শরতের তাপদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন

39

আশ্বিনের শুরুতেই তাপমাত্রার পারদ চড়ছে। কয়েকটি অঞ্চলের ওপর দিয়ে বইছে তাপপ্রবাহ। তার সাথে বাতাসে জলীয় বাষ্পের অধিক পরিমাণে উপস্থিতি উষ্ণতার অনুভূতিকে সহনীয় মাত্রার সীমানা ছাড়িয়ে দিচ্ছে। আপেক্ষিক আর্দ্রতার আধিক্যজনিত তাপমাত্রার পারদ ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে উঠানামার মধ্যেই ভ্যাপসা গরমে অস্থির হয়ে উঠছে জনজীবন। শরীর বেয়ে নামছে ঘামের ধারা। প্রকৃতিতে বিরাজমান আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতিতে খানিকটা স্বস্তির খবরই জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সংস্থার কর্মকর্তারা আগামী চব্বিশ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি এবং দু’দিনের মধ্যে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর প্রভাবে দু’দিনের মধ্যে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে। তার মানে আগামীকাল সোমবার থেকে সারাদেশে বৃষ্টিপাত বাড়বে।
অপরদিকে, আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণকারী বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার পূর্বাভাস বলছে, দক্ষিণ চীন সাগরে অতিসম্প্রতি সৃষ্ট টাইফুন ‘নৌল’ ভিয়েতনাম উপকূলে আঘাত হানার পর বর্তমানে থাইল্যান্ডের ওপর স্থল লঘুচাপ আকারে অবস্থান করছে। আজ রবিবার সকালের মধ্যে সেটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে এসে লঘুচাপ বা সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হতে পারে। পরবর্তীতে এটি উপযুক্ত পরিবেশ পেলে সর্বোচ্চ নিম্নচাপেও রূপ নিতে পারে। আসন্ন সুস্পষ্ট লঘুচাপ কিংবা নিম্নচাপের প্রভাবে আজ রবিবার থেকে পরবর্তী দুই-তিনদিন সমুদ্র উত্তাল থাকাসহ উপকূলে ঝড়ো বাতাসসহ বৃষ্টিপাত বাড়তে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের ওয়েবসাইটে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী চব্বিশ ঘণ্টার জন্য প্রচারিত আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থা বা দৃশ্যপটে বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে তা দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। আগামী চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হতে পারে। আর আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি-বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসাথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। এছাড়া, দেশর অন্যত্র আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগসহ ঢাকা, রাঙামাটি, নোয়াখালী, ফেনী, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, মোংলা, যশোর, বরিশাল ও ভোলা অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তা কিছু কিছু এলাকায় অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। তাপপ্রবাহের মধ্যে আবার দেশের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাতেরও দেখা মিলেছে। এর মধ্যে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ ৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বরিশাল বিভাগের চুয়াডাঙ্গায়। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে শুধুমাত্র কক্সবাজারে সামান্য বৃষ্টির দেখা মিলেছে।
এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের সেপ্টেম্বর মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানিয়েছিল, এ মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি মৌসুমি বৃষ্টিপাতজনিত কারণে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু স্থানে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি বর্ষাকালীন লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে একটি বর্ষাকালীন নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। মৌসুমি বৃষ্টিপাতজনিত কারণে সেপ্টেম্বর মাসে দেশের উত্তর এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কতিপয় স্থানে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।