ভেজালমুক্ত খাবারের জন্য চাই আরেকটি যুদ্ধ

330


ভাত খাবো তাতে বিষাক্ত ক্রোমিয়াম, মাছ খাবো তা ফর্মালিনযুক্ত; ফলমূলে কার্বাইড মিশানো। দুধ খাব তাও নাকি এন্টিবায়টিক আর ডিটার্জেন্ট পূর্ণ। এসব ছাঁইপাশ খেয়ে অসুস্থ্য হয়ে ঔষধ খাব তাও মেয়াদউত্তীর্ণ আর মানহীন। দুঃখ, কষ্টে বিষ খাব তাতেও ভেজাল!তাহলে কোথায় যাব আমারা? কি খাব? সরকারই বলে দিক আমরা কোনটা খাব, আর কোনটা খাবনা।
ভেজালের এমন দৌরাত্ম্যের কারনেই ২৭ জুন রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ রিটেইল ফোরাম আয়োজিত ‘সুপারস্টোরে পণ্যের মান রক্ষণাবেক্ষণ’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ফাঁসিই ভেজালকারীদের শাস্তি হওয়া উচিত। কোথায় ভেজাল নেই। সবখাদ্যদ্রব্যে ভেজাল। এদেশের খাবার পানি তাও কিন্তু ভেজাল। ব্যবসায়ীরা গরুর খাদ্য ঘোষণায় মেয়াদোত্তীর্ণ শিশুখাদ্য আমদানি করছেন। নতুন মেয়াদের তারিখ বসিয়ে বিক্রি করছেন। ওরা শিশুদের গরুর খাদ্য খাওয়াতেও দ্বিধা করছেনা। এরা আসলে নীরব ঘাতক। নীরবে আমাদের দেশের মানুষকে হত্যা করছে। ফাঁসিই তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।
আমরা শিশুদের জন্য বিষাক্ত খাদ্য চাই না। আমরাও ভেজাল মুক্ত খাবার খেতে চাই। আমাদের কোনো ব্যবসায়ী কোনো ইন্ডাস্ট্রিতে ভেজাল খাদ্য তৈরি করবেন তা আমরা চাই না। দ্রুত বড়লোক হওয়ার নেশায় ভেজালে জড়াবেন না প্লিজ। আপনারা অধিক মুনাফা লাভের জন্য কিছুতেই তাকরতে পারে না। এদেশের মানুষকে বিষাক্ত খাবার খাইয়ে ব্যবসা করতে দেয়া হবে না। এটা বন্ধের ব্যবস্থা সরকারকে নিতেই হবে।
ভেজাল খাবার খেয়ে খেয়েতো আমাদের কারো কিডননি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, কারো ফুসফুস আক্রান্ত হচ্ছে। ক্যান্সার কিংবা অন্য কোন জটিল রোগে ভোগলেন স্বজনরা। নিজেও সুস্থ্য নই। ক্যান্সারে মারা গেছেন চাচা। বাড়ির পাশের শিশুটাও জটিল রোগে আক্রান্ত। রোগবালাই পেয়ে বসেছে আমাদের। মানুষ অকালে মারা যাচ্ছে। বিষ খেলে মানুষতো মরবেই। বেঁচে থাকার তাগিদেই প্রতিদিনই আমরা খাবার খাই। কিন্তু এই খাবারই যে আবার মানুষকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করছে সে খেয়াল কজনে রাখেন। আমরা আসলে কী খাচ্ছি? প্রতিদিন খাবারের নামেতো বিষ খাচ্ছি। বোধ করি বেঁচে থাকার জন্য; বিষমুক্ত খাবারের জন্য আমাদের আরেকটি যুদ্ধের প্রয়োজন।
আমরা খাবার খাচ্ছি, না বিষ খাচ্ছি? চারদিকে ফরমালিনের জয়জয়কার। মাছ, আম, জাম, কাঁঠাল, তরকারিতে কোথায় নেই এই জীবনহন্তারক ফরমালিন। তেলে ভেজাল, চালে এমনকি নুনেও ভেজাল। কেউ কেউ তো বলেনই বিষেও নাকি ভেজাল। তাই যা হওয়ার নয়, তাই হচ্ছে। কিডনি নষ্ট হচ্ছে, হচ্ছে হাইপ্রেসার, ক্যান্সার আর হার্টস্ট্রোকে অহরহ মরছে মানুষ। আমাদের অতি আদুরে সন্তানরা অকালে ঝরে যাচ্ছে এসব অখাদ্য-কুখাদ্য খেয়ে। প্রতিটি খাবারে মেশানো হচ্ছে বিষ। আর সেই বিষ খেয়ে আমরা আর বেঁচে নেই। জীবিত থেকেও লাশ হয়ে গেছি। এ যেন জিন্দা লাশ। রোগে-শোকে কয়েকটা দিন বেঁচে থাকা এই আর কি।
নামিদামি ব্র্যান্ডগুলোতেও আর আস্থা নেই দেশের মানুষের। নামিদামি ব্র্যান্ডগুলোর পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধসহ নানা পণ্য মানুষ বাড়তি দাম দিয়ে কিনে থাকে কেবল খাঁটি পণ্য পাওয়া যাবে এ আস্থায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, নামিদামি ব্র্যান্ডগুলোতেও আর আস্থা রাখা যাচ্ছে না। খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে শিশুখাদ্য, ফলমূল কিছুই নিরাপদ নয়। স¤প্রতি নানা অনুসন্ধানে বিভিন্ন নামি ব্র্যান্ডের পণ্য নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হওয়ার পর জনগণের মধ্যকার উদ্বেগ আমলে নিয়ে পরিস্থিতি কেমন তা খুঁজে বের করতে একটি অনুসন্ধান চালায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদ ও বায়োমেডিকেল রিচার্স সেন্টার। উদ্বেগের বিষয়, ওই পরীক্ষায় প্রাণসহ সাতটি কোম্পানির পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধে ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক ও ডিটারজেন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এছাড়া উভয় ধরনের ১০ প্রকারের দুধের নমুনায় ফরমালিনের উপস্থিতিও পাওয়া গেছে। শুধু দুধে নয়, ঘি, গুঁড়ো মরিচ, হলুদ, মসলা, সয়াবিন ও সরিষার তেল, ফ্রুট ড্রিংকস ও পামওয়েলও বিএসটিআইয়ের মানোত্তীর্ণ হতে পারেনি।
খাদ্যে ভেজালের মাত্র এতটা বেড়েছে যে, মানুষ এখন বিরক্ত হয়ে বলে ‘বিষ খাব? তাতেওতো ভেজাল। মরাও যাবে না শান্তিতে’। সভ্য সমাজে খাদ্যে ভেজালের বিষয়টি একেবারে অকল্পনীয়। কিন্তু আমাদের দেশে এটি নিয়তির লিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, কোথায় ভেজাল নেই, সেটি নিয়েই এখন গবেষণা করা দরকার। অনেকে ভেজাল খাদ্যের ভয়ে মানসিকভাবে আতঙ্কগ্রস্ত। জীবনরক্ষাকারী ওষুধেও চলছে ভেজাল। আমাদের দেশে ভেজালের যে সর্বগ্রাসী আগ্রাসন তাতে মনে করা যেতেই পারে একবিংশ শতাব্দীতে এসেও আমরা সভ্যতার মাপকাঠিতে এদিক থেকে জংলিযুগের চেয়েও পিছিয়ে আছি। কারণ আর যাই হোক, জংলিযুগের অধিবাসীরা ভেজালের মতো ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হওয়ার কথা ভাবতেও পারত না।
প্রশ্ন ওঠে, দেশে সরকার, পুলিশ প্রশাসন, আইন-আদালত থাকা সত্তে¡ও ভেজালের দৌরাত্ম্য কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না। ‘নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩’ হয়েছে তাতেও কিছুই এসে যায় না, ভেজালকারীদের। দাপট চলছেই। এভাবেই কি চলবে?
ভেজালের বিরুদ্ধে দেশে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়, সভা সেমিনা হয়; কিন্তু ভেজাল রোধ হয় না। এ বিষয়ে দেশে আইন আছে; সেই আইনে কারো কখনো শাস্তি হয় না। আমাদের রাজনৈতিক দল গুলো এ ব্যাপারে কখনোই সচেতন হয়ে ওঠেনা। জনগনও না। দেশে বছর জুড়েই নানা ইস্যুতে আন্দোলন হয়, হরতাল অবরোধ হয় কিন্তু ভেজালের বিরুদ্ধে কর্মসূচি দেয়া হয় না কখনো। আন্দোলনতো দুরের কথা ভেজালের বিরুদ্ধে টু শব্দটি করে না কেউ। তাঁরা (রাজনৈতিকগণ) চাইলে কয়েক মাসেই ৮০ থেকে ৯০ ভাগ খাদ্যে ভেজাল রোধ করা সম্ভব। প্রকৃতই ভেজালকারীদের সংখ্যা এত বেশী যে, ভেজালের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে আমাদের রাজনৈতিকদের উল্টো না ভেজালে জড়িয়ে পরতে হয় এ ভয়ে হয়তো তারা একদম রা..(শব্দ) করেন না। ফলে আজ ভেজাল খেয়ে আমাদের এ কি অবস্থা! হাসপাতাল গুলোতে কত ধরনের রোগবালাই নিয়েই না ছুটছে মানুষ। মানুষ যত না বাড়ছে তুলনামূলক হাসপাতালের সংখ্যা বাড়ছে। যে উপজেলায় আমার জন্ম সেখানে ১০ বছর আগে ২ লাখ লোকের জন্য ছিলো সরকারী বেসরকারি মিলিয়ে ২টি হাসপাতাল। এখন তিন লাখ লোকের জন্য হাসপাতাল গড়ে উঠেছে ১১টি। এ কথা সত্য যে ভেজাল খেয়ে মানুষ শুধু অসুস্থ্যই হচ্ছি না, প্রতিদিন মরছে অসংখ্য মানুষ। ভেজাল রোধ না হলে, খাদ্যে ভেজালের গতি এমনটাই যদি থাকে তাহলে যে হারে মানূষ মরবে তা শুধূ দেশবাসিকেই নয়, যারা সারা বিশ্বে স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছেন তাদেরও মাথা ব্যথার কারন হবে। প্রশ্ন হলো কি ভাবে ভেজাল রোধ করা যায়? মাত্র ৬ মাসের কর্ম পরিকল্পনায়ই ৮০ ভাগ ভেজাল মুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব বলে মনে করি। কিন্তু কি ভাবে?
(১) দেশে ভেজাল বিরোধি জাতিয় কমিটি গঠন করতে হবে। এ কমিটিতে সৎ এবং যোগ্য চলতি দায়িত্বে থাকা এবং অবসরপ্রাপ্ত আমলাগণ থাকবেন। অবসরপ্রাপ্ত সৎ ব্যক্তিদেরও এ কমিটির আওতাভুক্ত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে এক সময়ে রাজধানী ঢাকার ভেজালের বিরুদ্ধে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ম্যাজিষ্ট্রেট রোকন-উ-দৌলাকে বেশী কাজে লাগানো যেতে পারে। তিনি অল্প সময়ে ভেজালকারীদের হৃদপিন্ডে কম্পন ধরাতে সক্ষম হন। রাজনৈতিক কারনে তার সফল উদ্যোগ আর সামনে এগুয়নি। তিনি যেহেতু এ বিষয়ে সফল এবং অভিজ্ঞ তাঁকে সারা দেশের ভ্রাম্যমান টিম পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। আর এ দায়িত্ব হতে হবে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত।
(২) খাদ্যে ভেজালে জড়িতদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করতে হবে। সে সঙ্গে অপরাধীদের ধরে সাজা নিশ্চিত করতে হবে।
(৩) প্রকাশ্যে সাজার ব্যবস্থা করতে হবে। সাজা হতে হবে শাররিক এবং আর্থিক।
(৪) বর্তমানে বিতর্কিত র‌্যাবকে ভেজালের বিরুদ্ধে অতিরিক্তি দায়িত্ব দিয়ে ৬ মাস মাঠে রাখা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভেজালের বিরুদ্ধে র‌্যাবকে মূল ভ‚মিকায় রাখা যেতে পারে। র‌্যাব সদস্যদের ভেজাল রোধে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিশেষ সপথ বাক্য পাঠ করানো যেতে পারে।
(৫) ৬ মাস প্রতিটি উপজেলায় ভ্রাম্যমান আদালত কার্যকর থাকতে হবে। ভ্রাম্যমান আদালত ভেজাল বিরোধী জাতিয় কমিটি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। ভ্রাম্যমান আদালতে একজন ম্যাজিষ্ট্রেটের পাশাপাশি র‌্যাব ভ‚মিকা রাখবে। এতে কেবল ভেজালই রোধ হবে না, ভেজাল রোধ হলে দেশবাসীর বিতর্কিত র‌্যাবেরও বাহবা মিলবে। র‌্যাবের বর্তমান সময়ের বিতর্কিত অবস্থা লাঘব হবে। সহসাই দুর্নাম ঘুচিয়ে জনবান্ধব হয়ে উঠবে র‌্যাব।
(৬) অন্য কোন ইস্যুতে যেহেতুক সম্ভব নয়, অন্তত দেশের ১৬ কোটি মানুষের স্বাস্থ্য এবং জীবনের কথা ভাবনায় এনে আমাদের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের দু’নেত্রী ভেজালের ব্যাপারে প্রথমে ঔক্যমত হতে হবেন। মাত্র ৬ মাস তাঁরা এ বিষয়ে অন্তত সভা সেমিনার বৈঠক এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন। তা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেবে সরকার। অন্যন্য দলীয় রাজনৈতিকদেরও তাতে সম্পৃক্ত করতে হবে। সকল দলই দলীয় অন্যন্য কর্মসূচির পাশাপাশি ভেজালের বিরুদ্ধে অন্তত ৬ মাস মাঠে সরব থাকবেন। এ অবস্থায় ভেজাল রোধ হবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি।
প্রতি দিন আমরা যে খাবার খাচ্ছি তাতে যে কোন এক মাত্রায় বিষ মেশানো আছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এই বিষই আমাদের তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে নিচ্ছে। কেবল হাসপাতাল গুলোতে গেলেই বুঝা যায় কত প্রকার রোগই না এখন মানব দেহে ভর করে আছে। আসলে আমরা জেনে শুনেই বিষ খাচ্ছি। না খেয়ে উপায়ইবা কি? তবে উপায় একটা আছে। না খেয়ে থাকলে এ থেকে যেন নিস্তার মিলবে। কিন্তু তাতো হবার নয়। তাই আমে , মাছে, সবজিতে বিষ মেশানো আছে জেনেও তা কিনে নিচ্ছি। আর সেই বিষ মেশানো খাবার গুলোই স্বপরিবারে গিলে চলেছি দিন রাত।
এদেশে ভেজাল ঠেকাতেই বিএসটিআই (বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন) জনস্বার্থে প্রতিষ্ঠানটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ বিভাগটির সুফল আশান্বিত হবার মতো নয়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, ভেজাল ও অননুমোদিত খাদ্যসামগ্রী উৎপাদন ও বিক্রির দায়ে বিএসটিআই মাঝে মধ্যে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। আদায় করে লাখ লাখ টাকা জরিমানাও।কিন্তু তাদের এ কর্মকান্ড অনেকটাই লোক দেখানোর মত। ভেজালের দায়ে অভিযুক্ত বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই জরিমানা পরিশোধ পর সবাইকে ম্যানেজ করে আবারও সেই একই অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা এর জন্য বিএসটিআইকেই দায়ী বলে মনে করেন। নিধিরাম সর্দারের মতো শুধু মামলা দায়ের ও জরিমানা আদায়ের মধ্যে সীমিত হয়ে পরেছে প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা। ফলে ভেজালের কারবারীরা ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এতোদিন মাছে ফরমালিন মিশানো হতো। এখন শিশুদের প্রধান খাদ্য দুধেও নির্বিচারে ফরমালিন মিশানো হচ্ছে। দীর্ঘদিন যাবৎ প্রকাশ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশিয়ে পাকানো হচ্ছে আম, কাঠাল ও কলা। আর শুঁটকিতে স্প্রে করা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী নিষিদ্ধ ‘ডার্টি ডজন’ পরিবারভুক্ত কীটনাশক ডিডিটি।আইসক্রিমসহ লোভনীয় সব মিষ্টি তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে চামড়া ও অন্যান্য শিল্পে ব্যবহৃত বিপজ্জনক রং ও রাসায়নিক। বেকারি পণ্যে মিশানো হচ্ছে গাড়ির পোড়া মবিল আর মশলায় ইটের গুঁড়া। আর বাসি ও মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যসামগ্রীর ছড়াছড়ি তো দেশের সর্বত্রই।
ভেজাল খেয়ে কিডনি নষ্ট হচ্ছে; হচ্ছে হাই প্রেসার; ক্যান্সার আর হার্ডষ্টোকে অহরহ মরছে মানুষ। আমাদের অতি আদুরে সন্তানেরা অকালে ঝরে যাচ্ছে এসব অখাদ্য কুখাদ্য খেয়ে। প্রতিটি খাবারে মেশানো হচ্ছে বিষ। আর সেই বিষ খেয়ে আমরা আর বেঁচে নেই। জীবিত থেকেও লাশ হয়ে গেছি। এ যেন জিন্দা লাশ। রোগে শোকে কয়েকটা দিন বেঁচে থাকা এই আরকি। প্রতিনিয়তইতো বিষ খাচ্ছি। ক’দিন আগে এক বিখ্যাত কলামিষ্ট তার লেখায় লিখেছিলেন- আমরা প্রতি জনে; প্রতি ক্ষনে; জেনে শুনে করেছি বিষ পান। আরেক জন লিখেছেন- ‘কত কিছু খাই ভস্ম আর ছাই’।
জাতীয় দৈনিকের শিরোনাম ছিল এমন ‘মাছের বাজারে মাছি নেই, ফলে মাছি নেই’। প্রতিদিন আমরা যে খাবার খাচ্ছি তাতে কোনো এক মাত্রায় বিষ মেশানো আছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এ বিষই আমাদের তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে নিচ্ছে। কেবল হাসপাতালগুলোয় গেলেই বোঝা যায় কত প্রকার রোগই না এখন মানবদেহে ভর করে আছে। আসলে আমরা জেনেশুনেই বিষ খাচ্ছি। না খেয়ে উপায়ই বা কী? তবে উপায় একটা আছে। না খেয়ে থাকলে এ থেকে যেন নিস্তার মিলবে। কিন্তু তা তো হওয়ার নয়। তাই আমে, মাছে, সবজিতে বিষ মেশানো আছে জেনেও তা কিনে নিচ্ছি। আর সেই বিষ মেশানো খাবারগুলোই সপরিবারে গিলে চলেছি দিনরাত।
ভেজালের এ অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। ভেজালের বিরুদ্ধে দেশ ব্যাপী আমজনতা, প্রশাসন, সংশ্লি­ষ্ট বিভাগের সবাই মিলে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে। জনস্বাস্থ্য নিয়ে অবহেলা প্রদর্শনের কোনই সুযোগ নেই। এ অবস্থায় সর্বতোভাবে তৎপর হতে হবে দেশের আমজনতা, রাজনৈতিক, বিএসটিআইসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে। সর্বোপরি গণমাধ্যমসহ ব্যাপক জনসচেতনতাও প্রত্যাশিত। তবেই হয়তো ভেজাল থেকে রেহাই মিলবে।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিষ্ট, গবেষক