এখনকার তরুণ প্রজন্ম আগামী উন্নতরাষ্ট্র বিনির্মাণে অধিকতর সচেষ্ট হবে। একইসাথে একচল্লিশ সালে উন্নতরাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে অভিযোজিত হতে পারবে। পরিশেষে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত কবিতার চরণ উদ্ধৃতি করে আহ্বান জানাতে চাই- ‘ওরে নবীন ওরে আমার কাঁচা, ওরে অবুঝ ওরে সবুজ আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা।’
(ডিজিটেল বাংলাদেশ বিকশিত হবার ফলে বর্তমানে আমরা সবাই ডিজিটেল দেশের নাগরিক। তবে আমাদের তুলনায় এখনকার তরুণসমাজ ডিজিটেল যুগের সাথে যথাযথভাবে অভিযোজিত হতে পেরেছে। তাই দেখা যায়, তারা বেশীরভাগ সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বা ইন্টারনেটের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে। ইন্টারনেট ব্যবহারের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া ক্ষতির কিছু নেই। তবে ইন্টারনেটে যাতে কোন তরুণ তরুণী অনিয়ন্ত্রিত হয়ে না পড়ে সেই বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।)
লেখক: কলামিস্ট