সুখের সন্ধান

39

“শাস্ত্র আনো-
হানো মোরে, হানো।
পন্ডিতে পন্ডিতে
ঊধ্বস্বরে চাহিবে খন্ডিতে
দিব্য বাণী।
জানি জানি,
তর্কবাণ
হয়ে যাবে খান-খান
মুক্ত হবে জীর্ণ বাক্যে আচ্ছন্ন দু চোখ,
হেরিবে আলোক।”
পারিবারিক পরিবেশে শিক্ষা,সামাজিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ইত্যাদি মানবজীবনকে সুন্দর ও সফল করার নিমিত্তে আবহমান কাল থেকে বহমান প্রচেষ্টা। স্থানিক-কালিক ভাবনার-আলোকে এর উদ্ভাস।
বাস্তবজীবনে ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি অর্থাৎ চরিত্র গঠনে অনুসঙ্গ বিশ্লেষণে প্রতিয়মান হয়-উদ্যম,সাহস, অনুভুতিশীলতা এবং বুদ্ধিই মানব চরিত্র গঠনের প্রধান ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়। যেমন :-
সাহস :- যে ব্যক্তি নিজের সত্তাকে বিশ্বের একটি অংশ হিসাবে অনুভব করতে পারে। সকলকে মর্যাদা ও শ্রদ্বা করে, ক্ষমা করার ক্ষমতা অর্জন করা, স্বাীয় জীবন, অন্য কোনও জিনিসকে মহত্তর বলে মনে করা; কিন্তু নিজের জীবনকে হেয় করে নয়।
উদ্যম :- মানুষের জীবন কে আনন্দময় করে, আত্মিকশক্তি বৃদ্ধি করে, ইতিবাচক শক্তির সন্ধ্যানে ব্যস্ত থাকে, আত্মত্যাগের ইচ্ছার উদ্ভব ঘঠায়। উদ্যমহীন মানুষ বহির্জগতের আনন্দ উপভোগে অসমর্থ,নিরানন্দ, এসব লোকের জীবনে প্রথমে আসে অবসাদ, ইহাই ক্রমে বিষন্নতা, মানসিক অবসাদ এবং পরে রোগে পরিণত হয়। নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি হয়।
উদ্যমশীলতা মানুষকে আত্মোপলদ্বি করতে সহায়তা করে। মানুষে মানুষে সহমর্মিতার দ্বার উদঘাটন করে। মানুষের জীবনের সবচেয়ে ক্ষতিকারক আত্ম-অহংকার এবং ঈর্ষার প্রতিশেধক।
অনুুভূতিুশীলতা :-সমবেদনা, সহমর্মিতা, জ্ঞানোত্থিত অনুভূতি অর্থাৎ সুচিন্তিত জ্ঞান হতে যে অনুভূতি উদ্ভূত হয়, ভাবা বেগ, সৌন্দর্যবোধ ইত্যাদি। এসব মানুষ কোমল, মধুর আচরনের, অপরের প্রতি শ্রদ্বাশীল এবং প্রাণবন্ত-ইতিবাচক চিন্তার প্রধান অনুসঙ্গ।
বুদ্ধি :- বুদ্ধিময় কৌতুহল, সদাজাগ্রত শুভ-কৌতুহল, যুত-প্রবৃত্তি, মানসিক ভাবাবেগ। শৈশব থেকে চারদিকের প্রকৃতি, পরিবার থেকে, ভ্রমণের মাধ্যমে যাহা অর্জন হয় ইহাই অভিজ্ঞতা, এ অভিজ্ঞতার সঙ্গে বুদ্ধির সংযোজন হলেই জ্ঞানের উদ্ভব হয়। আমাদের সমাজব্যবস্থা অসম, অর্থনীতি, শিক্ষানীতি, বিচারব্যাবস্থা, স্বাস্থ্যনীতি নিয়ে যারা নিয়োজিত তাদের নিরপেক্ষতা, নৈতিকতা, মানবপ্রেম, দেশপ্রেম নিয়ে হাজারও প্রশ্ন; এমতাবস্থায় দেশের মানুষের মানসিক বিকাশের জন্য সামাজিক অবস্থা, সকল প্রতিষ্ঠান এর ভূমিকা যথাযথ নহে,যাহা মানুষের মানুষ হয়ে উঠার পক্ষে যথেষ্ট নহে। এতসবের মধ্য দিয়ে দিয়ে আামাদের ব্যক্তি চরিত্র গড়ে উঠে। ব্যক্তি চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট। ইতিবাচাক এবং নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।
ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি : মানুষ মানুষের জন্য, বিশ্ব-প্রকৃতির প্রতি, মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং ক্ষমার, সহনশীলতার, উন্নত জীবন গঠনে সহায়ক শক্তির আবেশে অন্তরকে শক্তিশালী করত; গঠন করে। ইতিবাচক মনোবৃত্তি সমপন্ন মানুষই
শ্রেষ্ঠ মানুষ। তাদের জীবনে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধিত্তে ভরপুর হয়ে থাকে, এরা অনুভূতিশীল এবং প্রাণবন্ত। এরা কর্তব্যপরায়ন ও দায়িত্বশীল। এরাই সমাজে আসল ফরমহরভরবফ ব্যাক্তি।
নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি : পরিবারে কুটকৌশলী রমণী, কৃপণ স্বামী হলে এদের সন্তান কলেজ বিশ^বিদ্যালয়ে পড়লেও ও শৈশবে বাড়ী থেকে শেখা, দেখা আনন্দহীনতা, অবিদ্যা, ইশারা-বিদ্যা, অযৌক্তিক পরিবেশে মানসিক বিকাশ অসম্ভব হয়ে পড়ে। এরা আত্মকেন্দ্রিকতা, অধিকারবৃত্তির কারাগারে আবদ্ধ থাকে, এরা জীবনে সুখের সন্ধান পায় না। বিশেষ করে জন্মগতভাবে পরিবারের অসমতার কারনেই প্রধানত নেতিবাচকতা সৃষ্টি হয়। কিন্তু পরিবারিক, সামাজিক অসমতা থেকে ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি হতে পারে।মানুষ যে কোনো কর্ম সাধনের পূর্বে অন্তর্গত বিবেকের কাছে যায়, বিবেক হল বিভিন্ন অনুভূতির সংহত রূপ। এ কর্ম সম্পাদনে বিবেক থেকে যৌক্তিক, অপরের অসম্মানি, অপরাপর কোন ক্ষতির কারণ যেন না হয় এমন নির্দেশই আসে, কিন্ত আত্নকেন্দ্রিকতা, অধিকারবৃত্তির, অজ্ঞতার, অবিদ্যার কারাগারে আবদ্ধ মানুষ এ নির্দেশ মানতে পারে না।
নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ অপরের সাথে সমন্বয় পরস্পর শ্রদ্ধার আবেশ সৃষ্টি ও বন্ধনে অপারগ হয়। সর্বদায় মিথ্যা ধারনার বশিভুত হয়ে মিথ্যাচারের আশ্রয় গ্রহণ করে এবং ইহা স্বভাব সিদ্ধ হয় যায়। এর স্বপক্ষে যুক্তির দেয়াল সৃষ্টির লক্ষ্যে অসত্য ও মিথ্যচারে লিপ্ত থাকে। কোন কিছুর প্রতি যতœশীল হয় না। সব সময় শক্তির উৎস ইত্যাদির খোঁজে নিয়োজিত থাকে।
তাই এদের চেহারার উপর বিষাদের ছায়া বিরাজমান। সত্য-মিথ্যা মিশ্রিত করে পরিবারে সমাজে উত্তেজনা সৃষ্টিতে সুখ অনুভব করে। স্বিয়-সার্থের প্রতি একরোখা।
তাৎক্ষণিক ভাবে শ্রদ্ধার পাত্র, যে কাউকে মন্তব্য করতে দ্বিধাবোধ করে না। লজ্জা, অপরাধবোধ খুবই কম। এরা অপরকে হেনস্ত, অপমান করতে কোন চিন্তা করে না। এসব লোকের কারনে সম্ভাবনাময় পরিবার ধ্বংশ হয়, নিজেও পরিশেষে হতাশ হয়ে জীবন যাপন করে। এদের কোথাও স্থান হয় না। নিজের চিন্তার কারাগার থেকে মুক্তি পেতে হলে নিজের পূর্বপুরুষের, বাবা চাচার, নিজের অবস্থান, নিজের পরিবেশ কত নগন্য, কত সামান্য তাহা বর্হিজগতের সামনে দাঁড়ায়ে উপলদ্ধি করতে হবে, অনুভব করতে হবে। সমাজে, পরিবারে পরস্পরের আগ্রহ অনুরাগকে মূল্যায়ন না করে স্বার্থের দিকে নজর রেখে অধিকার খাটাতে চায় সে নীচতা, হীনতা থেকে মুক্ত হতে পরে না। নি:স্বার্থ সৃজনধর্মী আগ্রহ অনুরাগই সুখÑশান্তির হেতু। সুখ হল চেষ্টার ফল। অধিকারবৃত্ত, যেন-তেন প্রকার দায়িত্ব পালন সুখের অন্তরায়, এতে সুখ স্বপ্নেই থেকে যায়। মনের দ্বিধা দ্ব›দ্বমুক্ত করে অটুট ভালবাসা-ভাব রক্ষা করা, মানসিক সক্রিয়তা থেকে যে আনন্দ পাওয়া যায় তাহাই শ্রেষ্ঠ সুখ। উদ্যমে-আনন্দ, প্রীতির বন্ধনে-সাহস, শক্তি, পরস্পর অনুভবে,ভালবাসা-ভালবাসায় সুখ। পারিবারিক ইতিবাচক মনোভাব সকল উন্নতি ও সুখের গভীর কথা।
আধুনিক শিক্ষানীতি, বিদ্যালয় সমুহে সুসম পরিবেশ, শিক্ষার সর্বস্তরে যৌক্তিক ও বিজ্ঞান ভিত্তিক পাঠ্যসূচি প্রণয়ন জরুরি। সমাজে প্রচলিত অযৌক্তিক সংস্কার (কুসংস্কার) পরিত্যাগ করত ; বিদেশী মৌলবাদী, অশ্লীলতায় ভরা, অনুষ্ঠান সম্প্রচারে লিপ্ত টিভি চ্যানেল গুলি জরুরি ভাবে বন্ধ করা প্রয়োজন।
চেষ্টা এবং শ্রমের বিনিময়ে আমাদেরকে উন্নত জীবন লাভের জন্য এগিয়ে যেতে হবে। ব্যাক্তির ভেতরে যে জ্ঞানের ক্ষুধা, ভালোবাসার, সৌন্দর্যবোধের ক্ষুধা রয়েছে তা জাগিয়ে তুলতে পারলেই মানুষ ক্ষুদ্র-স্বার্থ, হীনস্বার্থ, পরশ্রীকাতরতা, আত্নকেন্দ্রিকতা, বদ¦মত, সংর্কীণ চিন্তা থেকে বের হয়ে আসবে এবং মহৎ-ভাবনা, সর্বজনে প্রীতিভাব এবং দায়িত্বশীলতার উন্মেষ ঘটবে।
‘তেন ত্যক্তেন ভূঞ্জীধা মা-গৃধঃ’
‘অ যধঢ়ঢ়ু সধহ রং যব, যিড় শহড়ংি যিধঃ যব ধিহঃং’