বৈধ প্রতিষ্ঠানও ‘অবৈধ পণ্য’ উৎপাদনে!

73

শুধুমাত্র অনুমোদিত কারখানাতেই পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পন্নের নিয়ম। একই প্রতিষ্ঠানের একাধিক কারখানা থাকলে সবগুলোর আলাদা আলাদা অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু একটির অনুমোদন নিয়ে একাধিক কারখানা গড়ে তোলা এবং অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে অন্য কারখানায় নকল পণ্য উৎপাদন হচ্ছে নগরীর বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে। নিয়ম অনুযায়ী অনুমোদনের বাইরে থাকা কারখানা বা অন্য প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করা অবৈধ। তবে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হিসাবে বিএসটিআই এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো বিভিন্নভাবে অবৈধ প্রতিষ্ঠানকে সহায়তার অভিযোগ আছে সংস্থাটির বিরুদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যাটালি রোড গোয়ালপাড়া এলাকায় বেকারি পণ্য উৎপাদনের অনুমতি নেয় সিরাজ ফুড। বর্তমানে সিরাজ ফুড আসকারদিঘি, কদমতলীসহ বিভিন্ন স্থানে ৬টি শো-রুম খুলে ব্যবসা করছে। প্রতিষ্ঠানটি অবৈধভাবে খুলশী এলাকায় আরো একটি কারখানায় উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে। একইভাবে চান্দগাঁও পাঠানিয়াগোদা এলাকার লাইসেন্স নিয়ে বেকারি পণ্য উৎপাদন করছে হাসান বেকারি। প্রতিষ্ঠানটি বহদ্দারহাট এলাকায় আরো একটি কারখানা স্থাপন করে পণ্য উৎপাদন করছে। আগ্রাবাদ কলাবাগান দিঘিরপাড়ে কারখানার অনুমতি নেয় মাসাফি ড্রিংকিং ওয়াটার। প্রতিষ্ঠানটির আরো একটি কারখানা আছে আগ্রাবাদ পাঠানটুলী খান সাহেব স্কুলের পাশে। নগরীতে এরকম অন্তত ডজনখানেক প্রতিষ্ঠান এক জায়গায় পণ্য উৎপাদনের অনুমতি নিয়ে একাধিক স্থানে কারখানা স্থাপন করে পণ্য উৎপাদন করছে। এনায়েত বাজার এলাকায় ড্রিংকিং ওয়াটারের লাইসেন্স নেয় রাহীব ড্রিংকিং ওয়াটার নামের একটি প্রতিষ্ঠান। একই প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে খুলশী মূরগী ফার্ম এর পাশে আরো এক ব্যক্তি রাহীব ড্রিংকিং ওয়াটার উৎপাদন ও বিক্রি করে আসছে। বিষয়টি নিয়ে গত মঙ্গলবার বিএসটিআই চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ে অভিযোগ করেন রাহীব ড্রিংকিং ওয়াটার এর স্বত্ত¡াধিকারী। বিএসটিআইয়ের তদারকির দুর্বলতা এবং কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশের কারণে এভাবে অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলো দেদারসে ব্যবসা করে যাচ্ছে। পক্ষান্তরে নানাভাবে ঠকছেন ক্রেতারা। অন্যদিকে বৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিনিয়ত নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বিএসটিআইয়ের কাছে। অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অনেকে বৈধ প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করছে। আর বিএসটিআই এর দায় বৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর চাপাচ্ছে।
বিএসটিআইয়ের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাহীব ড্রিংকিং ওয়াটারের স্বত্ত¡াধিকারী আবদুল আজিজ বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে খুলশী থেকে এক ব্যক্তি অবৈধভাবে পানি উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। তারা আমার প্রতিষ্ঠানের নাম, স্টিকার সবই ব্যবহার করছে। এতে আমার প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। বিষয়টি আমি বিএসটিআইকে লিখিত অভিযোগ করেছি। আশা করি, বিএসটিআই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবে।
এ বিষয়ে বিএসটিআই চট্টগ্রামের পরিচালক মো. সেলিম রেজা বলেন, রাহীব ড্রিংকিং ওয়াটার কারখানার অভিযোগটি আমি পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিয়ম হচ্ছে, কারখানায় ঠিকানায় পণ্য উৎপাদন করতে হবে। এক জায়গায় অনুমতি নিয়ে অন্য জায়গায় পণ্য উৎপাদন করা যাবে না। অন্য জায়গায় উৎপাদন করতে হলে আলাদাভাবে অনুমতি নিতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে সেটা অবৈধ হবে। অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান আছে আমরা সে ব্যবস্থা নিব।
এ প্রসঙ্গে ক্যাব চট্টগ্রামের সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, এক জায়গার অনুমোদন নিয়ে একাধিক জায়গায় উৎপাদন করা বা একই নাম ব্যবহার করে অন্যজন ব্যবসা করা অবৈধ। বিএসটিআইয়ের নজরদারির অভাবে এই কাজটি করে যাচ্ছে কিছু প্রতিষ্ঠান। এ ধরনের কাজ খুবই দুঃখজনক। বিএসটিআই সুযোগ না দিলে এমন কাজ করতে পারার কথা না। আমরা বিএসটিআই থেকে অনেকবার তালিকা চেয়েছি। বিএসটিআই আমাদের কখনো এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের তালিকা দেয়নি। সর্ষের মধ্যে ভূত থাকতে পারে। এমন না হলে তারা অন্তত তালিকা সরবরাহ করার কথা।
সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রামের ৯টি পানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায়। অভিযানে একটি কারখানার অনুমোদন নিয়ে একাধিক কারখানা স্থাপনের বিষয়টি উঠে আসে। দুদক টিম মাসাফি ড্রিংকিং ওয়াটার কারখানায় অভিযান চালানোর পর জানতে পারে আগ্রাবাদ কলাবাগান এলাকায় প্রতিষ্ঠানটি অনুমাদন নিলেও অবৈধভাবে আগ্রাবাদ পাঠানটুলী খান সাহেব স্কুলের পাশে আরো একটি কারখানা পরিচালনা করছে। এরপর থেকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের একাধিক কারখানা থাকার বিষয়টি নজরে আসতে থাকে।