মশা মারতে চসিকের ক্রাস প্রোগ্রাম অকার্যকর ওষুধ বর্জন করতে হবে

119

অন্যান্যবারের চেয়ে এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতি এককথায় ভয়াবহ। প্রথমত, এবার ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেশি। দ্বিতীয়ত, জ্বরের মাত্রা কম, দৃশ্যমান দাগ না হওয়া, এমনকি শরীরে পর্যাপ্ত ব্যথা না হওয়ায় অনেকেই বুঝতেই পারছেন না তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন কিনা। তৃতীয়ত, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনসহ অন্যান্য কর্পোরেশনে ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা নিধনে যে ওষুধ ছিটাচ্ছে, তা অকার্যকর।
আশ্চর্যই বলতে হবে, মশা মারার ওষুধ নিয়েও উচ্চ আদালতকে কথা বলতে হচ্ছে। উচ্চ আদালত এডিস মশা নিধনে অকার্যকর ওষুধ আমদানি, সরবরাহ ও বিপণনে জড়িতদের বিষয়ে তদন্ত করে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশ দিয়েছেন। আদেশে কার্যকর ওষুধ আমদানি করে তা দ্রæত ছিটানোরও ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আদেশ পালনের অগ্রগতি প্রতিবেদন দুই কর্পোরেশনকে আগামী ২০ আগস্ট আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে, এবার যখন ডেঙ্গুর সংক্রমণ এবং এই রোগের মৃত্যুর হার বেশি, তখন ঢাকাসহ সবকটি সিটি কর্পোরেশন মশার অকার্যকর ওষুধ ছিটাচ্ছে। যদিও আদালত শুধু ঢাকার দুই সিটির কথা বলেছেন, বাস্তবে চট্টগ্রামসহ সবকটি সিটি কর্পোরেশনের অবস্থাও একই।
এই অকার্যকর ওষুধ কারা আমদানি করেছে? ওষুধ কিনতে ২০ থেকে ২২ কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে। অনুমান করা চলে, ওষুধ ক্রয়ে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে। আমাদের কথা হল, ওষুধ ক্রয়ের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে সিটি কর্পোরেশন এখন পর্যন্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? উচ্চ আদালতও বলেছেন, ওষুধ কেনায় দুর্নীতি হয়ে থাকলে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি বর্তমানে যা দাঁড়িয়েছে, তাতে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে রোগটি মহামারীর আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত ১৭ দিনে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮১ এবং মৃতের সংখ্যা ৫। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা পেতে হলে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আনার কোনো বিকল্প নেই। সিটি কর্পোরেশন বলছে, নতুন ওষুধ এনে তা কার্যকর করতে ৬ মাস সময় লাগবে। সময়টা দীর্ঘ। তাই জরুরি প্রয়োজন বিবেচনায় টেন্ডার ও আইনের বাইরে গিয়ে যত দ্রুত সম্ভব ওষুধ কেনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আমরা বলব, সবকিছুর বাইরে মানুষকে বাঁচানোই বড় কথা।
সাধারণত আমরা জানি, বর্ষার শুরু থেকে শরতের শেষ পর্যন্ত নানা কারণে মশার উপদ্রব বাড়ে। এসময় খাল-বিল, নালা-নর্দমা, সড়কের খানাখন্দক, জলাশয়, টায়ার, ফুলের টব, ঘরের ছাদে জমানো পানি ইত্যাদিতে মশা বাসা বাঁধে। এখান থেকে এডিস মশা বা ডেঙ্গুর জন্ম হয়। সিটি কর্পোরেশন সাধারণত এসময় মশা নিধনে ক্রাস প্রোগ্রাম নিয়ে থাকে। কিন্তু এবার বর্ষা মৌসুমের শুরুতে এ ধরনের কোন কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়নি। মাত্র দুইদিন আগে মেয়র মশা নিধনে ওষুধ ছিটানোর প্রোগ্রামের উদ্বোধন করেছেন। আমরা জানি, মশা নিধনের জন্য সিটি কর্পোরেশনের নির্দিষ্ট বাজেট থাকে। বছরের পর বছর এ বাজেট বাড়তে থাকে। গত বছর দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত পৃথক একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত অর্থ বছরের তুলনায় এবার (২০১৮-২০১৯) মশা নিধনে বরাদ্দ বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৬ গুণ। মশা নিধন কার্যক্রমে গতি আনতে চসিক-এ চালু হয়েছে কলসেন্টার। কিন্তু মশা নিধনে কোন কামান যেমন নাগরবাসীর দেখা মেলেনি তেমনি কলসেন্টার নিয়েও রয়েছে নগরবাসীর নানা অভিযোগ। চসিক পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তার হিসাব অনুযায়ী ১২০ জন কর্মী প্রতিদিন ৪১টি ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রম চালাচ্ছে। কিন্তু এত মশক নিধক কোথায় গিয়ে ঔষধ ছিটান তা খুঁজে বের করা দায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের সর্বত্রই এখন মশার উৎপাত। এসব ওয়ার্ডের প্রত্যন্ত এলাকা ও নালা-নর্দমা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না রাখায় মশার উৎপাত বেড়েছে। এতে নগরবাসীর স্বাভাবিক কার্যক্রমের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়াও চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আমরা মনে করি, ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও আক্রান্ত ব্যক্তির করণীয় কী, এ ব্যাপারে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো দরকার। সিভিল সার্জন অফিসকেই এ দায়িত্ব নিতে হবে। নগরবাসীকে মশার উপদ্রব থেকে মুক্তি দেয়ার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। কোন কারণে এ রোগের বিস্তার ঘটলে সিটি কর্পোরেশনের উপর বর্তাবে। সুতরাং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে- এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।