অভিযানেও নিয়ন্ত্রণে নেই বাজার

23

নিজস্ব প্রতিবেদক

বছরের যেকোন সময়ের চেয়ে এখন পণ্যের দাম অনেকটা বেশি। যার কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে মধ্য ও নি¤œবিত্ত মানুষদের। এমনকি সবজির দামও নাগালের বাইরে। রমজানের শুরুতে প্রশাসনের পক্ষ থেবে বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখার ঘোষণা ও হুশিয়ারি দেয়া হলেও তা কোনভাবেই কার্যকর হচ্ছে না। প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। গতকাল নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার ও চকবাজার কাঁচাবাজার ঘুরে এসব পরিস্থিতি জানা যায়। নিত্যপণ্যের এমন দামবৃদ্ধিতে হুতাশাগ্রস্ত সাধারণ মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাজারে ইফতারসামগ্রীর মধ্যে ছোলা ও ডালসামগ্রী কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সকল ধরনের মাছ, মাংস ও ডিমের দাম আবারো বেড়েছে। সবধরনের বেগুন প্রতিকেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা ও প্রতিটি লেবু বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকায়। তাছাড়া টমেটো ২০ থেকে ২৫ টাকা, মরিচ ৬০ টাকা, কাকরোল ১৮০ টাকা, বরবটি ৯০ টাকা, দেশি শসা ৪০ টাকা, ঢেড়শ ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ২০ টাকা, কচুরলতি ৯০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, মূলা ৬০ টাকা, তিতকরলা ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, আলু ২৪ টাকা, শিম ৮০ থেকে ৯০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, লাউ ৫০ টাকা, পেপে ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা, ঝিঙা ১১০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, পুদিনা ৮০ টাকা, শিমের বিচি ১৪০ টাকা এবং গাজর ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
সবজি বিক্রেতা আবুল কালাম বলেন, আমরা পাইকারি দরে সবজি কিনে এনে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৩ টাকা লাভ করতে পারি। দামের বিষয়টি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের একটা চক্র দাম বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। উৎপাদন যেখানে হচ্ছে সেখান থেকে আমাদের হাতে আসতেও তিন-চার হাতবদল হয়।
রিয়াজউদ্দিন বাজারে মাছবাজার ঘুরে দেখা যায়, সব ধরনের মাছের দাম বাড়তি। সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় বাজারে সামুদ্রিক মাছের যোগানও কম। ফলে মাছের দাম আবারও চড়া। গতকাল বাজারে তেলাপিয়া ১৮০ টাকা, কোরাল ৬৫০ টাকা, পোয়া ৪০০ টাকা, রুই ২৬০ টাকা, শিং মাছ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ টাকা, মাঝারি সাইজের কাতল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ টাকা, ছোট আকারের ইলিশ ৪৫০ টাকা, সামুদ্রিক মলা ১৬০ টাকা এবং লইট্টা ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
মাছ ব্যবসায়ী কলিম উদ্দিন বলেন, বাজারে মাছের দাম বাড়তি। সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় প্রজেক্ট বা লেকের মাছ বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে মাছের দাম বাড়তি হওয়ায় ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতাও কমেছে।
এদিকে ব্রয়লার মুরগির বিষয়ে এফবিসিসিআই, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, দোকান মালিক সমিতি সহ সংশ্লিষ্টদের নানা চেষ্টার কথা বলা হলেও বাজারে তার প্রতিফলন তেমন দেখা যায়নি। পোল্ট্রি খাদ্য, বাচ্চা, গো-খাদ্যের দামবৃদ্ধি ইস্যুতে গত দেড় মাস ধরে আমিষের বাজারের অস্থিরতা চলছে। প্রশাসনের তদারকিতে গত দুইদিন ব্রয়লার মুরগি ও গরুর মাংসের দাম নিয়ন্ত্রণে আসলেও গত বৃহস্পতিবার থেকে এসবের দাম আবারও চড়া।
গতকাল রিয়াজউদ্দিন বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা কেজিতে। যা গত দুইদিন আগে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসে বিক্রি হয়েছিল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। তাছাড়া ব্রয়লারের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পাকিস্থানি সোনালি ও দেশি মুরগির দামও। সোনালি মুরগি বিক্রি হয়েছে ৩৬০ টাকা ও দেশি ৬০০ টাকা কেজিতে। সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে গরুর মাংসের দামও। গতকাল বাজারে হাঁড়ছাড়া গরু ও মহিষের মাংস বিক্রি হয়েছে ৯০০ টাকা কেজিতে, হাঁড়সহ ৭৫০ টাকা, কলিজা ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
রিয়াজউদ্দিন বাজারে গরু-মহিষের মাংস বিক্রেতা মো. সোলেমান বলেন, দেশিয় গরু-মহিষের দাম বেশি। যদি সরকার ভারত থেকে আমদানি করার সুযোগ দিতো তবে ৫০০ টাকার নিচে চলে আসতো মাংসের দাম।
মুরগির দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গে বিক্রেতা মো. শামিম বলেন, গত দুইদিন আগে আমাদের মুরগি কেনা কম পড়েছিল। গতকাল থেকে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো আবারো দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে বাড়তি দামে কিনতে হওয়ায় বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আমরা প্রতিকেজি মুরগিতে ৫ টাকার বেশি লাভ করতে পারি না। যেটা বাজার মনিটরিং টিমও জানেন। মুরগির দাম কমাতে হলে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাদের আইনের আওতায় আনলে দামও কমে আসবে।
বাজারে ডিমের দামও কমেনি। ফার্মের ডিম প্রতিডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা দরে। পাশাপাশি দেশি মুরগির ডিম ডজন ২১০ টাকা ও হাঁসের ডিম ডজন ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজার করতে আসা রকিবা সোলতানা রুফু বলেন, এবার রমজানে সবজির বাজার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও মাছ, মাংস, ডিমসহ সকল ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি। দেশে কোনো জিনিসের দাম বাড়লে সেটা আর কমে না। আয়ের সঙ্গে মিল রেখে চলতে গিয়ে মাছ-মাংস খাওয়া কমিয়ে দিতে হচ্ছে।
আরেক ক্রেতা মো. আলী রাশেদ বলেন, প্রতিদিন কি আর শাকসবজি খেতে ইচ্ছে করে? বাড়ির শিশু-বয়োবৃদ্ধরা তো মাছ ও মাংস খেতে চায়। কিন্তু তা কেনার আর সাধ্য নেই। কিছু সবজি কিনে বাড়ি ফিরছি। কারণ আয়ের সাথে সমন্বয় করেই আমাদের চলতে হচ্ছে।
বাজার মনিটরিং টিমের সদস্য, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক পূর্বদেশকে বলেন, প্রতিটি বাজার ও রমজানি পণ্য আমাদের নজরদারির মধ্যে রয়েছে। কেউ যদি অতিরিক্ত মুনাফার সুযোগ নেয় বা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছে এমন খবর পাই সাথে সাথে তাদের আইনের আওতায় আনছি। ইতোমধ্যে আমরা বেশকিছু অভিযান পরিচালনা করে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করার পাশাপাশি জরিমানার আওতায় এনেছি। আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে।