বেড়ে গেছে অগ্নিকান্ডের ঘটনা নেপথ্য কারণ উদঘাটনসহ সচেতনতা জরুরি

65

শীত মৌসুমে প্রকৃতির মধ্যে একটা শুষ্কভাব বিরাজ করে। এসময় ধূলোবালির পাদুর্ভাব যেমন বেড়ে যায়, অনুরূপ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ বিভিন্ন বস্তি, কলোনি, দোকানপাট ও মার্কেটে অগ্নিকান্ডের ঘটনাও ঘটে। অগ্নিকান্ডের নিঃস্ব হওয়া মানুষগুলোর মধ্যে ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা বা এজাতীয় নানা সন্দেহ-সংশয়ের উদ্বেক হলেও বাস্তবে বৈদ্যুতিক ত্রুটি, গ্যাস সিলিন্ডার, সিগারেট, মশার কয়েল ইত্যাদি থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রাপাত ঘটে। তাৎক্ষণিক এ অগ্নিকান্ড বন্ধ করতে না পারলে শুষ্ক প্রকৃতির প্রভাবে এ অগ্নিকান্ড ভয়াবহ রূপ নেয়। সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরীতে বেশকয়েকটি ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত, মর্মাহত। মঙ্গলবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, মাত্র একসপ্তাহের ব্যবধানে চট্টগ্রামে তিনটি এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। তিনদিন আগে শুলকবহরের ডেকোরেশন গলির ছাত্তার-হুমায়ুন কলোনি থেকে রহস্যের আগুনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির রেস না শুকাতেই পুড়ে ছাই হল নগরীর মাদারবাড়ির রেলওয়ের জায়গায় গড়ে উঠা এসআরবি বস্তি। সংঘটিত এ অগ্নিকান্ডের বস্তির অন্তত দুইশ কাঁচা ঘর একনিমিষেই কয়লা আর ছাই-ভস্মের স্তূপে পরিণত হল। দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা। অগ্নিদুর্গতদের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের বক্তব্য, ভোরবেলা যখন আগুন লাগে তখন বস্তির সকলেই প্রায় ঘুমের মধ্যে ছিল। কোন ঘরে চুলা জ্বালানো হয়নি। তাদের অভিযোগ, বাইরে থেকেই পরিকল্পিতভাবে বস্তিতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। আগুন লাগার পর চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হলে ঘুমের ঘোর নিয়েই সকলে প্রাণ বাঁচাতে বাইরে বেরিয়ে পড়েন। ঘরের জিনিসপত্র রক্ষার সুযোগ মিলেনি। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ অগ্নিকান্ডের ঘটনার সূত্রপাত তাৎক্ষণিক নির্ণয় করতে পারে নি, তবে তাদের দাবি তদন্ত করে মূল রহস্য উদঘাটন করা হবে।
উল্লেখ্য, চলতি শীত মৌসুমে মাত্র দশদিনের ব্যবধানে একই জায়গায় দুই কলোনি ও একটি বস্তিতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি সকাল সাড়ে দশটায় নগরীর ঘনবসতিপূর্ণ শুলকবহরের ডেকোরেশন গলির শেষ মাথায় বাবু কলোনিতে টিনশেড ঘরগুলোতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। আমরা মনে করি, অগ্নিদুর্গত মানুষগুলোর অভিযোগ তদন্ত করা জরুরি। আর যদি বৈদ্যুতিক সর্টসার্কিট বা অন্য কোন কারণে হয়ে থাকলেও তারও বিহিত ব্যবস্থা করতে হবে। এর আগে আমরা মনে করি, বাস্তুহারা নিঃস্ব মানুষগুলোর মাথাগুজার ব্যবস্থা করা মানবিক দাবি। এতগুলো মানুষ কোথায় যাবে, কী খাবে? স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারের পক্ষ থেকে লোকগুলোর পুনর্বাসনের জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে-এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।
অগ্নিকান্ড সংঘটিত হবার পর ফায়ার সার্ভিস এসে অগ্নি নেভানোর ব্যবস্থা করতে করতে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হতে দেখা যায়। ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে যে পরিমাণ পানি মজুদ থাকে তা শেষ হয়ে গেলে আশেপাশে পুকুর জলাশয় না থাকলে অনেক দূর থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। অনেক সময় পানি সংগ্রহ করতে করতে আগুনে ভষ্ম হয়ে যায় আক্রান্ত স্থান বা স্থাপনা। এক সময় নগরীর বিভিন্ন স্থানে দিঘি, পুকুর, জলাশয় ছিল। অতিনগরায়নের ফলে দিঘি, পুকুর, জলাশয় ভরাট হয়ে গেছে। সামান্য বস্তি এলাকায় আগুন ধরলে আশেপাশের মানুষের পক্ষে আগুন নেভানো সম্ভব হয়ে ওঠে না পানির অভাবে। অনেক ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের জায়গাও থাকেনা। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে চট্টগ্রাম মহানগরীর মানুষ শুষ্ক মৌসুমে ঝুঁকির মধ্যেই থাকছে।
অগ্নিকাÐ নিয়ন্ত্রণের প্রধান পন্থা হলো জনসচেতনতা। আমরা যে যেখানে আছি, জীবনযাত্রায় সতর্কতা অবলম্বন করলে অগ্নিকাÐের ভয়াবহ ক্ষতি থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি। গ্যাসের চুলা রান্নার পর বন্ধ করতে হবে রান্নাকারীর নিজ দায়িত্বে। জ্বালানি কাঠের চুলা ভালো করে পানি দিয়ে নিভাতে হবে রান্না শেষ হলে। ধূমপায়ীদের ধুমপানের পর তার শেষাংশ ভালোভাবে নিভিয়ে দিয়ে নিরাপদ স্থানে ফেলতে হবে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদ্যুতের ঝুঁকিপূর্ণ সঞ্চালন লাইন মেরামত করে স্বাভাবিক রাখতে হবে। বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা রাখতে হবে নিরাপত্তার স্বার্থে। অগ্নিকান্ডের ক্ষতি এড়াতে দেশের সকল জনগণকে মাঘ থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত এই শুষ্ক মৌসুমে খুবই সতর্কতার সাথে অগ্নির ব্যবহার করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে জনসচেতনতাই পারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড থেকে আমাদের রক্ষা করতে।