রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরানো ভারতেরও ‘জাতীয় স্বার্থ’

30

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, রোহিঙ্গাদের স্বভূমিতে ফিরে যাওয়া বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে তার দেশেরও ‘জাতীয় স্বার্থ’। ঢাকা সফররত জয়শঙ্কর গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। ভারতের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা এ বিষয়ে একমত হয়েছি যে, বাস্তুচ্যুত লোকজনের নিরাপদ, দ্রুত ও স্থায়ী প্রত্যাবাসন এই অঞ্চলের তিন দেশ-বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভারতের জাতীয় স্বার্থের বিষয়।
‘দারুণ বৈঠক’ হওয়ায় উচ্ছ¡সিত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, সব বিষয়েই আমরা কম-বেশি মতৈক্যে পৌঁছেছি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর সোমবার রাতে প্রথম বাংলাদেশ সফরে আসেন জয়শঙ্কর। গতকাল মঙ্গলবার ধানমÐিতে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। বেঠকে ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রায় সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে নয়া দিল্লি যথাযথ ভূমিকা রাখছে না বলে বাংলাদেশের অনেকে সমালোচনা করে আসছেন। যদিও ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গাদের সর্বশেষ এই সংকট দেখা দেওয়ার পর রাখাইনে ব্যাপক সহায়তামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে নয়া দিল্লি।
প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের আলোচনার মধ্যে রাখাইন রাজ্যে এরইমধ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য প্রায় আড়াইশ ঘর তৈরি করেছে ভারত। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী আগামীকাল ২২ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমার। এর আগে গত নভেম্বরে এই প্রক্রিয়া শুরুর কথা থাকলেও মিয়ানমার তাদের অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ব্যবস্থা করতে পারেনি অভিযোগ তুলে তা নাকচ করেন রোহিঙ্গারা।
রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশও।
বৈঠকে জয়শঙ্কর বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া এই বাস্তুচ্যুতদের আরও সহায়তা প্রদান এবং রাখাইন রাজ্যের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করতে তাদের প্রস্তুত থাকার কথা পুনর্ব্যক্ত করছেন।
জয়শঙ্কর বলেন, প্রতিবেশীরা একসঙ্গে কী করতে পারে- তার দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্ব। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই অংশীদারিত্বকে দক্ষিণ এশিয়ায় ‘রোল মডেল’ হিসেবে ধরে রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জয়শংকর বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত সুদৃঢ় এবং ভবিষ্যতে এটা আরো জোরদার হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী দু’টি অনুষ্ঠানই উদযাপন করতে যাচ্ছি।
জয়শংকর বলেন, আমরা বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে গর্ব বোধ করি। নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তার প্রস্তাব দিচ্ছি।
পানি বন্টনের ব্যাপারে ভারতের এই মন্ত্রী বলেন, পানিসম্পদ বাংলাদেশের জন্য একটি গুরত্বপূর্ণ বিষয় এবং আমাদের মতো তারাও অভিন্ন ৫৪টি নদীর জন্য উভয়পক্ষের গ্রহণযোগ্য একটি উপায় বের করতে চায়।
তিস্তা নদীর পানি বন্টন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জয়শংকর বলেন, আপনারা জানেন যে, এ ব্যাপারে আমাদের সরকারের একটি অবস্থান আছে। এ ব্যাপারে আমাদের একটি অঙ্গীকার আছে এবং এটা পরিবর্তন হবে না।
তিনি আরো বলেন, যখন নিরাপত্তার প্রশ্ন সামনে আসে তখন অপরাধ, সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থার বিরুদ্ধে দু’দেশের অংশীদারিত্বও উন্নয়ন দু’দেশের জনগণকেই সরাসরি সুফল দেয় বলে আমাদের বিশ্বাস।
তিনি বলেন, দু’দেশের জনগণের মধ্যে সবক্ষেত্রে যোগাযোগ বেড়েছে। জনগণের মধ্যে আরো যোগাযোগ বাড়ানোর লক্ষে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
জ্বালানি সহযোগিতার ব্যাপারে তিনি বলেন, দু’টি দেশই পরস্পরের সফলতার সুফল ভোগ করে।
এর আগে, সকালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাজধানীর ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন করেন। তিনি সেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
সীমান্ত লাগোয়া ভারতীয় রাজ্য আসামের নাগরিকপঞ্জি (ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব সিটিজেন্স-এনআরসি) নিয়েও বাংলাদেশে উদ্বেগ রয়েছে।
যেভাবে ওই তালিকা করা হচ্ছে তাতে আসামের ৪০ লাখের বেশি বাসিন্দা নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হতে পারে এবং তাদের অবৈধ ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করে ভারত থেকে বের করে দেওয়া হতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে দেশটির গণমাধ্যমেই।
কিন্তু সাংবাদিকদের ব্রিফ করতে এসে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো আলোচনায় যাননি জয়শঙ্কর। তিনি সরাসরিই বলেন, এটা একান্তই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
দুই দিনের সফর শেষে আজ সকালে ঢাকা ছাড়বেন জয়শঙ্কর।