শ্রীলঙ্কায় মসজিদে হামলার পর সংঘাতে নিহত ১, কারফিউ

39

শ্রীলঙ্কার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশে দ্বিতীয় দিনের মতো মসজিদ ও মুসলিমদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে, দাঙ্গায় নিহত হয়েছেন একজন। সোমবার এসব ঘটনার সময় পুলিশ উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে লক্ষ্য করে কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে, পরে কর্তৃপক্ষ দেশজুড়ে রাতব্যাপী কারফিউ জারি করে; খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের। খ্রিস্টানদের ইস্টার পরবের দিন জঙ্গিদের আত্মঘাতী বোমা হামলার পর থেকে দ্বীপদেশটিতে এটাই সবচেয়ে বড় সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা। কয়েকটি হোটেল ও গির্জা লক্ষ্য করে চালানো ২১ এপ্রিলের ওই হামলায় ২৫৩ জন নিহত হয়। এরপর থেকেই দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল।
উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশের মারাউয়িলি হাসপাতাল থেকে এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ছুরিকাহত ৪২ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর তার মৃত্যু হয়। স্থানীয় এক বাসিন্দা যিনি ছুরিকাহত ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিতে সাহায্য করেছেন, নিহতের নাম মোহাম্মদ আমীর মোহাম্মদ সালি বলে জানিয়েছেন।
উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশের মুসলিম অধ্যুষিত অংশগুলোর বাসিন্দারা জানিয়েছেন, উচ্ছৃঙ্খল জনতা দ্বিতীয় দিনের মতো মসজিদগুলোতে হামলা চালিয়েছে, তাদের দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তছনছ করেছে। প্রতিহিংসার আশঙ্কায় পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে কোট্টামপিটিয়া এলাকার এক বাসিন্দা টেলিফোনে রয়টার্সকে বলেছেন, “কয়েকশ দাঙ্গাকারী ছিল, পুলিশ ও সেনাবাহিনী শুধু দেখছিল। তারা আমাদের মসজিদগুলো পুড়িয়ে দিয়েছে এবং মুসলিমদের মালিকানাধীন বহু দোকান গুড়িয়ে দিয়েছে। “আমরা বাড়ি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ আমাদের ভিতরে অবস্থান করতে বলে।” পুলিশ দেশজুড়ে রাত ৯টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করেছে বলে মুখপাত্র রুয়ান গুনাসেকেরা জানিয়েছেন।
এক বিবৃতিতে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের কারণে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর তদন্তে বিঘœ ঘটছে। “সা¤প্রদায়িকতা ছড়িয়ে পড়লে এবং শান্তি বিঘিœত হলে দেশ অস্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে। সহিংসতা সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলোর উদ্দেশ্য জনজীবনের সংহতি নষ্ট করা ও দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা,” বিবৃতিতে সতর্ক করে বলেছেন তিনি।
শান্তি বিঘœকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে ক্ষমতা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিক্রমাসিংহে। দেশটির অন্য আরেকটি এলাকায় ফেইসবুকে সৃষ্ট বিরোধকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো ম্যাসেজিং অ্যাপগুলোর ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। সিংহলী বৌদ্ধ প্রধান শ্রীলঙ্কার ২ কোটি ২০ লাখ লোকের মধ্যে মুসলিমদের সংখ্যা প্রায় ১০ শতাংশ। রয়টার্সের এক প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশের মাদুল্লায় কয়েক ডজন সিংহলী তরুণকে লাঠিসোটা ও রড হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন।

মুসলিমবিরোধী সহিংসতা দমনে শ্রীলঙ্কায় সেনা টহল

শ্রীলঙ্কায় মুসলিমবিরোধী সহিংসতায় আক্রান্ত এলাকায় টহল শুরু করেছে দেশটির সেনারা। মঙ্গলবার সামরিক যান নিয়ে সেনারা টহল শুরু করে বলে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের মতে, সবচেয়ে বেশি মুসলিমবিরোধী সহিংসতা হয়েছে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে। তাদের দাবি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। রবিবার একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র শুরু বিতর্কের জের ধরে চিলাউ শহরে মুসলিমবিরোধী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এক দল খ্রিস্টান যুবকরা স্থানীয় তিনটি মসজিদ ও মুসলিম মালিকানাধীন দোকানে পাথর নিক্ষেপ ও ভাঙচুর করে। তাদের মারধরের শিকার হন এক মুসলিম ব্যক্তি। এই ঘটনার পর প্রথমে শহরটিতে কারফিউ জারি করা হয়।

তবে সহিংসতা দ্রæতই একের পর এক শহরে ছড়িয়ে পড়ে। পরে সারা দেশেই কারফিউ জারি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সোমবার ট্যাক্সিযোগে এসে একদল ব্যক্তি মুসলিম মালিকানাধীন দোকানে ভাঙচুর ও পাথর নিক্ষেপ শুরু করে। দ্রæতই হামলাকারীর সংখ্যা ২০০ এবং পরে হাজার ছাড়িয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা প্রধান মসজিদসহ ১৭টি মুসলিম মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ৫০টি বাড়িতে হামলা চালায়। কারফিউ জারি থাকার মধ্যেই সোমবার রাতে ৪৫ বছর বয়সী ওই মুসলিম কাঠমিস্ত্রীকে তার নিজের কারখানায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
তিন সপ্তাহ আগে ইস্টার সানডে’র দিনে দেশটির ৩টি গির্জা ও কয়েকটি হোটেলে সিরিজ বোমা হামলায় ২৫৩ জন নিহত হয়েছিল। হামলার দায় স্বীকার করে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস বিবৃতি দেওয়ার পর থেকেই দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে হয়রানি ও হুমকির শিকার হয়ে আসছে মুসলিম স¤প্রদায়। সেই ধারাবাহিকতায় রবিবার ফেসবুকে শুরু হওয়া বিরোধের জেরে রাজধানী কলম্বোর উত্তরের কয়েকটি জেলায় মুসলিমবিরোধী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে জানান, মুসলিমবিরোধী সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে নিরাপত্তাবাহিনীকে ক্ষমতা দিয়েছেন তিনি।