প্যারিসের বিখ্যাত অ্যাভেনিউ শঁজেলিজেতে ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনকারীদের আর কর্মসূচি পালন করতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ফ্রান্সের পুলিশ কর্তৃপক্ষ। গত সপ্তাহের কর্মসূচিতে এই অ্যাভেনিউটিতে অবস্থিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে শনিবার পুলিশের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি লিখেছে, জনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ফ্রান্সের সরকার সন্ত্রাস দমনে গঠিত ‘সেন্টিনেল পেট্রোল ফোর্সকে’ মাঠে নামাতে যাচ্ছে। আর এ নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনা।
ফ্রান্সের মোটরযান আইন অনুযায়ী, বেশি আলো প্রতিফলিত করে এমন এক ধরনের বিশেষ নিরাপত্তামূলক জ্যাকেট গাড়িতে রাখতে হয় চালকদের। এর রঙ সবুজাভ হলুদ (ইয়েলো)। আন্দোলনকারীরা এই জ্যাকেট (ভেস্ট) পরে বিক্ষোভের সূচনা করেছিল বলে আন্দোলনটি পরিচিতি পায় ‘ইয়েলো ভেস্ট’ নামে। এই আন্দোলনের কোনও ঘোষিত কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নেই। গত নভেম্বরে শুরু হওয়া তাদের কর্মসূচিতে উত্তাল হতে শুরু করে প্যারিসসহ ফ্রান্সের বড় বড় সব শহর। জ্বালানি তেলের ওপর কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে সেইসব মানুষ, অর্থনৈতিক চাপে যারা এমনিতেই পর্যদুস্ত।
ফ্রান্সের সরকার সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, নতুন করে কোনও ধরনের সংঘাতের ঘটনা ঘটলে তার বিরুদ্ধে ‘চরম প্রতিক্রিয়া’ দেখানো হবে। গত শনিবার শঁজেলিজেতে কর্মসূচি পালনকালে বড় মাত্রায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষতি করা হয়েছে। পর্যটক ও ক্রেতাদের সামনেই ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনকারীদের কয়েকজন হামলা চালায়। তার দোকানের মালামাল লুট করে। কয়েকটি দোকানে আগুনও লাগিয়ে দেয়। এর প্রেক্ষিতে একদিকে যেন পুলিশ শঁজেলিজে অ্যাভেনিউতে কর্মসূচি পালন নিষিদ্ধ করেছে ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনকারীদের জন্য, তেমনি জনশৃঙ্খলা নিশ্চিতে সেনা সদস্য মোতায়েন করতে যাচ্ছে প্যারিস ও নিস শহরে। এসব সেনা সদস্য ‘সেন্টিনেল পেট্রোল ফোর্সের’ অংশ।
ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনকারীদের দমন করতে ফ্রান্স ‘সেন্টিনেল পেট্রোল ফোর্সকে’ মাঠে নামানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহল থেকে আসছে সমালোচনা। রাজনীতিবিদদের অনেকেই এ বিষয়ে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। সরকারি সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে ফরাসি রাজনীতিবিদ ব্রুনো রেটেলিউ বলেছেন, সেন্টিনেল সদস্যদের মোতায়েনের সিদ্ধান্ত ‘একটি বড় ভুল’। খোদ বাহিনীটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন,‘সেন্টিনেলের সবাই সেনা সদস্য, জনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে আমাদের ধারণা নেই।’
সরকার এই সমালোচনার জবাবে বলেছে, সেন্টিনেল সদস্যরা নয়, প্রথম পদক্ষেপ পুলিশই নেবে। কিন্তু বিবিসি লিখেছে, অতীতেও ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনকারীদের দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরে যেতে দেখা গেছে। তারা কোথায় কখন উপস্থিত হবে তা আগে থেকে নিশ্চিত করা কঠিন। ফলে সেন্টিনেল সদস্যদের আগে পুলিশ বাধা দেওয়ার সুযোগ পাবে, এমনটা নাও হতে পারে।