অগ্নি-দুর্ঘটনা এড়াতে জনসচেতনতা জরুরি

24

বর্তমানে শুষ্ক মৌসুম। প্রচণ্ড শীত পড়লেও প্রকৃতি খুবই রুক্ষ-শুষ্ক। দেশে শুষ্ক মৌসুমে প্রচুর অগ্নি-দুর্ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। শুষ্ক মৌসুমে অগ্নি-দুর্ঘটনা এড়াতে জনসচেতনতা খুবই জরুরি বিষয়। অগ্নি দুর্ঘটনা সংঘটিত হবার পেছনে বহু কারণ রয়েছে। তৎমধ্যে বৈদ্যুতিক সট-সার্কিট, গ্যাসের চুলা, গ্যাস সিলিন্ডার, বাসাবাড়ির চুলার আগুন ইত্যাদি বিষয় ঘুরে ফিরে আসে। আগুন ধরে যখন ক্ষয়ক্ষতির পরিবেশ তৈরি হয় তখন অপরিকল্পিত আবাসন তৈরি, পর্যাপ্ত রাস্তার অভাব, আশে পাশে জলাশয়, পুকুর দিঘি তথা পানি সমস্যার কারণে অগ্নি নির্বাপন সম্ভব হয়ে ওঠেনা। বড় বড় শিল্প কারখানা, শপিংমল, মার্কেট, দোকানপাট, স্বল্প আয়ের মানুষ বসবাস কারী বস্তি ইত্যাদি স্থানে আগুন ধরলে দেখা যায় যে, অগ্নি নির্বাচন ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত না থাকার কারণে ঘর-বাড়ি, আসবাবপত্র, শিল্প কারখানা, দোকান-পাট, শপিংমল ইত্যাদির সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তা ছাড়া অসতর্কতার কারণে কিংবা কিংকর্তব্য বিমূড় হয়ে পড়ার কারণে অনেক প্রাণহানী ঘটে থাকে। দেশে অপরিকল্পিত আবাসন এবং গৃহনির্মাণ সম্পর্কে জনগণ সতর্ক হলে অগ্নি-দুর্ঘটনা সংঘটিত হবার পর দ্রæত অগ্নি নেভানোর উদ্যোগ নেয়া সাধারণ মানুষ কিংবা ফায়ার সার্ভিস কর্মচারীদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। দেশে পুকুর, জলাশয়, দিঘি খাল-নদী ভরাটের কারণে কোথাও আগুন লাগলে সাধারণ মানুষ বালতি কিংবা অন্যকোন পাত্রে পানি নিয়ে আগুন নেভানোতে সহায়তা করতে পারে না। অনেক সময় ফায়ার সার্ভিসের গাড়িকে ঘটনাস্থল হতে অনেক দূরহতে আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে হয়। রাস্তার অভাবে গাড়ি ঘটনাস্থলে প্রবেশ করতে পারে না। শুষ্ক মৌসুমে কোথাও আগুন ধরলে দ্রæত সময়ের মধ্যে আগুন ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে। সেজন্য বসতি এলাকায় পর্যাপ্ত রাস্তা থাকা জরুরি। গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে রাস্তা বড় রাখার বিষয়ে জনগণকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। শহর এলাকায় অপরিকল্পিত আবাসন তৈরিতে স্থানীয় প্রশাসনকে সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সর্তক করণে বলিষ্ট ভ‚মিকা রাখতে হয়। কিন্তু কার্যত দেখা যায় সাধারণ মানুষ হাটা চলা, গাড়ি প্রবেশের জায়গা না রেখে বসতি স্থাপন করে বসবাস শুরু করে। বিপদের সময় সর্বশান্ত হবার পর তার কারণ অনুসন্ধান করতে ব্যস্ত হয়। আগে ভাগে নিরাপদ পরিকল্পিত গৃহনির্মাণে জনগণ সচেতন হলে অগ্নিকাÐে কিছুটা হলেও ক্ষয়ক্ষতি কমতে পারে।
দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিবেদন হতে জানা যায়- ১৩ জানুয়ারি আনুমানিক রাত দু’টার দিকে রাঙ্গুনিয়ার পারুয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মহাজন পাড়ায় এক অগ্নি দুর্ঘটনায় একই পরিবারের পাঁচজন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু বরণ করে। ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। পত্রিকার প্রতিবেদন হতে বোঝা যায় অপরিকল্পিত গৃহনির্মাণ এ দুর্ঘটনার বিয়োগান্তক ঘটনার মূল কারণ। সিএনজি অটোরিক্স চালক খোকন বসাক মা-বাব, স্ত্রী এবং দুই সন্তান নিয়ে অগ্নিদগ্ধ ঘরটিতে বসবাস করতো। জায়গার সংকুলান হোক বা না হোক নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বসত ঘরটি নির্মাণ করেনি। ঘরে বিপদের সময় বিকল্প দরজার ঘর থেকে বের হতে পারার ব্যবস্থা না রাখায় এমন মর্মান্তিক দূর্ঘটনার কারণ বলে মনে হয়েছে। এতগুলো ঘরের সদস্য সামনের দিকে একটি মাত্র দরজা দিয়ে আসা যাওয়া করতো। দরজায় পাশে চুলা বানিয়ে রান্নার কাজ চালানো হতো। স্থানীয় লোকজন এবং পত্রিকার প্রতিবেদন বলছে- অসতর্কতার কারণে ঘরের চুলা হতে অগ্নিকাÐটি সংঘটিত হয়েছিল। আবার চুলার পাশে ঘরের বাইরে খোকন বসাকের সিএনজি অটোরিক্সটি রাখা ছিল। চুলার আগুন না নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়ার কারণে চুলা থেকে আগুন ছড়িয়ে সিএনজির গ্যাস সিলিন্ডারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। যে দিকে ঘরের মানুষ বের হবে সেদিকে আগুন ভয়ানক ভাবে ছড়িয়ে পড়ায় ঘর হতে কেউ বের হবার কোন সুযোগ পায়নি।
গৃহকর্তা খোকন বাসক সাহস করে হলেও তার শরীর আশক্সক্ষাজনক ভাবে পুড়ে গেছে। বাকি পাঁচজনের মধ্যে তার বাবা-মা, স্ত্রী এবং দু’সন্তান ঘর হতে বের হতে না পারায় তারই চোখের সামনে জ্বলে নিঃশেষ হয়ে যায়। একটু সতর্কতার সাথে গৃহ নির্মাণ করলে এবং সচেতনার সাথে রান্নার কাজ সম্পন্ন করলে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটতো না। বর্তমানে খোকন বসাক বেচে থাকলেও তার দগ্ধ হৃদয়ের বিষাদ যত দিন বেচে থাকবে ততদিন যন্ত্রণা সাথে নিয়েই জীবন কাটাতে হবে। আমরা আশা করি না খোকন বসাকের মতো পোড়া কপাল কারো হোক।
অগ্নি-দুর্ঘটনা রোধে জনসচেতনতার কোন বিকল্প নেই। মানুষ নিজের বুদ্ধি, বিবেক এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বসবাস না করলে প্রতিনিয়ত এমন দুর্ঘটনা আমাদের দেখতে হবে। ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট, মার্কেট, শপিংমল, কলকারখানা, অফিস-আদালত, সর্বস্থানে মানুষের সচেতনতা এবং দুর্ঘটনা এড়ানোর ব্যবস্থা থাকলে অগ্নিদুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি ও জীবননাশ এড়ানো সম্ভব। একমাত্র সম্ভাব্য সচেতন ব্যবস্থাই পারে অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে।