অভিনয়ে দ্রুতি ছড়ানো মাসুম আজিজ-এর বিদায় রতন কুমার তুরী

6

রতন কুমার তুরী

অভিনয়কে যিনি নিয়ে গিয়েছিলেন এক নিঁখুত শিল্পের পর্যায়ে, তিনি হচ্ছেন গুণী অভিনেতা মাসুম আজিজ।
মঞ্চ, টিভি নাটক ও সিনেমা সবখানেই অভিনয়ের দ্যুতি ছড়িয়েছেন মাসুম আজিজ। আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে তিনি টিভিতে কাজ করে আসছেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নাটক হলো- ‘উড়ে যায় বকপক্ষী’, ‘সাকিন সারিসুরি’, ‘তিন গ্যাদা’, ‘দুই দুকুনে চার’ মত জীবন ঘনিষ্ঠ নাটকগুলো, যে নাটকগুলো দেখতে দর্শক ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিভি সেটের সামনে বসে থাকতো।
টিভি নাটকগুলোতে মাসুম আজিজের অভিনয় দক্ষতা এবং জনপ্রিয়তা এতোই বেশি ছিল যে, প্রযোজকরা কোনো নাটক প্রযোজনার কথা ভাবলেই প্রথমে নাটকটিতে মাসুম আজিজকে কীভাবে কোন চরিত্রে ঢুকানো যায় সেটাই চিন্তা করতো। মাসুম আজিজ শুধু নাটকে এবং সিনেমায় নয় ব্যক্তিগত জীবনে চাল,চলন এবং বলন নাটকের মতই ছিল। ব্যক্তিগত জীবনে মাসুম আজিজ খুবই নিরহংকারী এবং অমায়িক ভদ্র মানুষ ছিলেন। মানুষের দুঃখকষ্ট বুঝতে পারতেন অন্তর দিয়ে। নাটকের পাশাপাশি এই সফল অভিনেতা বহু সিনেমায়ও অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন । ‘ঘানি’ সিনেমায় অভিনয় করে ২০০৬ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব চরিত্রের অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া চলতি বছর তাকে একুশে পদকে ভূষিত করেছে সরকার।
মাসুম আজিজ ১৯৫২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন অভিনেতা এবং নাট্য নির্মাতা। এছাড়া তার মঞ্চ, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রে অভিনয়ের খ্যাতি রয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি থিয়েটারে কাজের মাধ্যমে অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর ১৯৮৫ সালে তিনি প্রথম টিভি নাটকে অভিনয় করেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি ৪০০ এর অধিক সংখ্যক নাটকে অভিনয় করেন। অভিনয় জীবনে মাসুম আজিজের উল্লেখযোগ্য কর্ম হচ্ছে-
‘উড়ে যায় বকপক্ষী, ঘানি, এইতো প্রেম, সাকিন সারিসুরি, গহীনে শব্দ পুরস্কার-জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার, একুশে পদক-২০২২। মুলত’ হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত ধারাবাহিক নাটক ‘উড়ে যায় বকপক্ষী’ তে অভিনয়ের জন্য তিনি একবিংশ শতাব্দীর সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। তাছাড়া সরকারি অনুদানে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘সনাতন গল্প’ পরিচালনা করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন মাসুম আজিজ। ছবিটি ২০১৮ সালে মুক্তি পায়। ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এটি প্রশংসিতও হয়েছে। এই গুণী অভিনেতাকে আর কখনও ‘ঘানি’ আর ‘সাকিন সারিসুরি’র মত সিনেমা বা নাটকে অভিনয় করতে দেখা যাবেনা কারণ তিনি সা¤প্রতিক ক্যানসারের কাছে হার মেনে পরপারে চলে গেছেন।
প্রকৃতপক্ষে মাসুম আজিজ ছিলেন এমন একজন অভিনেতা যিনি নিজেকে অভিনয়ের সাথেসাথে উজাড় করে দিতেন এবং অভিনয়ের সাথে একাত্ম হয়ে যেতেন যার কারণে তার প্রতিটি অভিনয় হয়ে ওঠতো জীবন্ত। মুলতঃ জীবন কিংবা জাত শিল্পী না হলে এমন অভিনয় করা যে কারো পক্ষে অসম্ভব। মাসুম আজিজ জাত অভিনয় শিল্পী ছিলেন বলেই তার অভিনীত প্রতিটি নাটক এবং সিনেমা মানুষ গ্রহণ করেছেন অত্যন্ত সাবলীলভাবে সাথেসাথে তিনি মানুষের ভালোবাসাও পেয়েছেন অফুরান। এই গুণী অভিনেতার জন্য রইলো আমাদের বিন¤্র শ্রদ্ধা এবং অনিঃশেষ ভালোবাসা।

লেখক : কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক