‘ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে সতর্ক হওয়া উচিত’

27

ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে আন্তর্জাতিক সআম্প্রদায়ের সতর্ক হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। কেননা, এটি কোনোভাবেই আঞ্চলিক বিষয় নয়, বরং একটি সামগ্রিক সমস্যা। রবিবার টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এমন মন্তব্য করেন। আরেক টুইটে ভারতকে অ্যাডলফ হিটলারের নাৎসি জার্মানির সঙ্গে তুলনা করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। হিটলারের মতাদর্শের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির আদর্শের মিল রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের পারমাণবিক বোমার নিয়ন্ত্রণ ফ্যাসিবাদী ও বর্ণবাদী হিন্দু শ্রেষ্ঠত্ববাদী মোদি সরকারের হাতে। ফলে দেশটির পারমাণবিক অস্ত্রাগারগুলোর নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি বিশ্বকে অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।
ইমরান খান বলেন, নাৎসিরা যেভাবে জার্মানির দখল নিয়েছে একইভাবে ভারতের দখল নিয়েছে একটি ফ্যাসিবাদী, বর্ণবাদী হিন্দু শ্রেষ্ঠত্ববাদী দর্শন। এই দর্শন দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে কাশ্মিরের ৯০ লাখ মানুষকে অবরুদ্ধ অবস্থার হুমকিতে ফেলেছে। এ ঘটনায় সমগ্র বিশ্বকে সজাগ হওয়া উচিত। সেখানে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক পাঠানো প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ভারতের হুমকি কাশ্মির ছাড়িয়ে পাকিস্তান পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে। ভারতীয় মুসলিমরাও এ হুমকিতে রয়েছে। যে কেউ গুগলে সার্চ দিয়ে হিটলারের নাৎসি মতবাদ ও জাতিগত নিধনযজ্ঞের সঙ্গে আরএসএস-বিজেপির প্রতিষ্ঠাতাদের গণহত্যার দর্শনের মিল খুঁজে পাবেন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে ভারতের ৪০ লাখ মুসলিম নাগরিকত্ব হারানো ও বন্দিশিবিরের মুখোমুখি হওয়ার পরিস্থিতিতে রয়েছেন। বিশ্বকে অবশ্যই এই ঘৃণা ও গণহত্যার দানব থেকে সজাগ থাকতে হবে। আরএসএস গুÐাদের তাÐব থেকে সতর্ক থাকতে হবে। এদের থামাতে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় এখনই উদ্যোগী না হলে এই মতাদর্শ আরও ছড়িয়ে পড়বে।
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে অঞ্চলটিকে দুই টুকরো করে দেয় দিল্লি। ওই দিন সকাল থেকে কার্যত অচলাবস্থার মধ্যে নিমজ্জিত হয় দুনিয়ার ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মির উপত্যকা। জম্মু-কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির মেয়ে ইলতিজা জাভেদের ভাষায়, ‘বাকি দেশ যখন ভারতের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছে তখন কাশ্মিরিরা খাঁচার প্রাণীর মতো বন্দি রয়েছে। বঞ্চিত হচ্ছে মৌলিক মানবাধিকার থেকে।’
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের হিসাব অনুযায়ী, ভারত অধিকৃত জম্মু-কাশ্মিরে গত ৫ আগস্ট থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত অন্তত চার হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের বেশিরভাগকেই কাশ্মিরের বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কারণ সেখানকার কারাগারগুলোতে বন্দি ধারণের আর কোনও জায়গা নেই। উপত্যকার রাস্তায় রাস্তায় নজরদারি চালাচ্ছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাজার হাজার সদস্য। ইন্টারনেট-মোবাইল পরিষেবায় আরোপ করা হয়েছে বিধিনিষেধ। নাগরিকদের সাধারণ চলাচলের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪০ লাখেরও বেশি ভারতীয়, যাদের বেশিরভাগই মুসলমান; ভারত সরকার তাদের দেশটিতে অবৈধ অভিবাসী ঘোষণা করতে পারে। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এমন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী দরিদ্র আসাম রাজ্যে অভিবাসীদের চিহ্নিত করার মধ্য দিয়ে এই এজেন্ডা বাস্তবায়ন শুরু হচ্ছে। যেসব বাসিন্দার নাগরিকত্ব যাচাই করা হচ্ছে তাদের অনেকেরই জন্ম ভারতে এবং এতোদিন ধরে তারা নির্বাচনে ভোট দেওয়াসহ সব ধরনের নাগরিক অধিকার ভোগ করে আসছিলেন। নাগরিক তালিকা নিয়ে বিরোধ মীমাংসা করতে রাজ্য সরকার ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং নতুন বন্দিশিবির গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে মোদি সরকার।