রেলওয়ের ডিজেল ওয়ার্কশপে হরিলুট

209

রেলওয়ের ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ ওয়ার্কশপে মূলত ইঞ্জিন মেরামতের কাজ হয়। সারাদেশের রেল যোগাযোগের স্বার্থে পাহাড়তলীতে অবস্থিত এ ওয়ার্কশপের গুরুত্ব অধিক। সুযোগটি কাজে লাগিয়ে সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা ব্যাপক হরিলুটে মেতেছেন। ওয়ার্কশপে দায়িত্বরতদের পছন্দের ঠিকাদার ছাড়া সেখানে কেউ কাজ নিতে পারে না। সেখানে গড়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ ঠিকাদার-কর্মকর্তার সিন্ডিকেট। করোনাকালেও বহু টাকার নয়-ছয় করেছে সিন্ডিকেটটি। সম্প্রতি একটি সংস্থার রিপোর্টে এমন অভিযোগ উঠলে নড়েচড়ে বসে ওয়ার্কশপের দায়িত্বরতরা।
রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক রুহুল কাদের আজাদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘ডিজেল ওয়ার্কশপে বড় ধরনের কেনাকাটা আমরাই করি। তবে কিছুকিছু পণ্য পিপিআর সিস্টেমে তারা নিজেরাই ক্রয় করেন। পিপিআর সিস্টেমে কোন অনিয়ম হলে আমি জানবো না। ছয় শতাধিক তালিকাভুক্ত ঠিকাদারের মধ্যে কারা নিয়মিত কাজ পান তা দেখতে হবে।’
অভিযোগ আছে, পাহাড়তলী ডিজেল ওয়ার্কশপের কর্মব্যবস্থাপক রাজীব দেবনাথ সেখানে একছত্র আধিপত্য গড়ে তুলেছেন। ঢাকার অধীনে হওয়ায় চট্টগ্রামের রেলের শীর্ষ কোন কর্মকর্তাকে গুরুত্ব দেন না তিনি। নিজের পছন্দের কয়েকজন ঠিকাদার ছাড়া সেখানে কেউ কাজ করতে পারেন না। নানা ছুঁতোয় অন্যদের কাজ দিতে চান না রাজীব। সেখানে তার প্রশ্রয়ে ঠিকাদাররাও বেপরোয়া। এ সংক্রান্ত কোন তথ্য দিতেও অপারগতা প্রকাশ করেন রাজীব।
গত এক বছরে পাহাড়তলী ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ মেরামত কারখানায় কারা কাজ পেয়েছেন কিংবা কি পণ্য কেনাকাটা হয়েছে, এমন তথ্য চাইলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছাড়া তথ্য প্রকাশে অপারগতা জানান।
তবে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পাহাড়তলী ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ মেরামত কারখানার কর্মব্যবস্থাপক রাজীব দেবনাথ পূর্বদেশকে বলেন, ‘কেনাকাটার বিষয়টি দেখভাল করে সিসিএস দপ্তর। তারা না পারলেই আমরা কিছু কেনাকাটা করি। সেখানে কোন অনিয়ম হয়নি। কোন পছন্দের ঠিকাদার নয়, বরং নিয়ম মেনে যারা কার্যাদেশ পান তারাই কাজ করেন।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, একটি লোকোমোটিভে চারটি ট্রাকশন মোটর থাকে। এসব মোটর মেরামতের নামেই মূলত বড় ধরনের অনিয়ম হয়। প্রতি মাসে যে পরিমাণ ট্রাকশন মোটর মেরামত করা হয়, তার দ্বিগুন বিল ভাউচার তৈরি করেন রাজীব দেবনাথ। এছাড়া পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর) সিস্টেমে নিজের পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে ইচ্ছেমত পণ্য কেনাকাটা করেন। নিয়মানুযায়ী ওয়ার্কশপ গেট দিয়ে কেউ পণ্য নিয়ে প্রবেশ কিংবা বের হলে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অনুমতি লাগে। কিন্তু আরএনবির কাছে পণ্য আনা-নেওয়ার কোন নোট সংরক্ষিত নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ঠিকাদার পূর্বদেশকে বলেন, ‘ডিজেল ওয়ার্কশপে যারা মালামাল সরবরাহের কাজ পান, তারা নিয়মিত পান। এখানে পছন্দের বিষয়টি প্রাধান্য দেন কর্মব্যবস্থাপক রাজীব। সেখানে নতুন কোন ঠিকাদার কাজ করতে গেলেই ঝামেলা বাঁধে। চার থেকে পাঁচ ঠিকাদার নিয়মিত কাজ করেন সেখানে। তারাও আবার একে অপরের উপর চাপ সৃষ্টি করে কাজ আদায় করেন।’
সূত্র জানায়, সম্প্রতি রেলে সম্পদ ব্যবস্থাপনা, ইঞ্জিন ও বগি সংগ্রহসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের ১০টি উৎসে দুর্নীতি চিহ্নিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব দুর্নীতি প্রতিরোধে রেলের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনাসহ ১৫ দফা সুপারিশ করেছে কমিশন। যার প্রতিবেদন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের কাছে তুলে দেয়া হয়।