হাটহাজারীতে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা

30

হাটহাজারী উপজেলাধীন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১নং দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের একটি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি দিয়েই শুরু। গত ২৭ এপ্রিল তিনি এ উপজেলার করোনা আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি। এ আক্রান্তের সংখ্যা এক মাসের ব্যবধানে ১২৩ জনে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিদিন বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। ৩০ মে সংবাদকর্মী, ব্যাংক কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্যকর্মীর পরিবারের সদস্যসহ ৩৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। গতকাল রবিবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু সৈয়দ মো. ইমতিয়াজ হোসাইন।
তিনি জানান, গত ২৬ মে পর্যন্ত দু-এক দিন পরপর এক-দুই জন করেই বাড়ছিল আক্রান্তের সংখ্যা। কিন্তু ২৭ মে একদিনেই আক্রান্ত হন ৮ জন। ২৮ মে এক দিনেই আক্রান্ত হন ২৬ জন। এরপর দুই দিনের ব্যবধানে ৩০ মে আক্রান্ত হন ৩৪ জন। এরমধ্যে রয়েছেন ৮ নারী, ২ শিশু ও ২৪ জন পুরুষ। যা চট্টগ্রামের কোন উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ। এছাড়া ৩ নারীসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন অফিস থেকে প্রাপ্ত নমুনার ফলাফলে হাটহাজারীতে একদিনে নতুন করে ৩৪ জন করোনা শনাক্ত হন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মরত এক চিকিৎসক জানান, চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোর মধ্যে হাটহাজারী এখন করোনার হটস্পটে পরিণত। এছাড়া উপসর্গ ও উপসর্গহীন অনেকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ঈদ পূর্ববর্তী কেনাকাটা ও অসচেতনতার কারণে হাটহাজারী করোনার হটস্পট হয়ে উঠেছে। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে হাটহাজারী মানুষের সমাজিক দূরত্ব ও হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে বেগ পেতে হয়েছে উপজেলা প্রশাসনকে।
এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. তাহনিয়া সাবেরা চৌধুরী জানান, এ পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সর্বমোট ৫৪৭ নমুনা চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার ফৌজদারহাটে অবস্থিত বিআইটিআইডি ল্যাবে প্রেরণ করা হয়েছে। তারমধ্যে ৫১৮ জনের নমুনার ফলাফল আমরা পেয়েছি। প্রাপ্ত ফলাফলে ১২৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। যার শতকরা হার প্রায় ২২.৩৯ শতাংশ। শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে হাটহাজারীর বাসিন্দা ১১৬। এছাড়া উপজেলার বাইরে সিটি কর্পোরেশন ও অন্য উপজেলার রয়েছে ৯ জন। আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত সুস্থ রোগীর সংখ্যা ১০ জন।
এ ব্যাপারে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুহুল আমিন বলেন, শুরু থেকে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে আমরা বিরামবিহীনভাবে কাজ করে গেছি। মানুষ সচেতনতা, সামাজিক দূরত্ব মানার ক্ষেত্রে প্রশাসনের সাথে রীতিমতো লুকোচুরি খেলছেন। অনেকে নিয়ম মানেননি। ঈদ পূর্ববর্তী দোকানের সামনে দরজা বন্ধ রেখে পেছনের দরজা দিয়ে বেচাকেনা করেছেন। আমরা অভিযান পরিচালনা করে আসার পরে দেখেছি তারা আবারও দোকান খুলেছেন।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, বর্তমানে করোনা ভাইরাস সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়ার সময়, যেটাকে ‘হাই টাইম’ বলা যায়। এছাড়া চট্টগ্রামে মানুষ স্বাস্থ্যবিধিসহ সামাজিক দূরত্ব কোনোভাবেই মানছেন না। সে কারণে সংক্রমণের হার বাড়ছে।
অন্যদিকে ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি ল্যাবে গত শুক্রবার থেকে নমুনা পরীক্ষা বন্ধ থাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও নমুনা নেয়া বন্ধ ছিল। তবে আজ সেমাবার থেকে বিআইটিআইডি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা শুরু হওয়া কথা রয়েছে। তাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও আজ সোমবার থেকে নমুনা সংগ্রহ করা বলে জানা গেছে।