সৌদি আরবের শ্রমবাজার আবারো সংকটে প্রবাসীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন

34

বিশ্বের পবিত্রভূমি সৌদি আরবে বাংলাদেশের শ্রমবাজারে আবারও সংকট দেখা দিয়েছে। দেশটির সরকার অবৈধ অভিবাসী কর্মীদের ধরপাকড় শুরু করেছে। যার ফলে গত সপ্তাহে ২০০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছে দেশটি। এর আগেও সৌদি প্রশাসন বিভিন্ন সময় অবৈধ অবিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালালে ১৬ হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরতে বাধ্য করা হয়েছে। এ সংখ্যা এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত। এ ছাড়া সৌদি আরব থেকে নির্যাতিত নারী গৃহকর্মীরাও দেশে প্রতিনিয়ত ফেরত আসছে। আমরা সৌদি আরবে বাঙালি প্রবাসীদের এমন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারি না। নিরাপদ অভিবাসন নিয়ে কাজ করে বাংলাদেশের এমন একটি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্য দেশের জন্য বিশাল শ্রমবাজার। কিন্তু সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিশ্চিত না করে দালালচক্রের মাধ্যমে সেখানে শ্রমিক পাঠানোর কারণে তারা দেশে ফিরছে। এমন পরিস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য নয়। সৌদি আরবের পত্রিকা সৌদি গেজেটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে সৌদি কর্তৃপক্ষ অবৈধ অভিযান শুরুর সময় দেশটিতে শ্রমবিধি ও বসবাস সংক্রান্ত অন্যান্য বিধি লঙ্ঘনকারীর সংখ্যা ছিল ৩৪ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি।
২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে গত জুন মাস পর্যন্ত সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ অন্তত আট লাখ ৫৮ হাজার ৩৫৫ জন বিদেশিকে সৌদি আরব থেকে বহিষ্কার করে। এরপর থেকে এ অভিযান শুরু হয়। জুনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে পাঁচ লাখ ৪৪ হাজার ৫২১ জনকে। গ্রেপ্তার হওয়া বিদেশিদের মধ্যে ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত নয় লাখ ৪০ হাজার ১০০ জনকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশি শ্রমিক ১৬ হাজার। এমতাবস্থায় লাখো প্রবাসী শ্রমিকের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করা স্বাভাবিক। বিশেষ করে বাংলাদেশি শ্রমিকরা অনেকেই গ্রেপ্তার আতঙ্কে বাসার বাইরে যাচ্ছে না। এবারের অভিযান নিয়ে বেশি ভয় কাজ করছে, আগে শ্রমিকদের ধরলেও কাগজপত্র ঠিক থাকলে ছেড়ে দেয়া হতো। কিন্তু এবারের অভিযানে কেউ ধরা পড়লে আর ছাড় পাচ্ছে না। কাগজপত্র ঠিক থাকলেও দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। সৌদি কর্তৃপক্ষের এমন আচরণের কোনো যৌক্তিকতা নেই। অনেক ক্ষেত্রে মালিকপক্ষ আকামা নবায়ন করেনি বা তা বাতিল করে শ্রমিকদের দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। ফেরত অনেক কর্মীর অভিযোগ তারা কর্মস্থল থেকে বাসস্থানে ফেরার পথে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। সে সময় নিয়োগকর্তাকে ফোন করা হলেও তারা দায়িত্ব নিচ্ছেন না। সরকারের পক্ষ থেকে এখনই ব্যবস্থা নেয়া না হলে সমস্যাটি বড় আকার ধারণ করবে বলে আমরা মনে করি। আইনি সুরক্ষা না থাকায় কম বেতন কিংবা বিনা বেতনে কাজ করা, কাজের সময়ের কোনো পরিসীমা না থাকা, ছুটি না থাকা, শারীরিক-মানসিক নির্যাতনসহ সব ধরনের নিপীড়নের ঝুঁকি থাকে প্রবাসী শ্রমিকদের। কাজেই সুরক্ষার এ দিকগুলো নিশ্চিত করার আগেই তাড়াহুড়ো করে সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি করাটা ঠিক হয়নি।
শ্রমিকদের অধিকার, নিরাপত্তা ও আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব অবশ্যই সরকারের। কিন্তু এখন এর প্রতিফলনও দেখা যাচ্ছে না। আমরা ইতোমধ্যে জানতে পেরেছি, সরকার সৌদি আরবের নিরাপত্তার দায়িত্বে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর একটি টিম পাঠাচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য সুসংবাদ। বর্তমান সরকার ইয়ামেন ইস্যুতে সৌদি আরবের পাশে থাকতে আমরা দেখেছি। বলার অবকাশ রাখেনা সরকার বিভিন্নভাবে সৌদি আরবের সাথে উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। এ সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে সরকারের উচিৎ সৌদি আরবের শ্রমবাজার সুরক্ষায় দেশটির সরকারের সাথে কথা বলা। আমরা এ বিষয়ে সরকারের দায়িত্বশীল ভূমিকা আশা করছি।