ভাসানচরে রোহিঙ্গা পুনর্বাসন উদ্যোগ সফল হোক

55

সকল প্রতিবন্ধকতা ও জল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের একটি দল স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ১ম দফায় ৩শতাধিক রোহিঙ্গা ১০টি বাসে করে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলো ওই দিন বিকালেই ভাসানচরে পৌছে যায়। গতকাল শুক্রবার রওনা হয় আরো ৩হাজার রোহিঙ্গা। এ ছাড়া বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে বেশ কিছু রোহিঙ্গা ভাসানচর এলাকায় যেতে ট্রানজিট পয়েন্টের পথে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন করতে নিরাপত্তাসহ সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে প্রত্যাবাসন কর্তৃপক্ষ। সূত্র মতে, স্বেচ্ছায় যারা যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তাদের পাঠানোর মাধ্যমেই এ স্থানান্তরপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কক্সবাজারের উখিয়া- টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যেতে উখিয়া কলেজ মাঠে অস্থায়ী ট্রানজিট পয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে। মাঠে একাধিক কাপড়ের প্যান্ডেল ও বুথ তৈরি করা হয়েছে। এককথায় রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপক আয়োজন চোখে পড়ার মতো ছিল। সরকার গত ৩ বছর ধরে কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে সর্বশেষ সহসাত তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় মূলত বিকল্প অস্থায়ী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে আমাদের ধারণা। এছাড়া দেশের বৃহত্তর পর্যটন এলাকা কক্সবাজার জেলার উখিয়া, টেকনাফ ও রামু এলাকায় ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ফলে পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে অবসতি ঘটছে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আশ্রয় ও আবাসন নিশ্চিত করতে ভাসানচরে তাদের পুর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়। তথাকথিত আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা নানা অজুহাতে এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে বাধ সাধলেও সর্বশেষ রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর উদ্যোগ শুরু হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বেষ ফেলছে সরকার। একইসাথে কক্সবাজারবাসীও এ খবরে আনন্দিত। সূত্র জানায়, ইতোপূর্বে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর কার্যক্রম ঘিরে ভাসানচর দ্বীপ ঘুরে আসে ২২টি এনজিওর প্রতিনিধিদল। ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের জন্য মজুদ করা হয়েছে প্রায় ৭০ টন খাদ্যসামগ্রী। বিভিন্ন ক্যাম্পের মাঝিরা জানান, অনেক রোহিঙ্গা পরিবার স্বেচ্ছায় ভাসানচর যেতে উদ্যোগী হচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের ভাসানচর নেয়ার আগে ২২টি এনজিওর প্রতিনিধিরা ভাসানচর পরিদর্শন করে সরকারের পরিকল্পিত আয়োজনে সন্তোষ প্রকাশ করেন। রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেয়ার বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তারা। সমপ্রতি দ্বীপটি ঘুরে দেখে গেছে পালস বাংলাদেশ সোসাইটি, কুয়েত সোসাইটি ফর রিলিফ, ফ্রেন্ডশিপ, এসএডব্লিউবি, শারজাহ চ্যারিটি ইন্টারন্যাশনাল: বাংলাদেশ, গ্লোবাল উন্নয়ন সংস্থা, আল মানাহিল ওয়েলফেয়ার, সনি ইন্টারন্যাশনাল, আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন, হেলথ দ্য নিডি চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, জনসভা কেন্দ্র, কারিতাস বাংলাদেশ, সমাজকল্যাণ উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস), সোশ্যাল এইড, সিডিডি, মুক্তি-কক্সবাজার, ভলান্টারি অরগানাইজেশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট, আর টি এম ইন্টারন্যাশনাল, মাল্টি সার্ভ ইন্টারন্যাশনাল, আল্লামা ফয়জুল্লাহ ফাউন্ডেশন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন ফর অল। এসব এনজিও সেখানে কাজও শুরু করেছে। এ দিকে দীর্ঘদিন ধরে প্রচার পেয়ে আসছে এক লাখ রোহিঙ্গা ভাসানচরে যাচ্ছে। অবশেষে এর যাত্রা শুরু হওয়ায় উখিয়া-টেকনাফের সাধারণ মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
নোয়াখালীর হাতিয়ায় সাগরের মাঝে ভেসে থাকা ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য সব ধরনের সুযোগ সুবিধা সংবলিত ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ঝড় জলোচ্ছ¡াস থেকে সুরক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থাও রয়েছে। বসবাসের যে ব্যবস্থা করা হয়েছে তা দেখতে গত সেপ্টেম্বরে দুই নারীসহ ৪০ রোহিঙ্গা নেতাকে সেখানে নিয়ে যায় সরকার। তারা ভাসানচরের আবাসনব্যবস্থা দেখে মুগ্ধ হন। তারা ক্যাম্পে ফিরে অন্যদের ভাসানচরে যেতে উদ্বুদ্ধ করে। দু’বছর আগে সরকার ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিš‘ তাদের অনিচ্ছার কারণে তা সম্ভব হচ্ছিল না।
ভাসানচরে যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের অনেকে জানান, তারা ভাসানচর পরিদর্শন শেষে ফিরে আসা রোহিঙ্গা নেতাদের মুখে সেখানকার বর্ণনা শুনে বসবাস করতে যেতে রাজি হয়েছেন। তাদের মতে পাহাড়ের ঘিঞ্জি বস্তিতে বসবাসের চেয়ে ভাসানচর অনেক নিরাপদ হবে। এ ছাড়া ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য নির্মিত অবকাঠামো অনেক বেশি আধুনিক সুযোগসুবিধা সংবলিত মনে হয়েছে তাদের। কোনো বলপ্রয়োগ ছাড়াই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে যাওয়ার ইতিবাচক মনোভাব দেখে তাদের সেখানে পাঠানোর বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয় সরকার। রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটিকে নিরাপদে ভাসানচরে পাঠাতে পারলে আরো অনেক পরিবার সেখানে যেতে আগ্রহী হবে বলে সরকার আশাবাদী। আমরাও আশা করি, সর্বশেষ সরকার প্রয়োজনীয় সংক্যক রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে প্রত্রাবাসন করতে সক্ষম হবে। তবে তাদের নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থান যথাযথভাবে অব্যাহত রাখার প্রতি সর্বদা মনোযোগী থাকতে হবে।