মাদুরোকে উৎখাতে নিরাপত্তা পরিষদকে পাশে চায় যুক্তরাষ্ট্র

34

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে উৎখাতের মাধ্যমে জুয়ান গুইদোকে প্রেসিডেন্ট পদে বসাতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সমর্থন চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ উদ্দেশে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও আলোচনার ডাক দিতে যাচ্ছেন। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, মাদুরোকে উৎখাতের প্রস্তাবে আগে থেকেই বিরোধিতা করে আসছে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাশিয়া। আর এদিকে পম্পেওর আলোচনা অনুষ্ঠানের ডাকার তথ্য জেনে মাদুরো কৌতুকের সুরে মন্তব্য করেছেন, তিনি নিজেও চান নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা অনুষ্ঠিত হোক। এতে করে তার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার তথ্য সবার সামনে তুলে ধরা যাবে।
সরকার বিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভের ধারাবাহিকতায় গত বুধবার নিজেকে অন্তর্র্বতীকালীন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছেন ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলীয় নেতা জুয়ান গুইদো। কয়েক মিনিটের মাথায় তাকে ‘স্বীকৃতি’ দিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘ভেনেজুয়েলার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির প্রেসিডেন্ট জুয়ান গুইদোকে আমি দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসাবে স্বীকৃতি দিচ্ছি।’ কিন্তু এখনও দেশটির সেনাবাহিনী মাদুরোর পক্ষেই আনুগত্য ধরে রেখেছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশটির সেনাবাহিনী যেদিকে দাঁড়াবে, ক্ষমতার পাল্লা সেদিকেই হেলে পড়বে।
শুক্রবার ভেনেজুয়েলার রাজধানী কারাকাস থেকে মার্কিন দূতাবাস কর্মকর্তাদের বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। কড়া পুলিশ প্রহরার মধ্যে তাদের গাড়ি বহর পৌঁছায় কারাকাসে। এর পরপরই রাশিয়ার সমর্থনপুষ্ট ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা বেগবান করে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জুয়ান গুইদোকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাবটি নিরাপত্তা পরিষদে আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপিত হবে। মাদুরোকে উৎখাতের মার্কিন প্রস্তাবের বিরোধিতা করে রাশিয়া বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ক্যু সংগঠনের মাধ্যমে দেশটিতে বাড়তে থাকা ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার আরেকটি বিষয় করে তুলতে চাইছে। রুশ বার্তা সংস্থা আরআইএকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ শুক্রবার (২৫ জানুয়ারি) বলেছেন, মস্কো প্রস্তাব করবে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার। নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনার ডাক দেওয়ার জন্য শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রকে কৌতুক করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মাদুরো।

তার ভাষ্য, ‘আমি নিজেই পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে চেয়েছিলাম নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আহŸানের বিষয়ে। কিন্তু তার আগেই মাইক তা করে ফেলেছেন। ধন্যবাদ মাইক…আমরা সেখানে সংবিধানের ধারা ও অভ্যথানের বিষয়ে তথ্য তুলে ধরতে পারব।’
এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রধান মিশেল ব্যাশেলে গত শুক্রবার বলেছেন, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অনেক বেশি শক্তি প্রয়োগ করছে মাদুরো সরকার। তিনি আশঙ্কা করছেন, পরিস্থিতি খুব দ্রæত হাতের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। অনেক বড় তেলের মজুদ থাকা সত্তে¡ও গত কয়েক বছর ধরে কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে ভেনেজুয়েলাকে। স¤প্রতি দেশটির সাধারণ মানুষকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কলম্বিয়া থেকে খাদ্যসহ অন্যান্য জরুরি সামগ্রী সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। আর্থিক দুর্দশা থেকে উক্তি পেতে তাদের অনেকেই আশেপাশের দেশে অভিবাসী হওয়ার চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে নির্বাচন। তাতে জিতে দ্বিতীয় মেয়াদে দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন নিকোলাস মাদুরো। দেশটির বিরোধী দলসহ আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় নির্বাচনের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ তুলেছে। বিরোধীদের এমন দাবির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অর্থনৈতিক মন্দা। অর্থনৈতিক সংকটে জনগণের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ শেষ পর্যন্ত পরিণত হয় সরকার বিরোধী বিক্ষোভে।