মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণে ৬৭০০ মানুষের অকাল মৃত্যু হবে

67

পূর্বদেশ ডেস্ক

দেশের প্রস্তাবিত বড় কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের অনেকগুলো চট্টগ্রামে নির্মাণ করা হচ্ছে। সেগুলো চালু হলে এই অঞ্চলে বিশ্বের বৃহত্তম কার্বন বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, প্রস্তাবিত কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে এলে সেগুলোর মেয়াদকালীন সময়ে মোট প্রায় ১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন টন কার্বন ডাইঅক্সাইডের সমপরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরিত হবে, যা বাংলাদেশের পাঁচ বছরেরও বেশি জাতীয় নির্গমনের সমান।
গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশবাদী সংগঠন মার্কেট ফোর্সেস, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ যৌথভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
‘চট্টগ্রাম অঞ্চলে জ্বালানি পরিকল্পনা: সম্ভাব্য কার্বন বিপর্যয়’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনের মূল বক্তব্য অস্ট্রেলিয়া থেকে ভার্চুয়ালি উপস্থাপন করেন মার্কেট ফোর্সেস এর নির্বাহী পরিচালক জুলিয়ান ভিনসেন্ট।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি দশকে চট্টগ্রামে ২০ গিগাওয়াট কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা চলছে। এর মধ্যে ১৮ দশমিক ৭ গিগাওয়াট এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর পাশাপাশি মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে। যেহেতু প্রকল্পগুলো এলএনজি ও কয়লাভিত্তিক, সেগুলো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।‘প্রস্তাবিত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের মোট জীবাশ্ম জ্বালানির দুই তৃতীয়াংশই পুড়বে চট্টগ্রামে; যা জলবায়ুর উপর ভয়ংকর প্রভাব ফেলবে। এসব প্রকল্প নৈসর্গিক চট্টগ্রামের প্রাণ-প্রকৃতির ওপর যেমন বিরূপ প্রভাব ফেলবে, তেমনি স্থানীয় জনসাধারণের জীবন-জীবিকা ও স্বাস্থ্যের জন্যও ডেকে আনবে ভয়াবহ বিপর্যয়।’
জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পের এ বিশাল সম্প্রসারণ প্রধানত জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো নির্মিত ও অর্থায়ন করছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, মাতারবাড়ী-২ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে অর্থায়ন করে জাপান জি-সেভেন সম্মেলনের অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। খবর বিডিনিউজের
প্রতিবেদনে প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর হিসেবে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার মাতারবাড়ি-২ বিদ্যুৎকেন্দ্রকে চিহ্নিত করা হয়। এ প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি অর্থায়ন করছে জাপানি কোম্পানিগুলো। এজন্য প্রধান অর্থায়নকারী হিসেবে দেশটি নিজেদের অঙ্গীকার ‘সরাসরি ভঙ্গ করছে’ বলে প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়।
‘জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো ধনী দেশগুলোর উচিৎ বাংলাদেশকে পরিবেশ দূষণকারী প্রযুক্তি গছিয়ে না দিয়ে সাশ্রয়ী, পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশটির প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে সহায়তা করা।’
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ‘মাতারবাড়ি-১ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ইতোমধ্যে স্থানীয় জলাশয়ের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থাপনা নির্মাণের জন্য সাধারণ মানুষকে তাদের বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে তারা তাদের জীবন-জীবিকা হারিয়েছে। মাতারবাড়ির দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষণ প্রায় ৬ হাজার ৭শ’ মানুষের অকাল মৃত্যু ডেকে আনবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’