শিল্পকলা একাডেমিতে নবান্ন উৎসব উদযাপন

141

‘এসো মিলি সবে নবান্নের উৎসবে’ শ্লোগানকে সামনে রেখে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে নবান্ন উৎসব আয়োজন করা হয়। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এ উৎসব উদযাপিত হয়। উৎসবের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, আমাদের আদিমতম উৎসবগুলোর একটি ‘নবান্ন উৎসব’। কৃষিভিত্তিক সভ্যতায় গড়ে ওঠা শস্যভিত্তিক এই লোকজ উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয় বাংলার গ্রাম-গঞ্জে কৃষকের ঘরে ঘরে। নবান্ন শব্দটি শুনলেই পিঠা, পায়েস, মুড়ি-মুড়কি আর নতুন চালের ভাতের সুগন্ধে ভরে ওঠে মনটা। অন্ন বা আহার নিয়ে এই উৎসবের জন্ম। কার্তিক মাসের শুরু থেকেই দেশের বিস্তীর্ণ জনপদে ধান কাটা শুরু হয়ে যায়। অগ্রহায়ণে কৃষকের গোলা ভরে ওঠে ধান-চালে। যার ফলে কৃষি নির্ভর বাংলায় পিঠা-পুলি, চিড়া-মুড়ি নিয়ে উৎসব করার সময় এটাই। নতুন প্রজন্মের সন্তানদেরকে বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য সম্পর্কে জানাতে হবে।
প্রধান আলোচক ড. হরিশংকর জলদাস বলেন, অগ্রহায়ণের শুরুতেই দুই বাংলাতে চলে উৎসবের নানা আয়োজন। নতুন ধান কাটা আর সেই ধানের প্রথম অন্ন খাওয়াকে কেন্দ্র করে পালিত হয় নবান্ন উৎসব। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। এ যেন সত্যি হৃদয়ের বন্ধনকে আরও গাঢ় করার উৎসব। হেমন্ত এলেই দিগন্তজোড়া প্রকৃতি ছেয়ে যায় হলুদ-সবুজ রঙে। এই শোভা দেখে কৃষকের মন আনন্দে ভাসতে থাকে। কারণ, কৃষকের ঘর ভরে উঠবে গোলা ভরা ধানে। বছর ঘুরে আবার এসেছে অগ্রহায়ণ। বাঙালির প্রধান কৃষিজ ফল কাটার ক্ষণ। এ দিনকে বলা হয় নবান্ন। নতুন ধানের চাল দিয়ে তৈরি করা হয় পিঠা, পায়েস, ক্ষীরসহ হরেক রকমের খাবার বাড়ির আঙিনা নতুন ধানের মো মো গন্ধে ভরে ওঠে। ধান ভাঙার গান ভেসে বেড়ায় বাতাসে, ঢেঁকির তালে মুখর হয় বাড়ির আঙিনা। অবশ্য যান্ত্রিকতার ছোঁয়ায় এখন আর ঢেঁকির তালে মুখরিত হয় না। তার পরও নতুন চালের ভাত নানা ব্যঞ্জনে মুখে দেওয়া হয় আনন্দঘন পরিবেশে। তৈরি হবে নতুন চালের পিঠা, ক্ষীর-পায়েস। কৃষক-কৃষাণীরা নবান্নের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। হাজার বছরের পুরোনো এই উৎসব সবচেয়ে অসা¤প্রদায়িক, সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী এবং সবচেয়ে প্রাচীনতম মাটির সঙ্গে চিরবন্ধনযুক্ত।
জেলা শিল্পকলা একাডেমি কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর কবিরের সভাপতিত্বে ও কবি ফারুক তাহেরের সঞ্চালনায় নবান্ন উৎসবের আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন শিল্পকলা একাডেমির জেলা কালচারাল অফিসার মোসলেম উদ্দিন সিকদার লিটন ও একাডেমির সদস্য সাংবাদিক রনজিত কুমার শীল। আলোচনা সভা শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমি ও অন্যান্য সংগঠনের শিল্পীরা সমবেত সঙ্গীত, দলীয় নৃত্য, একক সঙ্গীত, একক আবৃত্তি ও পুঁথিপাঠ পরিবেশন করেন। বিজ্ঞপ্তি