ভয়াল ২১ আগস্ট আজ

43

জাতি আজ শ্রদ্ধাবনতচিত্তে ইতিহাসের ভয়াবহতম গ্রেনেড হামলার ১৫তম বার্ষিকী পালন করছে। দেড় দশক আগে এইদিনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী শান্তি সমাবেশে নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। তখন বিএনপি-জামায়াত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল। মূলত আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করতে বিএনপি-জামায়াত তথা চার দলীয় জোট সরকার রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে নৃশংসতম গ্রেনেড হামলা চালায়।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় কয়েকজন নেতা সেদিন অল্পের জন্য এই ভয়াবহ হামলা থেকে বেঁচে গেলেও মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেগম আইভি রহমান ও অপর ২৪ জন নিহত হন।
দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনসমূহ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে দলের নেতা কর্মীরা আজ সকাল ৯ টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। বিকেল ৪টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । বক্তব্য রাখবেন দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ।
এছাড়াও এই হামলায় আরো ৪শ’ জন আহত হন। আহতদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন। তাদের কেউ কেউ আর স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাননি। দেশের বৃহৎ এই রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে এ হামলা করা হয়েছিল।
শেখ হাসিনার বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে আকস্মিক গ্রেনেড বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে মারাত্মক বিশৃংখলা, ভয়াবহ মৃত্যু ও দিনের আলো মুছে গিয়ে এক ধোয়াচ্ছন্ন পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
ঢাকা’র তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ হানিফ এবং হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী তাৎক্ষণিকভাবে এক মানববলয় তৈরি করে নিজেরা আঘাত সহ্য করে শেখ হাসিনাকে গ্রেনেডের হাত থেকে রক্ষা করেন।
মেয়র হা্িনফের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ জনিত অস্ত্রোপাচার করার কথা থাকলেও গ্রেনেডের স্পিন্টার শরীরে থাকার কারণে তার অস্ত্রোপাচার করা সম্ভব হয়নি। পরে তিনি ব্যাংকক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এদিকে শেখ হাসিনা গ্রেনেডের আঘাত থেকে বেঁচে গেলেও তাঁর শ্রবণ শক্তি নষ্ট হয়ে যায়।
এই বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় উল্লেখযোগ্য নিহতরা হলেন, আইভি রহমান, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারি, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুনশী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা). মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন এবং ইসাহাক মিয়া।
মারাত্মক আহতরা হলেন, শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক, প্রয়াত সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, এডভোকেট সাহারা খাতুন, মোহাম্মদ হানিফ, এএফএম বাহাউদ্দিন নাসিম, নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেন, সাঈদ খোকন, মাহবুবা পারভীন, এডভোকেট উম্মে রাজিয়া কাজল, নাসিমা ফেরদৌস, শাহিদা তারেক দিপ্তী, রাশেদা আখতার রুমা, হামিদা খানম মনি, ইঞ্জিনিয়ার সেলিম, রুমা ইসলাম, কাজী মোয়াজ্জেম হোসেইন, মামুন মল্লিক প্রমুখ।
অভিযোগ আছে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের এই হত্যাকান্ডের প্রতিকারের ব্যাপারে তৎকালীন বিএনপি সরকার নিলিপ্ত ভ’মিকা পালন করেছিল। শুধু তাই নয় এ হামলার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের রক্ষা করতে সরকারের কর্মকর্তারা ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত পাঁচটি গ্রেনেড ধ্বংস করে দিয়ে প্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টাও করা হয়েছিল।
পরবর্তী সময়ে নতুন করে তদন্ত শুরু হলে বিএনপি সরকারের প্রভাবশালী স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুৎফুরজ্জামান বাবর ঘটনার সাথে তারেক রহমান জড়িত আছেন বলে দাবি করে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাধর বড় পুত্র তারেক রহমান ‘এ হামলার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছিলেন।’
এই হামলার সাথে জড়িত ব্যক্তি অথবা গোষ্ঠীর সন্ধানদাতার জন্য সেসময় বাবর এক কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন। হামলার পর বাবরের তত্বাবধানে একটি তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় এবং এতে জজ মিয়া নামে এক ভবঘুরে, একজন ছাত্র, একজন আওয়ামী লীগের কর্মীসহ ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। অথচ পরবর্তী তদন্তে তাদের কারো বিরুদ্ধেই অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অনুকুল পরিস্থিতিতে সরকার এ হামলার পুনারায় তদন্তের নির্দেশ দিলে এবং সাড়ে তিন বছর পর বিলম্বিত পুলিশ চার্জ শিট নথিভুক্ত করা হয়। অথচ বিএনপি’র কতিপয় সংসদ সদস্য এই জঘন্য হামলাকে আওয়ামী লীগের পরিকল্পিত হামলা বলে দাবি করেছিল।
পুনরায় তদন্তে পুলিশ এই হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ২১ জনকে চিহ্নিত করে। এর আগে বেশ কয়েকটি বিদেশি মিশন যেমন ব্রিটিশ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড, ইউএস ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এবং ইন্টারপোল বাংলাদেশি তদন্তকারীদের যোগ দিলেও এসব প্রতিষ্ঠান বিএনপি সরকার তাদের সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ করেছিল।
একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিএনপি নেতা লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদন্ড এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দিয়ে গত বছরের ১০ অক্টোবর রায় দেন বিচারিক আদালত।
এই রায়ের বিষয়ে হাইকোর্টে আপিল মামলা শুনানির অপেক্ষায় আছে। বর্তমানে শুনানির জন্য পেপারবুক তৈরীর কাজ চলছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে সকল নেতা, কর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের আজ ‘গ্রেনেড হামলা দিবস’ যথাযথ মর্যাদায় পালনের আহব্বান জানিয়েছেন।
একইসাথে তিনি আওয়ামী লীগের সকল জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ সমস্ত শাখার নেতৃবৃন্দকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে দিবসটি স্মরণ ও পালন করার আহব্বান জানান। খবর বাসস’র