রেলপথ নিরাপদ রাখতে কর্মকর্তারা মাঠে

198

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের দুই হাজার ১৫১ কিলোমিটার রেলপথ নিরাপদ রাখতে তৎপরতা শুরু করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। এবার চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ ঠেকাতে রেলপথের পাশে থাকা উপজেলার চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবরে চিঠি পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলায় জনসচেতনতা সৃষ্টি, রেললাইনের পাশের জনবসতি উচ্ছেদ ও রেললাইনের নিরাপত্তায় নজরদারি বাড়াতে এ চিঠিতে অনুরোধ জানানো হবে। পাশাপাশি চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ বন্ধে রেললাইনের পাশের এলাকায় মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ শুরু করেছে পূর্বরেল কর্তৃপক্ষ।
গতকাল মঙ্গলবার প্রথমদিনে ষোলশহর স্টেশন থেকে দোহাজারী পর্যন্ত প্রচারণা চালানো হয়। এতে নেতৃত্ব দেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সহযোগিতায় এ প্রচারণা চালানো হয়।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, ‘ষোলশহর থেকে দোহাজারী পর্যন্ত গ্রামে গ্রামে যেখানেই বাড়ি আছে সেখানে দাঁড়িয়ে প্রচারণা চালিয়েছি। রেললাইনে চলাফেরা করলে যেসব ঝুঁকি আছে সে বিষয়গুলো অভিভাবকদের জানিয়েছি। রেললাইনে হাঁটা কিংবা খেলাধুলা থেকে সন্তানদের বিরত রাখার কথা বলেছি। গরু, ছাগল, মুরগি রেললাইনে লালন-পালন না করা, কাপড় শুকাতে না দেয়ার বিষয়গুলো অবহিত করেছি।’
ডিআরএম বলেন, ‘চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ বন্ধে স্থানীয়ভাবে সচেতনতা বাড়াতে আমি প্রতিটি উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনওকে চিঠি পাঠাবো। চিঠিতে রেললাইনের পাশে যে গ্রামগুলো আছে সেখানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনসচেতনতামূলক সভা আহবান করতে অনুরোধ করবো। এসব সভায় আমরাও যাবো। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ চিঠি পাঠানো হবে।’
জানা যায়, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে দুই হাজার ১৫১ কিলোমিটার রেলপথ আছে। এ রেলপথের প্রায় পুরোটাই অরক্ষিত ও অনিরাপদ। রেলপথ ঘেঁষে গড়ে ওঠেছে অসংখ্য বস্তিঘর। বসে ৩২টি হাটবাজার। মোবাইল ফোনে কথা বলা কিংবা হেডফোন লাগিয়ে মনের আনন্দে রেলপথে বিচরণও চোখে পড়ে। রেলবিটে বসে আড্ডাতো চলেই। এসবে প্রায়সময় ছোটবড় দুর্ঘটনা ঘটলেও ছোট ঘটনায় বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ। রেললাইনের পাশে যেখানেই মানুষের বিচরণ আছে সেখানেই এমন ঘটনা বারবার ঘটছে। আহত ও নিহত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের পাঁচটি জেলায় পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে বেশি।
রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারা অনুযায়ী, ট্রেনে পাথর ছোড়া হলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদন্ডসহ ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে পাথর নিক্ষেপে কারও মৃত্যু হলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদন্ডের বিধান রয়েছে। যদিও এসব আইনে কারও শাস্তির নজির নেই।
২০১৩ সালে চলন্ত ট্রেনে ছোড়া ঢিলের আঘাতে প্রকৌশলী প্রীতি দাশের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সেসময় তোলপাড় শুরু হলে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা কারা ঘটাচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্য কি, এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা বিষয়গুলো অনুসন্ধানের কথা বলা হয়েছিল। রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সংঘটিত হওয়ায় সেসময় ঘটনাগুলোকে অনেকেই নাশকতা বলেও মন্তব্য করেছিল। গত বছরের ১২ জুন পাথরের আঘাতে মারা যান বায়েজিদ শিকদার নামে রেলের এক পরিদর্শক। সাম্প্রতিক সময়ে রেলের পাথর নিক্ষেপের ঘটনা আবারো মাথাচড়া দিয়ে ওঠে। প্রতিদিন কোনো না কোনো ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পাথর নিক্ষেপ থেকে বাদ পড়েনি নতুন ট্রেন বনলতা। বারবার পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের প্রাণ যাচ্ছে তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকারি সম্পত্তি রেল।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক বলেন, ঈদের সময় কোনোধরনের দুর্ঘটনা হয়নি। ঈদের আগে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। অজ্ঞাত মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনাগুলো কেউ ঘটনার স্বীকার করে না। স্টেশনের আশপাশে কোথাও এমন ঘটনা হয় না। ঘটনাগুলো এমন জায়গায় করা হয় যেখানে মানুষ কম থাকে। ট্রেন থামে না, লোকজন নাই, খালি রাস্তা সেখানেই ঘটনা ঘটে।
রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজ ভূঁইয়া পূর্বদেশকে বলেন, ‘চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে চট্টগ্রাম থেকে ফেনী পর্যন্ত ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছি। ষোলশহর, ফৌজদারহাট, সীতাকুÐ, আকবরশাহ রেল গেট, বারইয়ার হাট, কুমিরা এলাকায় প্রশাসনের সমন্বয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে সভা করেছি। গত চার মাসে আমার এলাকায় পাথর নিক্ষেপের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ আমান উল্লাহ আমান পূর্বদেশকে বলেন, ‘পাথর নিক্ষেপ বন্ধে আরএনবির পক্ষ থেকে আমরা সবসময় প্রচারণা চালানো হয়। আমরা নিজেরাই লিফলেট প্রচার করি। যেখানেই পাথর নিক্ষেপ বেশি হয় সেখানে বাড়তি নজরদারি রাখি।’