অসমাপ্ত কাহিনী

37

 

ট্রেন স্টেশনে আসলেই বাঁশি কবিতার কথা মনে পড়ে যায়-
ঘরেতে এলনা সে তো, মনে তার নিত্য আসা যাওয়া –
পরনে ঢাকাই শাড়ি, কপালে সিঁদুর।
আজ আরো বেশি করে মনে পড়ছে।
ট্রেন আসতে দেরি হচ্ছে। প্লাট ফর্মের এ মাথা থেকে ও মাথা পায়চারী করছি। আর মাথার মধ্যে খেলা করছে, পুরানো স্মৃতি Ñ
“শুভ মিতা আর অভি উঠতো বটতলি থেকে। আমি উঠতাম ষোলোশহর থেকে। অভি মাঝে মাঝে ঠাট্টা করে বলতো, বলতো বাসুদেব ওরফেনন্দন, মিতার সাথে তোর কী বন্ধন? শুভ মিতা হেসে বলতো, তার আবার বন্ধন ? সে জানে না, ভালোবাসার রসায়ন। ওরা দুজন হেসে উঠত। আমিও হাসতে চেষ্টা করতাম, কিন্তু মিলতো না।”
একটি ঝিরঝিরে বাতাস পরশ বুলিয়ে গেল। মন স্মৃতি থেকে দূরে সরে এসেছে।
ভাবলাম – যাই ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করি।
ওয়েটিংরুমেএসেছি। সামনের বেঞ্চগুলো যাত্রিতে প্রায় পূর্ণ। পিছনের একটি বেঞ্চ খালি। আমি সেই খালি বেঞ্চে বসলাম। খানিক বাদে আরেকজন এসে বসেছে।
অপেক্ষায় পাশাপাশি বসে থাকা দুইজন মানুষের মধ্যে বেশিক্ষণ কথা না বলে থাকা যায় না। আমাদের মধ্যেও তা হলো। শুরু করেছি আমি।
– কোথায় যাবেন ?
– লাল মনিরহাট। আপনি ?
– শান্তাহার। বাড়ি কিলাল মনিরহাট ?
-না। চট্টগ্রাম। আপনার ?
– শান্তাহার।
– কীসে আছেন ?
-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। একটা জিজ্ঞাসু দৃষ্টি – শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ? তো, স্কুল?
কলেজ ? না, বিশ্ববিদ্যালয় ?
আমি তার কৌতুহলকে উপেক্ষা করে হেসে বললাম – আপনি কীসে আছেন ?
– অবসরে।
লোকটা হাসতে থাকে। বুঝা যাচ্ছে, বেশ মজা পাচ্ছেন।
আমি তাকে মজা উপভোগের সুযোগ দিলাম।
দেখি, একটু খোঁজ নিয়ে আসি – তা বলে উঠলাম।
স্টেশন মাস্টার থেকে খবর নিয়ে, ওয়েটিং রুমে ফিরে আসলাম।
লোকটার জিজ্ঞাসু দৃষ্টি – খবর কী ?
আমি মুখে হাসি ছড়িয়ে বসলাম। বললাম – ট্রেন আসতে আধ ঘন্টার মতন বাকি।
আমরা বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ। লোকটা টয়লেট সেরে এসেছে।
লোকটার নাম জানার খেয়াল জাগল। সরাসরি নাম জিজ্ঞেস করাটা শোভন দেখায় না। তাই নিজের নাম বলেই শুরু করলাম।
বললাম – আমার নাম বাসুদেব মন্ডল। আপনার ?
– অতুল বৈদ্য রায় চৌধুরী।
– তিনপদবী ?
– সে এক ইতিহাস।
অতুল বাবু বলতে থাকেন – আমার ঠাকুর দাদার নাম, দীনেশ বৈদ্য। আমার বাবার নাম, আশুতোষ বৈদ্য রায়। আর আমার নাম অতুল বৈদ্য রায় চৌধুরী। সামনে ছেলের বিয়ে। বিয়ের পর তার নাম হতে পারে কাজল বৈদ্য রায় চৌধুরী ঘোষ।
এমন সময় ঘোষণা কক্ষ থেকে ভেসে আসল -যাত্রি সাধারণকে জানানো যাচ্ছে যে, আর কিছুক্ষণের মধ্যে, শান্তাহারগামী জৈয়ন্তি এক্সপ্রেসটি, চার নাম্বার প্লাট ফর্মে এসে দাঁড়াবে।
অতুল বাবু কথা রেখে, হন হন করে হাঁটা শুরু করলেন।
আমিও উঠে দাঁড়ালাম।