সংগ্রহকৃত ৮ হাজার লিটার তেল কিনে নিল পদ্মা

42

বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যাওয়ার পথে চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রেলওয়ের হাটহাজারী পৌরসভার পশ্চিম দেওয়ান নগর এলাকায় লাইনচ্যুত তেলবাহী ৩টি ওয়াগন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন রেল বিভাগের পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে পর্যায়ক্রমে তদন্ত দলের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক করতে দ্রুত কাজ করছে বলে জানিয়েছেন রেল কর্মকর্তারা। রেলওয়ের ব্যবস্থাপক সৈয়দ ফারুক আহম্মদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত দলের সদস্যদের নির্দেশনা প্রদান করেন। সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ঘটনাস্থল পরির্দশন করেন রেল মন্ত্রণালয়ের একজন উপ-সচিব, রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মো. বোরহান উদ্দিন, রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন, বিভাগীয় কর্মকর্তা শেখ নাইমুল হক, যন্ত্র প্রকৌশলী রাজীব দেব নাথ, সহকারী যন্ত্র প্রকৌশলী ফয়েজ আহম্মদ খান, বিভাগীয় কর্মকর্তা আনসার আলীসহ রেলওয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা।
এব্যাপারে রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মো. বোরহান উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ফার্নেস তেলবাহী ওয়াগন লাইনচ্যুতের ঘটনার পর পর রেল মন্ত্রণালয়সহ আমাদের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন। এ ঘটনার পর পর আমরা চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক করছি এবং দ্রুত রেল লাইন মেরামতের কাজ চলছে। আশা করি কয়েক দিনের মধ্যে পুরো বিষয়টি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার পর প্রায় অনেক ফার্নেস তেল ছড়ায় (খাল) পড়ে যায়। বাকি যে তেলগুলো ওয়াগনে ছিলো সেগুলো মঙ্গলবার সকাল থেকে সংগ্রহ করে ওয়াগনগুলো খালি করা হয়েছে। এখন আমাদের (রেল) ক্রেন আসলে আমরা ওয়াগন ৩টি উদ্ধার করতে পারবো।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আনা ফার্নেস ওয়েল ভর্তি ওয়াগনগুলো থেকে ছড়িয়ে যাওয়া তেল খালের (ছড়া) পানির সাথে মিশে চানখালী খাল হয়ে কার্প জাতীয় (রুই, কাতাল, মৃগেল ও কালিবাইশ) মা-মাছের নিষিক্ত ডিম ছাড়ার প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা কিছুটা কেটেছে। এসব ক্ষতিকর তেল যাতে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য উপজেলা প্রশাসন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে জানান হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমীন। তিনি আরও জানান, সোমবার বিকালে লাইনচ্যুত হয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়া তেলবাহী ৩টি ওয়াগনের মধ্যে একটি পার্শ¦বর্তী খালে (মরা ছড়া) পড়ে এর তেলগুলো ছড়িয়ে পড়ে। আমি ও আমার সহকর্মীরা ক্ষতিকর এ তেল সরানোর জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করি। স্থানীয় জনসাধারণকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতে ওই দিন সন্ধ্যায় মাইকিং করিয়েছি। ছড়া থেকে সংগৃহীত তেলের বিক্রয়লব্ধ অর্থ সংগ্রহকারীদের প্রদান করা হবে বলেও প্রচার করা হয়। প্রচারনায় সাড়া দিয়ে সোমবার থেকে অসংখ্য লোক তেল সংগ্রহ করতে খালে নেমে পড়েন। গত সোমবার থেকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত খালের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ১৫ হাজার লিটার ফার্নেস অয়েল সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংগৃহীত এসব ফার্নেস অয়েল পদ্মা অয়েল কোম্পানীর কাছে বিক্রির করার প্রস্তাবনা প্রদান করা হয়।
এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে পদ্মা অয়েল কোম্পানীর ব্যবস্থাপক (অপারেশন) আবু সালেহ ইকবাল কোম্পানীর কর্মকর্তাদের নিয়ে গাড়ি ও তেল পরিবহনের সরঞ্জাম নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় জনসাধারণ কর্তৃক সংগৃহীত প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েল ২০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। মরা ছড়া হতে সংগৃহীত প্রায় ৮ হাজার ৯৫ লিটার ফার্নেস ওয়েল পদ্মা অয়েল কোম্পানি কিনে নিয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ এপ্রিল বিকালে হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ফার্নেস অয়েলবাহী ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়ে তিনটি কালভার্ট ভেঙে ছড়ায় (খাল) পড়ে প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার লিটার তেল ছড়াসহ আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এগার মাইলস্থ আবুল কালামের মাদ্রাসার দক্ষিণ পাশে ঘটা এ দুর্ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া এসব ফার্নেস অয়েল খালে পড়ে হালদা নদীর দিকে এগুচ্ছিল।