লজ্জা প্রকাশ করে দ্রুত বিচার চাইলো ছাত্রলীগ

46

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবি করেছে ছাত্রলীগ। একইসঙ্গে এই ঘটনার সঙ্গে বুয়েট ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততার ঘটনায় কেন্দ্রীয় সংগঠনের পক্ষ থেকে লজ্জা প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে ‘আবরার হত্যার দ্রুত বিচারের’ দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ তাদের এই অবস্থান জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, আমরা আবরার হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার দাবি করছি। আপনারা দেখেছেন, শুরু থেকেই আমরা অপরাধীদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছি। কারণ আমরা বলেছি কোনও অপরাধীর স্থান বাংলাদেশ ছাত্রলীগে হবে না। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা ১১ জনকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছি। আপনারা জানেন, কোনও ঘটনার জন্য এই প্রথম এতো দ্রুত অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি এবং সাংগঠনিকভাব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এই হত্যাকান্ডের জন্য আমরা লজ্জা প্রকাশ করছি।
সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় সংবাদ সম্মেলনে আবরার হত্যাকান্ডের পর তাদের নেওয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন। ছাত্রলীগ এ ধরনের সহিংসতাকে জায়গা দেবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঘটনার পরপরই বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের ১১ জনকে বহিষ্কার করি। দ্রুততম সময়ে হত্যাকান্ডে জড়িত এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই। পলাতকদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারের আহব্বান জানাই। একইসঙ্গে এজাহারের বাইরে হত্যাকান্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসারও আহব্বান জানাই। এক্ষেত্রে ছাত্রলীগ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
জয় বলেন, সাংগঠনিকভাবে ছাত্রলীগ কখনোই কোনও প্রকার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে প্রশ্রয় কিংবা উৎসাহ প্রদান করে না। সংগঠনের পরিচয় ব্যবহার করে অতি উৎসাহী কোনও কর্মকান্ডকে ছাত্রলীগ অতীতের মতো ভবিষ্যতেও প্রশ্রয় দেবে না। সম্প্রতি আবরার হত্যাকান্ডের ছাত্রলীগের পদক্ষেপে আবারও তা প্রমাণ পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা নজিরবিহীন। ছাত্রলীগের সব নেতাকর্মীর প্রতি তিনি আহব্বান জানিয়েছেন, কারও কর্মকান্ডে উন্নয়নের ধারা যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমার চোখে সব অপরাধী সমান, আবরার হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত কেউ ছাড় পাবে না। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
উল্লেখ্য, রবিবার রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বুয়েটের ১৭তম ব্যাচের ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বীকে। রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের দ্বিতীয় তলা থেকে আবরারের মরদেহ উদ্ধার করে কর্তৃপক্ষ। পুলিশ জানিয়েছে, তাকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় বুয়েট ছাত্রলীগের ১৩ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। আবরার ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা গ্রামে। তার বাবা বরকত উল্লাহ একজন এনজিওকর্মী, মা রোকেয়া বেগম কিন্ডার গার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে আবরার বড়। তার ছোট ভাই ঢাকা কলেজের ছাত্র।