সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত (১৯৪৫-২০১৭)

55

সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার বর্তমান পৌরশহরের আনোয়ারপুর নামক গ্রামে সেন পরিবারে ১৯৩৬ সালের ৫ মে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জন্ম হয়। তার বাবার নাম ডা. দেবেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত ও মা শ্রীমতি বালা সেনগুপ্ত। দেবেন্দ্রনাথ ঢাকার বিক্রমপুর থেকে এসে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রীর নাম ড. জয়া সেন। তার পুত্র সৌমেন সেনগুপ্ত ও পুত্রবধূ রাখী মৈত্রী ভৌমিক, সুরঞ্জিতের একমাত্র নাতি শুভজিত সেনগুপ্ত। দিরাই থানা সংলগ্ন দিরাই আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। এরপর রাজানগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, সুনামগঞ্জ কলেজ থেকে এইচএসসি, সিলেট এমসি কলেজ থেকে বিএ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে ইতিহাসে এম এ ও সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে ১৯৭৩ সালে এলএলবি ডিগ্রি পাশ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি হিসেবে পেশা জীবন শুরু করেন। এলএলবি ডিগ্রিধারী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ১৯৭১ সালে ৫নং সেক্টরের সাব-কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা কমিটির অন্যতম সদস্য সুরঞ্জিতের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় বামপন্থী রাজনীতির মধ্য দিয়ে। স্বাধীন দেশের প্রথম সংসদসহ তিনি ৭ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তুখোড় পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত ছিলেন বর্তমান সংসদে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও পরে ঢাকা সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে আইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ল পাসের পর কিছু দিন তিনি আইন পেশায়ও যুক্ত ছিলেন। ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ভিপি প্রার্থী হয়েছিলেন। ১৯৬৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) পিকিং ও মস্কো ধারায় দুই টুকরা হলে মওলানা ভাসানীকে ত্যাগ করে সুরঞ্জিত অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বাধীন অংশে যোগ দেন। ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বাইরে ন্যাপ থেকে জয়ী হয়ে দেশবাসীকে তাক লাগিয়ে দেন তিনি।
বর্ণাঢ্য দীর্ঘ ৫৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে তিনি ৭ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরমধ্যে শুধুমাত্র সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) থেকে ৬ বার ও হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) থেকে ১ বার। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বাংলাদেশের প্রথম খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ছিলেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২৯১৭ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। সূত্র: ইন্টারনেট