ভারতের সঙ্গে ‘রক্তের রাখীর’ বন্ধন : কাদের

40

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যমান সম্পর্ককে ‘রক্তের রাখীর বন্ধন’ বলে অভিহিত করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ভারতীয় ঋণের আওতায় নেওয়া দু’টি প্রকল্প বাস্তবায়নে গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতীয় ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন। ঢাকার র‌্যাডিসন হোটেলে এই অনুষ্ঠানে ভারতের হাই কমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাশও ছিলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক মহান মুক্তিযুদ্ধের রক্তের রাখীর বন্ধনে আবদ্ধ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত যে সারা দুনিয়ায় সলিডারিটি ক্যাম্পেইন করেছে, তা আমাদের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধ শেষে চলমান সম্পর্কে কখনও কখনও
টানাপোড়েনও ছিল। কিন্তু একথা আজ অস্বীকার করার উপায় নেই যে দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে আমরা সেই সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছি। আমাদের পারস্পরিক অবিশ্বাসের যে দেয়াল ছিল তা আমরা ভেঙে ফেলেছি। সম্পর্কের নতুন যাত্রা আমরা শুরু করেছি’।
এজন্য দুই দেশের সরকার প্রধানদের কৃতিত্ব দিয়ে কাদের বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা এবং ভারতের জননন্দিত প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ডায়নামিক ক্যারিশমাটিক লিডারশিপের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে’।
ছিটমহল বিনিময়ের প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেন, ‘সারা দুনিয়ার কোনো ছিটমহল বিনিময় এতো শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে বলে আমার জানা নেই। অথচ খুব অল্প সময়ের মধ্যে আশ্চর্য দ্রুততায় ছিটমহলগুলো বিনিময় বিশাল অর্জন’। খবর বিডিনিউজের
প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে এখনও অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে তিনি বলেন, ‘বিরাজমান কিছু সমস্যা আছে, সেখানেও আমরা যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছি। কোনো সমস্যাই সমাধানের অনতিক্রম্য নয় বলে আমরা মনে করি না। বিশেষ করে যখন দুই প্রধানমন্ত্রীর বোঝাপড়া খুবই ভালো’।
অনুষ্ঠানে রীভা গাঙ্গুলী সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ভারত বর্তমানে বাংলাদেশকেই সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিচ্ছে।
অনুষ্ঠানে ভারতীয় দ্বিতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় একটি প্রকল্পের দুই প্যাকেজের বিজয়ী দরদাতা ভারতীয় কোম্পানি এফকন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এর সঙ্গে চুক্তি সই হয়। রীভা গাঙ্গুলী বলেন, ‘ভারতীয় দ্বিতীয় এলওসির আওতায় আজ দুটি প্রকল্পের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর হচ্ছে। আমরা যথাযথভাবে মান সম্পন্ন উপায়ে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করবো’।
চুক্তিকৃত প্রকল্পটি হচ্ছে আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থল বন্দর মহাসড়ককে ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প। এ সড়কের ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হবে। এ প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ৩ হাজার ৫৬৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এরমধ্যে ভারতীয় দ্বিতীয় এলওসি থেকে জোগান দেওয়া হবে ২ হাজার ২৫৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা আর বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে ১ হাজার ৩১২ কোটি টাকা।
ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এ প্রকল্পটির ১নং প্যাকেজে আশুগঞ্জ নদীবন্দর হতে সরাইল পর্যন্ত ১২ দশমিক ২১ কিলোমিটার সড়ক চার লেইনে উন্নীত করবে। প্রকল্পটির এই প্যাকেজটি ৫৭২ কোটি ৪৫ লাখ টাকায় বাস্তবায়ন করবে। আর এ প্রকল্পটির দ্বিতীয় প্যাকেজে সরাইল হতে ধরখার পর্যন্ত ২৭ দশমিক ০৫৪ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৭৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। দু’টি প্যাকেজ মিলে আশুগঞ্জ হতে ধরখার পর্যন্ত ৩৯ দশমিক ২৬ কিলোমিটার সড়ক চার লেইনে উন্নীত করা হবে মোট ২ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকায়।
ভারতীয় কোম্পানি জেভি অব রাইটেসের সঙ্গে ১১৭ কোটি টাকার কনসালটেন্সি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম, এসময় ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।