শেখ রাসেল জাতির পিতার কনিষ্ঠ পুত্র

108

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল। ১৮ অক্টোবর ১৯৬৪ খ্রি.তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আজ ১৮ অক্টোবর ২০১৯ সাল শেখ রাসেলের ৫৫ বছর পূর্ণ হয়েছে, দেশের মানুষ আজ শেখ রাসেলের ৫৬ তম জন্মদিন শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও গভীর আবেগ নিয়ে উদ্যাপন করবেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের অন্যদের সঙ্গে শিশু রাসেলকে প্রাণ দিতে হয়েছে ঘাতকের বুলেটের আঘাতে। রাসেলের চলে যাওয়া অত্যন্ত বেদনাদায়ক এবং শোকাবহ। শিশু রাসেলের নির্মম ও নির্দয় হত্যাকাÐ মানবিক, নৈতিক ও আইনগত দিক থেকে অমানবিক গর্হিত, বেআইনী ও কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যে কোনো মূল্যবোধের বিচারে আমরা একে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারি না। মানবতার নবী রহমাতুল্লিল আলামীন হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘আল-আতফালু দা’আমিসুল জান্নাতÑশিশুরা বেহেশতের প্রজাপতি।’
আল্লাহর বেহেশতের এই প্রজাপতি শেখ রাসেল এত নির্মমতা ও এত পাশবিকতার শিকার হয়ে এত তাড়াতাড়ি আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন তা কল্পনা করতেও আমাদের মনকাঁদে। ঘাতকের নির্মম বুলেটের নির্মম আঘাত শুধু শিশু রাসেলের নয়Ñদেশের কোটি কোটি শিশুর হৃদয়কে ঝাঁজরা করে দিয়েছে। মানবিক, নৈতিক, ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক সনদ, ওআইসি’র শিশু সনদ, জাতিসংঘের শিশু সনদ এবং পবিত্র ইসলামের শিশু অধিকার-এর কোনোটিই এই নির্মম হত্যাকান্ড সমর্থন করে না। পবিত্র কুরআনুল করীমে শিশুদের সম্পর্কে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে “তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ” (১৭:৩১)
আল্লাহর রাসুল আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) বলেন, “শিশুরা প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ, নিস্পাপ, নিরপরাধ’। তিনি শিশুদের হত্যা করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন, এমনকি যুদ্ধক্ষেত্রেও। শেখ রাসেলের হত্যাকান্ড ইতিহাসের নিষ্ঠুরতার এক জঘন্য দৃষ্টান্ত। ইসলামের শিশু অধিকার লংঘনের ক্ষেত্রে এটি একটি কালো অধ্যায়।


মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ কায়সার এর ‘ছোট্ট শিশু রাসেল’ কবিতাটি এখানে তুলে ধরা হলো :
আমাকে তোমরা কেন বাধা দাও
গুলির শব্দ কেন
শেখ মুজিবের ছোটো ছেলে আমি
আমাকে তোমরা চেন?
বাবাকে ডাকবো কোথায় বাবা যে
তার কাছে নিয়ে চলো
এতো রাতে কেন বাড়িতে তোমরা
বলো না বলো না বলো।…
ঘাতকের দল বুলেট ছুঁড়েছে
রাসেল সোনার বুকে
কীভাবে পারলে খুঁচিয়ে মারতে
ছোট্ট এই শিশুকে।
গণভবন ও বঙ্গভবন তো নয়ই। বঙ্গবন্ধুর পরিবার বরাবর বাস করেছে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে। দুই সদস্য শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাড়া বঙ্গবন্ধরু গোটা পরিবারও ৩২ নম্বরের শহীদ হয়েছেন। ৩২ নম্বর ছিল দশ বছরের শিশু রাসেলের প্রথম ও শেষ বাড়ী। ৩২ নম্বর বাড়ীর নিচে পূর্বের বারান্দায় কখনো হয়তো ৩২ নম্বরের দেয়ালের পাশ ঘেঁষে যে ক’টি গাছ আকাশ পানে মুখ তুলে দাঁড়িয়ে, সেই সব গাছের নিচের দাঁড়িয়ে থাকতেন রাসেল। সাধারণ জামা-কাপড় পরা এক শিশু রাসেল। ষড়যন্ত্র ও পৈশাচিক এক হত্যাকান্ডের শিকার হয়ে যাওয়া শিশুটি জানতেই পারল না জীবনটা কী ? শিশু রাসেলের পিতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। তিনি জাতির পিতা। তিনি বাঙালির ন্যায্য স্বার্থ ও অধিকার নিয়ে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে লিপ্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু’র জীবনের তিন ভাগের এক ভাগ কাটিয়েছেন কারাগারে। বঙ্গবন্ধু বাড়ি থেকে বেরোতেন বেশির ভাগ সময়, ভোর বেলায়। রাতে বাসায় ফিরতেন সবাই যখন ঘুমে। রাসেলের অন্য ভাই-বোনেরা কিছুটা বাবার সান্নিধ্য পেলেও ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারির আগে শেখ রাসেল শুধু অ্যালবামে, পত্র-পত্রিকায় কিংবা দেয়ালে আঁটা ছবিতে বাবাকে দেখেছে। ৭ বছর বয়স পর্যন্ত রাসেল শুধু জেনেছে তার বাবা গোটা বাঙালি জাতির নেতা। সিংহ পুরুষ। অসম সাহসী এক লড়াকু রাজনীতিবিদ। ৭ বছরের আগে বাবার কোল, বাবার আদর খুব কমই পেয়েছে রাসেল। পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে সোহরাওয়ার্দ্দী উদ্যানের জনসভা শেষ বঙ্গবন্ধু যখন ঘরে ফিরেন তখন প্রথমেই কোলে তুলে নেন তার সাড়ে ৬ বছরের শিশু শেখ রাসেলকে। শিশু রাসেল বাবার কোলে ফিরে নিরাপদ ও নির্ভরতার আশ্রয় পেল। মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ রাসেলকে মাঝে মাঝে সময় দিতেন, সস্নেহে কোলে তুলে নিতেন, আদর করতেন, কপালে চুমু খেতেন। মৃত্যুর কিছুদিন আগে রাসেলের বয়স হয়েছিল ১০ বছর। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকান্ডের দৃশ্যপটের কিছুটা বাইরে ছিল রাসেল। দশ বছরের সরল, নিস্পাপ ছেলেটি। বাড়িতে ভয়াবহ কিছু একটা ঘটেছে, এটা সে বুঝতে পেরেছিল ঠিকই। তবে মা-বাবা সহ সবাইকে খুনিরা মেরে ফেলেছে, এটা হয়তা সে ভারতেও পারেনি। ভয়ে ধক ধক করে কাঁপছিল রাসেল। খুনিরা খুঁজছিল তাকে, তাদের কেউ হঠাৎ সোল্লাসে চেঁচিয়ে বলে, পেয়েছি। পেয়ে গেছি। হায় রাসেল! মায়ের কাছে যাবে বলে খুনিদের কাকুতি-মিনতি করেছিল। ‘চলো, তোমাকে মায়ের কাছে নিয়ে যাচ্ছি’Ñআশ্বাস দেয় এক খুনি, ভেতরের খুশি চেপে রেখে মায়ের কাছাকাছি নিয়ে খুনিরা তাদের হাতের আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ঝাঁঝরা করে দেয় ছোট একটা অবুঝ শিশু শেখ রাসেলের শরীর। নিস্তব্ধ কবরস্থান। যেখানে চিরনিদ্রায় মহানায়কের শিশুপুত্র শেখ রাসেল মায়ের কাছাকাছি।
রাসেলের নিস্পাপ, নির্মল মায়াভরা ভয়ার্ত মুখটি দেখলে বাংলার শিশুদের মন আজো কাঁদে।
আসুন, শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা সবাই দায়িত্বশীল হই। শিশুদের জন্য গড়ে তুলি একটি নিরাপদ বিশ্ব। তাহলেই শেখ রাসেলের রক্তের ঋণ আমরা শোধ করতে পারবো।
লেখক : প্রাবন্ধিক