হযরত শাহছুফী সৈয়দ মইনউদ্দীন আহমদ আল-হাসানী আল-মাইজভান্ডারী (ক.)

1716

ত্বরীকা এ মাইজভান্ডারীর প্রবর্তক ও প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম শাহছুফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (ক.) মাইজভান্ডারী ও এ ত্বরীকার প্রধান রূপকার গাউছুল আজম শাহছুফী সৈয়দ গোলামুর রহমান (ক.) বাবা ভান্ডারীর উত্তর পুরুষগণের মধ্যে যাঁরা প্রধান প্রধান শীর্ষস্থানীয় আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব রয়েছেন তাঁদের মধ্যে শাইখুল ইসলাম আলহাজ্ব হযরত শাহছুফী সৈয়দ মইনউদ্দীন আহমদ আল-হাসানী ওয়াল হোসাইনীর পবিত্র জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরার লক্ষ্যে আমার আজকের লেখার এই প্রয়াস। এই মহান আওলাদ ও নায়েবে রাসূলের শুভজন্ম : ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ, ২৭ মাঘ ১৩৪৪ বঙ্গাব্দ, ৯ জিলহজ ১৩৫৫ হিজরী।
পিতা : সুলতানুল মাশায়েখ গাউছে জামান হযরত আল্লামা শাহ্ছুফী সৈয়দ আবুল বশর আল-হাসানী ওয়াল হোসাইনী আল- মাইজভান্ডারী। (গাউছুল আজম শাহছুফী সৈয়দ গোলামুর রহমান (ক.) বাবা ভান্ডারীর মেজ পুত্র)।
মাতা ঃ মাতৃবংশে তিনি সাইয়্যেদেনা হযরত ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুর বংশধর হযরত সৈয়দ শাহ মাখদুম কাদ্দাছাল্লাহু ছিরবাহুল আজিজ এর (যিনি কুমিরের পীঠে করে আরব দেশ থেকে রাজশাহীতে এসে ইসলাম প্রচার করেন) বংশধর চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার অন্তর্গত জাঁহাপুর নিবাসী প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন মুফতি সৈয়দ গরিবুল্লাহ আল হোসাইনী রহমাতুল্লাহি তা’য়ালা আলাইহির পুত্র সৈয়দ ফয়জুল বারী রহমাতুল্লাহি তা’য়ালা আলাইহির বিদূষী কন্যা শাহজাদী সৈয়দা জাহানারা বেগম রহমাতুল্লাহি তা’য়ালা আলাইহা।
শিক্ষাজীবন : তিনি ইলমে দ্বীন, কুরআন-সুন্নাহ এবং প্রাথমিক শিক্ষা সমাপন করেন তাঁর আব্বাজান সুলতানুল মাশায়েখ হযরত সৈয়দ আবুল বশর আল-হাসানী ওয়াল হোসাইনী আল-মাইজভান্ডারী (ক.) এর নিকট। তিনি চট্টগ্রাম ঐতিহ্যবাহী সরকারী কলেজিয়েট হাইস্কুল থেকে মেট্রিক পাস করেন। চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ সরকারী কমার্স কলেজ থেকে বি.কম পাস করেন। তাঁর আব্বাজানের নিকট থেকে আরবী-ফার্সী-উর্দু এবং উনবিংশ শতাব্দীর বিশ্ববরেণ্য ওলামায়ে কেরাম থেকে কুরআন-সুন্নাহ তথা ইলমে দ্বীন ইসলাম অধ্যয়ন করে প্রভুত জ্ঞান লাভ করেন। কর্মজীবনে তিনি একজন উচ্চ পদস্থ দক্ষ ব্যাংক কর্মকর্তা ছিলেন। পরবর্তীতে পিতার নির্দেশে চাকুরী থেকে পদত্যাগ করে সার্বক্ষণিক ত্বরিকার কাজে আত্মনিয়োগ করেন।
বিবাহ বন্ধন : তিনি ১৯৯৬ ঈসাব্দে চট্টগ্রাম শহরের বিশিষ্ট শিল্পপতি ও রাজনীতিবিদ মরহুম ইসলাম মিয়া টি.কে. এর কন্যা জনাবা ফাতেমা বেগম মুন্নীর সাথে শুভবিবাহে আবদ্ধ হন।
খেলাফত লাভ : ১৯৬২ ঈসাব্দের ৫ এপ্রিল ২২ চৈত্র রাত ২.৩০ মিনিটে তাঁর আব্বাজান শাহসুফি সৈয়দ আবুল বশর আল-হাসানী ওয়াল হোসাইনী (ক.) তাঁকে ডেকে নিয়ে একান্তে বসিয়ে খাসভাবে বায়াত করান এবং দরবারে গাউছুল আ’যম মাইজভাÐারীর সাজ্জাদানশীন হিসেবে খেলাফত প্রদান করে বায়াত করানোর অনুমতি প্রদান করেন।
সম্মাননাপ্রাপ্তি : ১৯৮৮ ঈসাব্দের অক্টোবর মাসে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার মাঠে হাজার হাজার ওলামা ও শীর্ষস্থানীয় পীর-মাশায়েখ সম্মেলনে আল্লামা সৈয়দ তৈয়ব শাহ্ রহমাতুল্লাহি ত’য়ালা আলাইহির পরামর্শে উপস্থিত সকলের প্রত্যক্ষ সম্মতিক্রমে তাঁকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হয়।
১৯৯৬ ঈসাব্দে ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব সুফিজম আমেরিকার সম্মানিত উপদেষ্টা মনোনীত হন।
১৯৯৭ ঈসাব্দে আমেরিকায় অনুষ্ঠিত সুফি সিম্পোজিয়ামে তাঁকে ‘শায়খুল ইসলামে’ উপাধিতে ভুষিত করা হয়।
২০০০ সালের ২৮-৩১ আগস্ট জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বিশ্বশান্তি সম্মেলনে তিনি বক্তব্য রাখেন ও সর্বপ্রথম জাতিসংঘে মিলাদে মোস্তাফা সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লামা কায়েম করেন।
২০০০ ঈসাব্দের ১৭-১৮ সেপ্টেম্বর উজবেকিস্তান সরকার প্রধানের আমন্ত্রণ এবং ইউনেস্কোর তত্ত¡াবধানে উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে হোটেল শেরাটনে অনুষ্ঠিত আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় করনীয় বিষয়ক একটি ওয়ার্কশপ পরিচালনা করেন তিনি। তাসখন্দ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে বিশেষ সংবর্ধনা প্রদান করেন এবং উজবেকিস্তান সরকার বিশেষ ফ্লাইটে করে পবিত্র বোখারী নগরীতে হযরত ইমাম বোখারী রহমাতুল্লাহি ত’য়ালা আলাইহি ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমাতুল্লাহি ত’য়ালা আলাইহির মাজার জিয়ারতে নিয়ে যান।
২০০৬ ঈসাব্দে তিনি তাঁর স্থলাভিষিক্ত আওলাদ হযরত শাহসুফি সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ আল-হাসানী ওয়াল হোসাইনী আল-মাইজভান্ডারী মাদ্দাজিল্লুহুল আলীর সপরিবার নিয়ে হজ্বে আকবর পালন করেন।
২০০৫ ঈসাব্দের ২৭ আগস্ট আফ্রিকার ঘানায় “African International Islamic Mission for world peace for Ghana National Celebrations এর যৌথ আয়োজনে আন্তর্জাতিক ইসলামী সম্মেলনে The Grand ambassador for Islam, Universal Peace, Reconciliation, Spiritual Upliftment and development of the Humanity International Award of the Decade for the year-2005. এর বিশ্বশান্তির দূতের সম্মাননায় ভ‚ষিত হন। ২০০৩ ঈসাব্দের ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বাংলাদেশ সুফি মজলিশ কর্তৃক সংবর্ধনায় বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি তাঁকে ‘শ্রেষ্ঠসুফি’ পদক তুলে দেন।
স্থলাভিষিক্ত নির্বাচন : তিনি ২০০৬ সনে হজব্রত (হজ্বে আকবর) পালনকালে পেয়ারা নবী (দ.) ও হযরত গাউছুল আ’যম সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (ক.) এবং হযরত গাউছুল আযম সৈয়দ গোলামুর রহমান বাবাভান্ডারী (ক.) কেবলা কাবার বাতেনী নির্দেশক্রমে ২০০৭ সনের মহান ২৭ মাঘ তাঁর খোশরোজ শরীফে তাঁরই আওলাদের মধ্যে একমাত্র হযরত শাহসুফি সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ আল-হাসানী ওয়াল হোসাইনী আল-মাইজভান্ডারী মাদ্দাজিল্লহুল আলীকে খেলাফত প্রদান ও তাঁর উত্তরাধিকারী নির্বাচন করে স্থলাভিষিক্ত করে যান।
ওফাত : তিনি ২০১১ সনের ১৭ আগস্ট ওফাতপ্রাপ্ত হয়ে মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে লাভ করেন। প্রতি বছর মহান ২৭ মাঘ খোশরোজ শরীফ ও ১৭ আগস্ট ওরশ শরীফ মাইজভান্ডার দরবার শরীফে এবং ১৭ রমজান চন্দ্রবার্ষিকী ওরশ শরীফ অত্যন্ত জাঁকজমকের সহিত অনুষ্ঠিত হয়।

লেখক : প্রাবন্ধিক