৯ টাকার পানির দাম ১৬ টাকা করার প্রস্তাব অনুমোদন

44

বিক্রিত মূল্যের চেয়ে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় পানির মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসার বাণিজ্যিক বিভাগ। আবাসিক ও অনাবাসিকে পানির দাম প্রায় ৬২ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়।
গতকাল শুক্রবার ওয়াসা বোর্ড সভায় এই মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবে আবাসিক গ্রাহকদের যে হারে মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে অনাবাসিকের ক্ষেত্রে সে হারে মূল্যবৃদ্ধি করা হয়নি। ফলে সব সময় সমহারে মূল্য বাড়লেও এবার আবাসিক গ্রাহকদের পানির দাম বেশি বাড়বে।
অন্যদিকে বোর্ড সভায় সুয়্যারেজ প্রকল্পের কনসালটেন্ট নিয়োগের প্রস্তাবে তিনজন গ্রাহক প্রতিনিধির নাম মনোনয়ন অনুমোদন দেওয়া হয়। মেয়াদপূর্ণ হওয়ার পরও গতকাল শুক্রবার বোর্ডসভায় উপস্থিত ছিলেন সোলায়মান আলম শেঠ।
ওয়াসার পক্ষ থেকে আবাসিক সংযোগে প্রতি ইউনিট (১ হাজার লিটার) পানির দাম ৯ টাকা ৯২ পয়সার স্থলে ১৬ টাকা ও বাণিজ্যিকে ২৭ টাকা ৫৬ পয়সার স্থলে ৪৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। এই প্রস্তাবে ওয়াসা বোর্ড আবাসিকে ১৬ টাকা এবং বাণিজ্যিকে ৪০ টাকা অনুমোদন দেয়। এতে করে আবাসিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ৬২ শতাংশ এবং অনাবাসিক বা বাণিজ্যিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে প্রায় ৪৮ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি পাবে। এ পর্যন্ত যতবারই মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে, প্রত্যেকবার সমহারে আবাসিক ও অনবাসিকের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে। এবারই প্রথম অনাবাসিক গ্রাহকদের বিশেষ সুবিধা দিয়েছে ওয়াসা বোর্ড। অনাবাসিকের চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি মূল্যবৃদ্ধি পাবে আবাসিক গ্রাহকদের।
চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান এসএম নজরুল ইসলাম বলেন, পানির প্রকৃত উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে বিক্রয়মূল্যের সামঞ্জস্য রেখে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটি এখন মন্ত্রণালয়ে যাবে। সেখানে অনুমোদন হলে নতুন দাম কার্যকর হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রতি হাজার লিটার পানি উৎপাদনে খরচ হয় প্রায় ১৬ টাকা। বিক্রি হচ্ছে এর কম দামে। সরকার এ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে।
দাম বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, আগে ভূ-গর্ভস্থ পানি বেশি উত্তোলন করতো ওয়াসা। এখন ভ‚-উপরিস্থ পানির দিকেই ঝুঁকছে। ভূ-উপরিস্থ পানি আলাদাভাবে শোধন করা হচ্ছে। ফলে উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ বেড়েছে। অথচ পানির দাম আগের মতোই রয়েছে।
গ্রাহক প্রতিনিধি হিসেবে নতুন নাম মনোনয়ন করা হয়েছে জানিয়ে এসএম নজরুল ইসলাম বলেন, ওয়াসা বোর্ডে গ্রাহক প্রতিনিধি হিসেবে নতুন নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামীকাল (শনিবার) আমরা মন্ত্রণালয়ে নামগুলো পাঠিয়ে দিব। নতুন প্রতিনিধি না আসা পর্যন্ত পূর্বের প্রতিনিধি দয়িত্ব পালন করবেন। এ হিসেবে সোলায়মান আলম শেঠ উপস্থিত হয়েছেন।
এদিকে বোর্ড সভায় ওয়াসার নেওয়া প্রথম সুয়্যারেজ প্রকল্পের কনসালটেন্ট নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ইরিনকো এসডিএন বিএইচডি নামে একটি মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিকভাবে মনোনীত করা হয়েছে।
আইন অনুযায়ী, ওয়াসা বছরে একবার সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ হারে পানির দাম বৃদ্ধি করতে পারে। গত ফেব্রুয়ারিতে বোর্ড সভায় ৫ শতাংশ হারে আবাসিক ও অনাবাসিক খাতে পানির দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন লাভ করে। পরবর্তী মার্চ মাস থেকে মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর হয়। ৫ মাসের মাথায় এসে আবার দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে ওয়াসা। যদিও এরই মধ্যে অভিযোগ উঠেছে ওয়াসার প্রায় অর্ধেকের বেশি পানি অপচয় হয়। ওয়াসার হিসাবেও এনআরডবিøও (অপচয়) আছে ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত।
গত বোর্ড সভায় জানানো হয়, ২৭ হাজার গ্রাহক ৫ ইউনিটের কম ব্যবহার করেও বিল দিচ্ছে গড়ে ৩০ ইউনিট করে। এতে করে ওয়াসা প্রকৃত অপচয় লুকাচ্ছে এমন অভিযোগে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি।
দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব সম্পর্কে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, পানির অপচয় রোধ করা, চুরি বন্ধ করা ও মিটার রিডারদের কারসাজি বন্ধ করার মতো উদ্যোগ না নিয়ে দাম বাড়ানোর উদ্যোগ কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। ৫ মাসের ব্যবধানে দাম বাড়ানোর এমন সিদ্ধান্ত গ্রাহক স্বার্থ বিরোধী। আবার আবাসিক গ্রাহকদের বেশি দাম বৃদ্ধি ও অনাবাসিকের ক্ষেত্রে কম দাম বৃদ্ধি করে পুঁজিবাদীদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।