দেশের অর্থনীতির প্রধান প্রাণপ্রবাহ, চট্টগ্রামের ইতিহাসের অন্যতম উৎস কর্ণফুলীর নদীর কিছু অংশ এখন দৃশ্যমান। বাকি অংশও শিগ্গরই দৃশ্যমান হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছে। এখান থেকে সকল প্রকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ চলছে। উচ্ছেদে উচ্ছসিত নগরবাসীর মনে ভয় ছিল এরকম হাজারো উচ্ছেদের অতীত ইতিহাস খুব একটা সুখকর নয়। কোটি টাকা খরচ করে উচ্ছেদ করার পর তা যথাযথ সংরক্ষণ না করায় আবারও রাবনের দখলেই চলে যায়। এবার এর ব্যত্যয় ঘটবে বলে মনে হয়। সরকারের দুই বাহাদুর মন্ত্রী স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী এবং ভূমিমন্ত্রী উভয়ই চট্টগ্রামে এসে কর্ণফুলীকে নিয়ে আশার বাণী শুনিয়েছেন। তারা কর্ণফুলীর তীর থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান আবারও শুরু করা হবে বলে আশ্বাসের পাশাপাশি সরকার কর্তৃক কর্ণফুলীর তীর ঘিরে মহাপরিকল্পনা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম উচ্ছেদকৃত স্থান পরিদর্শনে গিয়ে গণমাধ্যমকে বলেছেন, উচ্ছেদ অভিযান শেষ হওয়ার পরই শুরু হবে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ। তিনি আরো বলেছেন, আগামী ১৪ মার্চ উচ্চ পর্যায়ের কমিটিতে এ মহাপরিকল্পনা অনুমোদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গতকাল দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে পরিবেশ অধিদপ্তরের সূত্রে উল্লেখ করা হয়, কর্ণফুলী তীরকে ঘিরে প্রায় দেড় বছর আগেই মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে সরকার। বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জানিয়ে একটি মাস্টাপ্ল্যান তৈরির নির্দেশনাও দেয়া হয় উচ্চ পর্যায় থেকে। তারই প্রেক্ষিতে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়। উচ্চ পর্যায়ের এ কমিটি কয়েক বার বৈঠক করে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে। বিশেষ করে কর্ণফুলী নদীকে দূষণমুক্ত করা এবং তীরকে রক্ষা করে কী করা যায়, সেটাই চিন্তা করা হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর এ মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।
দিনশেষে বিকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে আয়োজিত ‘নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন ও চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ড’ স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ‘চট্টগ্রামকে অবহেলিত রেখে বাংলাদেশের উন্নয়ন কখনো সম্ভব নয়’ বলে উল্লেখ করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের জন্য ভাবার পাশাপাশি চট্টগ্রামের জন্যও চিন্তা করেন। চট্টগ্রামকে দেশের দ্বিতীয় রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলতে যা যা করণীয় তা-ই করা হবে। মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন ও শহরকে দৃষ্টিনন্দন হিসেবে গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। স¤প্রতি চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে নতুন আরেকটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এটি বাস্তবায়নে হলে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা সম্পূর্ণভাবে দূর হবে।
তাজুল ইসলাম তাঁর মন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম চট্টগ্রাম সফরের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছেন, বঙ্গবন্ধু এই চট্টগ্রাম নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন। তারই কন্যা আজকের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাও এই চট্টগ্রাম নিয়ে আশাবাদী। চট্টগ্রামকে তিনি আলাদা চোখে দেখেন। যতবার তিনি চট্টগ্রামে এসেছেন ততবার উন্নয়নের বার্তা নিয়ে এসেছেন। এ কারণে চট্টগ্রামের প্রতিটি প্রকল্প তিনি পাস করিয়ে দেন। চট্টগ্রামের একটি উন্নয়ন প্রকল্পও তিনি বাদ দেননি। গত একনেকের সভায়ও চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিয়ে হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প তিনি অনুমোদন দিয়েছেন। দেশের উন্নয়নে চট্টগ্রাম এখন মাইলফলক। সঠিকভাবে অবকাঠামো উন্নয়ন হলে চট্টগ্রাম হবে সত্যিকার অর্থে আধুনিক নগরী। দেশের বৃহত্তম বন্দর চট্টগ্রামে। এ কারণে চট্টগ্রামকে বলা হয় বন্দরনগরী। বাংলাদেশের অর্থনীতি পরিচালিত হয় এই বন্দর দিয়ে। এই বন্দরকে বাঁচাতে হলে চট্টগ্রামে উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করলে চট্টগ্রাম দ্রæত এগিয়ে যাবে। দেশেরও উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। সমস্যা যেখানে সমাধানও সেখানে। আমরা মন্ত্রী মহোদয়ের চট্টগ্রামে আগমনকে স্বাগত জানাই। একইসাথে তিনি যেসব স্বপ্ন ও আশার বাণী চট্টগ্রামবাসীকে শুনিয়েছেন তাতে আমরা আশ্বস্ত হই চট্টগ্রাম নগরবাসী আর জলাবদ্ধতার নাখাল পাবে না। চট্টগ্রাম রূপান্তর হবে সত্যিকার বণিজ্যিক রাজধানী।