রাঙ্গুনিয়ার রানীরহাটে একাধিক স্পটে জম্পেস মাদক ব্যবসা

40

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার উত্তর রাঙ্গুনিয়ার ১নং রাজানগর ইউনিয়নের রাণীরহাট ও তার আশেপাশে একাধিক স্পটে দীঘদিন ধরে চলছে জম্পেস মাদক ব্যবসায়। অবাধে মাদক ব্যবসার কারণে এলাকায় মাদক সেবনকারীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় এলাকায় চুরি, ছিনতাই ক্রমশ বেড়েই চলেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ের তালিকাভুক্ত চট্টগ্রামের শীর্ষ তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী জলেইক্কা ও তার ছেলে ইকবাল মাদক ব্যবসার পুনরায় চালু করেছে। এরআগে জলেইক্কার মাদক বিকিকিনির আস্থানা গুড়িয়ে দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু বছর খানেক নিরব থাকার পর গত বছর থেকে আবারও বেপরোয়া ভাবে টেকনাপ থেকে ইয়াবার বড় ছালান এনে এলাকায় পাইকারী বিক্রেতা হিসেবে মাদকের ব্যবসায় চালিয়ে যাচ্ছে। এভাবে দপায় দপায় প্রায় ৫/৭ বার পুলিশের হাতে মাদক সহ গ্রেপ্তার হয়ে জেলে গেলেও কয়েক মাস না যেতেই আবারও জামিনে বেরিয়ে এসে দাপটের সহিত প্রকাশ্যে মাদকের ব্যবসায় নেমে পড়ে। সূত্রে জানা যায়, রাজানগর ইউনিয়নের বাঁশঘাটা কলোনী, ব্রিজ ঘাটা কলোনী, জালালের কালোনী, রাণীরহাট বাজার, বিভিন্ন ব্রীকফিল্ড সংলগ্ন কলোনী, আবুল চেয়ারম্যান কলোনী, রাণীরহাটের পুলিশ বিটের কাছাকাছি কাল্ল বাপের ঘাটা কলোনী, গাবতল কলোনী সহ রাণীরহাটের একাধিক স্পটে চলে এসব মাদকের জম্পেস ব্যবসায়। এই নিয়ে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও যেন নিরব দর্শক সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি রাণীরহাটে রাঙ্গুনিয়া পুলিশের একটি সেবা ক্যাম্পে এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দেন স্থানীয়রা। পরে এই নিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে তারা বেশ কিছু মাদক ব্যবসায়ীরা নাম সাংবাদিকদের জানায়। এদের মধ্যে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী জলেইক্কা ও তার ছেলে ইকবাল ছাড়াও রয়েছে রকিবুল, মো. ওলি, ইসমাঈল, সাজু দাশ, মোহাম্মদ আলী, ওয়াজেদ আলী, ওখানো মার্মা সহ একাধিক মাদক ব্যবসায়ীর নাম উঠে এসেছে। তারা একেকজন এককটি কলোনীর স্পট ব্যবহার করে গড়ে তুলেছে এই মাদকের সম্রাজ্য। তাদের মাদক বেচাকেনার এই কার্যক্রম চলে দিনরাত ২৪ ঘন্টা। অন্যদিকে একইভাবে রাজানগরের ঠান্ডাছড়ি চা বাগান এলাকায় বাংলা দু’চুয়ানী মদের জমজমাট ব্যবসায় চালাচ্ছে জনৈক মাদক সম্রাজ্ঞী বাসন্তি দাশ নামে এক নারী।
গত ১ মাসে রাণীরহাট বাজারের হারুন স্টোর, ইব্রাহীমের দোকান, সৃজিত তুরীর দোকান সহ ৩-৪টি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে নগদ টাকা সহ মূল্যবান মালামাল নিয়ে যায় চোরের দল। এরমধ্যে সৃজিত তুরীর দোকান থেকেই চুরি হয় নগদ সাড়ে ৮ লাখ টাকা সহ মূল্যবান মালামাল। এই ব্যাপারে তিনি থানায় মামলা দায়ের করলেও তিনি কোন সুরাহ পাননি বলে জানান। অপরদিকে সরাষ্ট্রমন্ত্রীর তালিকাভুক্ত চট্টগ্রামের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী জলেইক্কা ও তার পুত্র ইকবাল গত ৬ মাস ধরে এলাকায় টেকনাপ থেকে ইয়াবা, গাজা, ফেনসিডিল এনে পাইকারী ভাবে তার সিন্ডিকেটের মাঝে বিক্রি করে আসছে। এরআগে ৬-৭ বছর ধরে বেপরোয়া মাদকের ব্যবসায় করে কোটি কোটি টাকা অর্থবৃত্তের মালিক হয়েছে। তার মাদকের ব্যবসায় রাজানগর ইউনিয়নে গড়ে তুলেছে বিলাসবহুল বাড়ি। রাণীরহাট বাজারের ব্যবসায়ী আবদুর সোবহান জানান, রাণীরহাট বাজার এখন মাদকের জোয়ারে ভাসছে। যুব সমাজ ও ছাত্র সমাজ মাদকের ছুবলে ধ্বংসের পথে যাচ্ছে। পরিবার থেকে টাকা না পেয়ে মাদক সেবনের জন্য টাকা জোগাড় করতে গিয়ে চুরি, ছিনতাইয়ে জড়িত হয়ে পড়ছে। রাণীরহাট কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কামাল উদ্দিন চৌধুরী জানান, মাদকের বিরুদ্ধে কোন আপোষ করা যাবে না। মাদককে সমূলে উৎখাত করতে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই ভদ্রবেশি সাদা সার্ট পড়া কিছু লোক আশেপাশের কলোনীতে যাওয়া-আসা করে। এদের আইনের আওতায় আনা গেলে মূল হোতাদেরও ধরা যাবে বলে তিনি জানান। ইসলামপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন চৌধুরী মিল্টন বলেন, এক সময় ইসলামপুরে মানুষের ঘুম ভাঙতো গুলির শব্দে। খুন, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধের ব্যাপক বিস্তার ছিল এই এলাকায়। কিন্তু এখন সন্ত্রাসবাদ দূর হয়ে এলাকায় অনেকাংশে শান্তি বিরাজ করছে। কিন্তু এখন নতুন আতঙ্খের নাম মাদক। মাদকের কবলে ধ্বংস হচ্ছে যুব সমাজ। তাই মাদক রুখতে সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। রাজানগর ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার বলেন, মাদক কারবারিরা গ্রেপ্তার হলেও আইনের ফাঁক দিয়ে অল্প দিনেই বেরিয়ে এসে আবারও দাফটের সাথে ব্যবসায় চালিয়ে যায়। তাই এদের ধরার সাথে সাথে থানাতেই প্রাথমিক শাস্তির ব্যবস্থা করা গেলে অন্তত সেই ভয়ে হলেও তারা এই কাজ থেকে দূরে সরে যাবে। রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, রাঙ্গুনিয়া থানায় আমি যোগদান করার পর থেকে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তারও হয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে কোন আপোষ নেই। এলাকার সবাই যদি সহযোগীতা করে তবে অচিরেই মাদক মুক্ত রাঙ্গুনিয়া গড়ে তোলা সম্ভব হবে।