হাটহাজারীর উদালিয়া গ্রামের মফজ্বল মিয়া সড়কটি যেন বিষফোঁড়া !

144

উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরত্বের হাটহাজারীর ১ নম্বর ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের উদালিয়া গ্রামের দূর্গম পাহাড়ে ঘেরা সেই আলোচিত সোনাই ত্রিপুরা পাড়ায় পৌঁছার অন্যতম হাজী মফজ্বল মিয়া সড়কটি যেন বিষফোঁড়া। দীর্ঘদিন সংস্কার, মেরামত ও উন্নয়নের অভাবে সড়কটির এখন বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। এতে করে সড়কটি দিয়ে চলাচলকারীদের হাজার হাজার জনসাধারণের পাশাপাশি বিশেষ করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী চাকরিজীবীদের প্রতিনিয়ত চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উক্ত সড়কটি ইউনিয়নের ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের জনসাধারণের চলাচলের একমাত্র সুবিধাজনক ও সহজ মাধ্যম। ৩নং ওয়ার্ডের ধলই বাড়ককুÐ সড়কের আকবর সওদাগরের ঘাটা থেকে সড়কটি শুরু হয়ে দুর্গম পাহাড়ে ঘেরা সেই আলোচিত সোনাই ত্রিপুরা পাড়া গিয়ে শেষ হয়েছে। সড়কটির দুরত্ব আনুমানিক ৪ কিলোমিটার। দীর্ঘদিন পর্যন্ত সড়কটি সংস্কার, মেরামত ও উন্নয়নের অভাবে বর্তমানে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া সড়কটি দিয়ে মুন্সিপাড়া, মফজল হাজীর বাড়ি, মিয়া চাঁনের বাড়ি, সোনাই ত্রিপুরা পাড়া, লম্বাটিলা, সুবজ টিলা, কালামিয়ার বাপের বাড়ি, আলি হামজার বাড়ি, নেজামত আলীর বাড়ি, রহমত আলীর বাড়ি ও ইয়াছিনের বাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াতের একমাত্র সহজ রাস্তা। তাছাড়া সড়ক দিয়ে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক লোকজন ছাড়াও দুইটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা, স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে থাকে। সড়কের একটি কালভার্ট ও মনাই খালের সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সড়ক চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়ায় অগ্নিদুর্ঘটনার সময় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, অসুস্থ ও গর্ভবর্তী রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিতে নেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি সংস্কার মেরামত ও উন্নয়নের জন্য দীর্ঘদিন পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে গেলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। বিগত ২০১৮ সালের আগস্ট মাসের শেষ দিকে সোনাই ত্রিপুরা পাড়ায় অজ্ঞাত রোগে (পরে হাম রোগ হিসেবে সনাক্ত) একই পরিবারের তিন শিশুসহ চার শিশুর মুত্যু ও ১ প্রসুতিসহ ৮ মাস থেকে ১৪ বছরের ৩৫জন নারী-শিশু অসুস্থ হলে প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা ত্রিপুরা পাড়ায় যাওয়ার জন্য একমাত্র হাজী মফজ্বল মিয়া সড়কটি ব্যবহার করে। ওই সময় সংস্কারবিহীন সড়কটি সংষ্কারের জন্য নানা প্রতিশ্রæতি দেন প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিবৃন্দরা। সময়ের বিবর্তনে সেই প্রতিশ্রæতির কথা দিব্বি ভুলে গেছেন। তাই এখনও পর্যন্ত সড়কটি সংস্কারে কোন উদ্যোগ না দেখে ভুক্তভোগীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান ওই এলাকার বাসিন্দা ওয়াসিম রেজা চৌধুরী। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও জানান, কষ্ট করে কোন রকমে হাজী মফজ্বল মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত কোন রকমে যাতায়াত করা গেলেও ত্রিপুরা পাড়ায় প্রয়োজনে গাড়ি নিয়েও যাতায়াত করা প্রায় অসম্ভব। উক্ত এলাকার আরেক বাসিন্দা হাজী মফজ্বল মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাক্তন শিক্ষক ও সাবেক ইউপি সদস্য নুরুল আলম চৌধুরী প্রকাশ মানিক মেম্বার এ প্রতিবেদককে জানান, সড়কটি দীর্ঘদিন যাবত চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়লেও কেউ যেন দেখার নেই। ত্রিপুরা পাড়ার ঘটনার পরপর প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা এ সড়ক পথে যাতায়াত করলেও এ যাবত সড়কটির উন্নয়নের জন্য কেউ উদ্যোগ নিয়েছে বলে মনে হয় না।
অথচ এ সড়ক দিয়ে এলাকার প্রায় ২০-২৫ হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত চলাচল করে। এটি কিন্তু একটি বেশ জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক। তাই তিনি অবিলম্বে সড়কের উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে ফরহাদাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইদ্রিছ মিয়া তালুকদার সড়কটির করুণ অবস্থার কথা স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, তিনিও সড়কটির উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেছেন। তাছাড়া সড়কের সোনাই খালের সেতুটি নির্মাণ জরুরী বলেও তিনি মনে করেন।