মারাত্মক ঝুঁকিতে চট্টগ্রামের এক হাজার বয়স্ক চিকিৎসক

102

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর প্রাদুর্ভাবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন বয়স্ক চিকিৎসকরা। সেই হিসেবে চট্টগ্রামের প্রায় ১ হাজার বয়স্ক চিকিৎসক মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছেন। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে যে সকল চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে ১৫ শতাংশই বয়স্ক চিকিৎসক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর প্রধান দু’টি কারণ হলো- বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হতে থাকে এবং ফুসফুসও সহজে সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে। এছাড়া যাদের আগে থেকেই জটিল বিভিন্ন অসুস্থতা রয়েছে, যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ-রক্তচাপ, ফুসফুস প্রদাহ, কিডনি জটিলতা, তাদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাস প্রাণঘাতী হতে পারে। বয়স ৫০ হওয়ার পর অনেকেই ডায়াবেটিস, হাইপার টেনশন, অ্যাজমার সমস্যা দেখা দেয়। এতে ফুসফুস দুর্বল হয়ে যায়। আর করোনা ভাইরাস ফুসফুসকে সংক্রমিত করে। যার কারণে বয়স্করা এতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, তারাই বেশি মারা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)’র সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে সরকারি চিকিৎসক রয়েছে প্রায় ২ হাজার আর বেসরকারি চিকিৎসক রয়েছে ৫ হাজারের বেশি। এদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৩৭০ জন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫৪ চিকিৎসকের বয়স ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে। যা মোট আক্রান্তের প্রায় ১৫ শতাংশ। এছাড়া দেশে করোনায় চিকিৎসকদের মধ্যে মৃত্যুর হার ৩ দশমিক ২ শতাংশ। পেশাজীবীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের মধ্যে মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি।
চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা কেন্দ্রের তথ্যমতে, মধ্য বয়সীদের চাইতে বয়স্করা অর্থাৎ যাদের বয়স ৫০ বছরের বেশি তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্তত ১০ গুণ বেশি থাকে। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ২৮ ভাগের বয়স ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে।
ইতালিতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের ৭৭ শতাংশের বয়স ৭০-৮৯ বছরের মধ্যে। এবং ১০ ভাগের বয়স ৫০-৬৯ বছরের মধ্যে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের চিত্রও প্রায় একই। তাই প্রবীণদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নাজুক হওয়ার কারণে সতর্ক হয়ে চলার ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সল ইকবাল বলেন, চট্টগ্রামে সরকারি ও বেসরকারি মিলে মোট ৭ হাজার চিকিৎসক রয়েছেন। এদের মধ্যে প্রায় ১ হাজার বয়স্ক চিকিৎসক আছেন। তাদের ঝুঁকির মাত্রা অনেক বেশি। আর এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৩৭০ জন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, যাদের আগে থেকেই জটিল বিভিন্ন অসুস্থতা রয়েছে, যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ-রক্তচাপ, ফুসফুস প্রদাহ, কিডনি জটিলতা, তারা বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যার কারণে বয়স্করা এতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
এছাড়া যাদের বয়স তুলনামূলক কম তারা চিকিৎসা সেবায় এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে ফয়সল বলেন, চিকিৎসকরা নিজেদের নিরাপদ রেখে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে রোগীদের সেবা দিতে পারে। বেসরকারি চেম্বারে চিকিৎসকরা কয়েকটা শিফটে ভাগ হয়ে ও রোগীদের সময় নির্ধারণ করে দিয়ে চিকিৎসা দিতে পারে।