সীতাকুন্ডের পাহাড়ি ঝাড়–ফুল দেশ ছাড়িয়ে রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে

188

ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ঘরের নিত্যদিনের অন্যতম সঙ্গী পাহাড়ী ঝাড়–ফুল। ইতোমধ্যে পাহাড়ী ঝাড়–ফুল দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানী হচ্ছে বিদেশে। সীতাকুন্ডের পাহাড়ী ঝাড়–ফুলের কদর দেশজুড়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে পাহাড় থেকে ঝাড়– তৈরি করার জন্য ঝাড়–ফুল কাটা শুরু হয়েছে। গহীন পাহাড় থেকে এ ফুল সংগ্রহ করার আনন্দে মেতে উঠেছে ঝাড়– ফুল সংগ্রহকারীরা। এ ফুল দিয়ে সুন্দর ও সহজভাবে ব্যবহারযোগ্য ঝাড়– তৈরি হয় বলে দেশের বড় বড় শহরে রপ্তানি করা হচ্ছে। ঝাড়–ফুলের সহযোগিতায় পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ সহজে করা যায়। চাহিদা বেশি থাকায় পাহাড় পর্বত ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাণিজ্যিক চাষাবাদ না হলেও পাহাড়ের জঙ্গলে প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয়া এই ফুলের রয়েছে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। স্থানীয় মানুষ তা সংগ্রহ করে বাজারে এনে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীদের কাছে। ব্যবসায়ীরাও ঝাড়ু ফুলের ব্যবসায় লাভের মুখ দেখছেন। সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে এ পেশায় ব্যবসায়ীর সংখ্যা। উপজেলার সীতাকুন্ড পৌরসদর, বাঁশবাড়িয়া, বাড়বকুন্ড, মগপুকুর, সুলতানা মন্দির, ছোটকুমিরা, বড়কুমিরা, মাঝার গেইট, জোড়আমতল, ফকিরহাট, বিশ্ববিদ্যালয় গেইট, বারআউলিয়া, শুকলাল হাট, সিরাজভুইয়ার রাস্তার মাথা, আনোয়ারা গেইটসহ বিভিন্ন খোলাস্থানে পাহাড়ী বাহারী ঝাড়– ফুল শুকাতে দেখা যায়। একাজে কর্মরত গরীব খেটে খাওয়া মানুষ গুলোর মহিলা, পুরুষ সবাই ফুল শুকাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। শীতে রোদের আমেজ কম থাকায় এ ফুল শুকাতে সময় একটু বেশি নিলেও তাদের মুখে হাসির কমতি নেই। এ ঝাড়– ফুল সংগ্রহে ৩ স্তরে লোক কাজ করে। পুরুষরা খুব ভোরে উঠে দা নিয়ে গহীন পাহাড়ের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। তারা প্রত্যেকে ঘন্টা খানেক এফুল সংগ্রহ করে। এক হাজার ফুল এক সংগে আঁটি বেধে নিয়ে আসে লোকালয়ে। আনীত ফুল গুলোকে পরিবারের মহিলারা বিভিন্ন খোলাস্থানে রোদে শুকিয়ে ব্যবহারের উপযোগী করে। পরে ১০০টি ফুল নিয়ে আবার আঁটি করে বিক্রির উদ্দেশ্যে বাজারে নিয়ে যায়। ১০০টি ফুল বিশিষ্ট আঁটি ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা দামে বিক্রি হয়। অনেক সময় পাহাড় থেকে ঝাড়– ফুল আনয়নকারী লোকগুলো নিজেরা না শুকিয়ে বাজারে পাইকারদের এজেন্টদের কাছে কাঁচা অবস্থায় বিক্রি করে দেয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, কুমিল্লা, ফেনী, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন বড় বড় শহর থেকে ঝাড়–ফুল পাইকাররা এসে তা কিনে নিয়ে যায়। পরে তারা বিভিন্ন প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থ দিয়ে পেঁছিয়ে হাতল তৈরি করে এর উপর কারুকাজ করে শহরে বসবাসরত পরিবারের কাছে খুচরা ঝাড়– হিসাবে বিক্রি করে। এছাড়া দালানকোটায় অবস্থিত বাসা-বাড়িতে, শহরের বিল্ডিং আছে এমন অফিস-আদালতে ঘরকে ঝাড়–দিয়ে পরিস্কার করার জন্য ঝাড়– হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এ ঝাড়–গুলো দেখতে চমৎকার এবং ব্যবহারে দ্রæত ময়লা পরিস্কার ও বহনে সুবিধা বেশি বলে এটি শহরের প্রত্যেক বাসায় না থাকলে নয়। এছাড়া এ ঝাড়–ফুলের তৈরি ঝাড়– নষ্ট হয় কম। তাই এটি সাশ্রয়ী। পাহাড়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গহীন পাহাড়ে একমাত্র সৃষ্টিকর্তার অবদানে কাঁশফুলের মত গাছে এসব ফুল গাছ দেখা যায় পাহাড়ের টিলা থেকে টিলায়। পৌষ, মাঘও ফাল্গুন মাসে এ গাছের ফুল আসে যাকে ঝাড়– ফুল বলা হয়। বিভিন্ন গরীব লোক পাহাড়ে গিয়ে এ ফুল সংগ্রহ করে। এতে বন বিভাগ থেকে কোন বাঁধা দেওয়া হয়না। কাঁচা অবস্থায় ভারী বলে দিনে একভার (২আটি) কিংবা ২ ভাঁরের বেশি আনা যায়না। প্রতি ভারের আনয়ন খরচ পড়ে ৭শ থেকে ৮শ টাকা। বিশেষত মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ১৮-২০টি ঝাড়ু ফুলের কাঠি দিয়ে একটি আটি বাঁধেন। আর এক একটি আটি বিক্রি হয় ৭-৮ টাকায়। ব্যবসায়ীরা এগুলো কিনে প্রথমে শুকিয়ে থাকেন। পরে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এসে প্রতি আটি ঝাড়ু ফুল ১০-১১ টাকা দরে কিনে জীপ বা ট্রাকের মাধ্যমে সমতলের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যান। ঝাড়– ফুলের ব্যবসাটি প্রসার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিত্তবান ব্যবসায়ীরা এগিয়ে এলে এটি শিল্প আকারে রূপ নিতে পারে।