বিএনপি-জামায়াতে গ্রেপ্তার আতঙ্ক

47

বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে গ্রেপ্তার আতংক। নগরী ও জেলায় নাশকতা-সহিংসতার ২৬০ মামলার জ্ঞাত-অজ্ঞাতনামা প্রায় ১৫ হাজার আসামির সকলেই এ দুই দলের নেতাকর্মী। শীর্ষ কয়েকজন ছাড়া বাকিরা পুলিশের খাতায় ‘পলাতক’। পুলিশের অভিযানে গত এক সপ্তাহে গ্রেপ্তার হয়েছে ৬০ জন। সর্বশেষ গতকাল শনিবার সাবেক কাউন্সিলর সবুক্তগীন মক্কীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আগের রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে নগর বিএনপি নেতা টিংকু দাশকে। পটিয়ায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৫ জন। গ্রেপ্তারের কারণে বিএনপি প্রার্থীদের প্রচারণায়ও এক প্রকার ভীতি রয়েছে। অপরদিকে পুলিশ বলছে, মামলার সুনির্দিষ্ট আসামি ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। নির্বাচনে সহিংসতারোধে নাশকতার মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
জানা যায়, নগরী ও জেলায় নাশকতা ও সহিংসতার ২৬০টি মামলা রয়েছে। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধ-হরতালে গাড়ি ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নগরীর ১৬ থানায় নাশকতা আইনে ১২০টি ও জেলায় ১৪০টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় অজ্ঞাতনামাসহ বিএনপি-জামায়াত শিবিরের ১৮ থেকে ২০ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। এরমধ্যে অধিকাংশ আসামি গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন বলে সূত্র জানায়।
গোয়েন্দা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, নাশকতার একাধিক মামলায় বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মীর মো. নাছির উদ্দিন, মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ সব নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে মূলত রাজনৈতিকভাবে যারা রাজপথে সক্রিয় ছিলেন পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে বলে বিএনপির অভিযোগ। যাদের বেশিরভাগই জেল খেটে জামিনে বের হয়ে আসেন। আর যারা রাজপথে তৎপর ছিলেন না তারা গ্রেপ্তারের বাইরে রয়ে গেছেন। আর এসব মামলার অধিকাংশেরই চার্জশিট দেয়নি পুলিশ। নাশকতা মামলায় ডা. শাহাদাত হোসেন, আবুল হাশেম বক্কর ও জামায়াতের আ ন ম শামসুল ইসলাম বর্তমানে জেলে রয়েছেন। এদের মধ্যে ডা. শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম-৯ ও আ ন ম শামসুল ইসলাম চট্টগ্রাম-১৫ আসনে ২০ দলীয় জোট মনোনীত প্রাথীঁ।
সিএমপি ও জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পুলিশ এ পর্যন্ত ৩০টি মামলার চার্জশিট দিয়েছে। বাকি ২৩০টি মামলা তদন্ত-পর্যায়ে রয়েছে। চার্জশিট দেয়া মামলাগুলোতে আসামি করা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার নেতাকর্মীকে। বাকি ২৩০টি মামলায় জ্ঞাত-অজ্ঞাত মিলে প্রায় ১০ হাজার আসামি রয়েছে। আসামিরা সবাই বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী।
আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে অধিকাংশ ‘পলাতক’ নেতাকর্মী তাদের প্রার্থীদের পক্ষে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন। ত্রাা প্রচারণায় মাঠে নামতে চান। প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে এলাকায় ভোটারদের কাছে যেতে চান।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে। মামলার আসামিভুক্ত নেতাকর্মীরা মাঠে নামতে ভয় পাচ্ছেন।
চট্টগ্রাম-১০ আসনের ২০ দলীয় জোট প্রার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান পূর্বদেশকে বলেন, সরকারের নির্দেশে পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা না থাকলেও ধরে মামলার আসামি দেখিয়ে চালান দেয়া হচ্ছে। নাশকতা বা সহিংসতা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার জুলুম-নির্যাতন শুরু করেছে। এসব করে তারা পার পাবে না। নির্বাচন থেকে সরানোর কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না। তিনি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার না করার দাবি জানান।
অপরদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আসামি গ্রেপ্তার করছে। বিএনপির কোনো নেতাকর্মীকে নতুন করে কোনো মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট রয়েছে। পুলিশ সেসব তদন্ত করেই ব্যবস্থা নিচ্ছে?
গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের সামনে ‘বিজয়ের পতাকা’ শিরোনামে পতাকা মিছিল শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মোস্তাইন হোসাইন বলেন, ওয়ারেন্টি-অপরাধীদের ধরতেই পুলিশের অভিযান চলছে। এখানে রাজনৈতিক কোনো বিষয় নাই। সুনির্দিষ্ট মামলা ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করার সুযোগ নেই। এটা নিয়মিত অভিযান। তবে নির্বাচনে সহিংসতারোধে এ অভিযান আরো জোরদার করা হয়েছে।
পুলিশি অভিযানে গত এক সপ্তাহে নগরী ও জেলায় অন্তত ৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল শনিবার বেলা ১২টার দিকে কাপাসগোলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে সাবেক কাউন্সিলর সবুক্তগীন চৌধুরী মক্কীকে গ্রেপ্তার করেছে চকবাজার থানা পুলিশ। এসময় তিনি চট্টগ্রাম-৯ আসনের বিএনপি দলীয় প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের পক্ষে গণসংযোগ করছিলেন। পরে নাশকতা মামলার আসামি হিসেবে তাকে আদালতে পাঠানো হয়।
চকবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নেজাম উদ্দিন জানান, নাশকতার পরিকল্পনাসহ বেশ কয়েকটি মামলার আসামি মক্কী। তিনি দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শুক্রবার রাতে পটিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চার সদস্যসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ১৫ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সবাই বিভিন্ন মামলার আসামি। এদের মধ্যে রয়েছেন, দক্ষিণ জেলা যুবদলের সহ-সম্পাদক ও হাবিলাইস দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য সুজন, কুসুমপুরা ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও বিএনপি নেতা এম এ হাকিম, কোলাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও বিএনপি নেতা কামাল মেম্বার, জিরি ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও বিএনপি নেতা বাবুল, দক্ষিণ জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক হারুন অর রশীদ, ছাত্রদল নেতা সেকেন্দার হোসেন নয়ন, মো. শাখাওয়াত হোসেন, সাজ্জাদ হোসেন, মহিউদ্দিন হাশেম, ওমর ফারুক ও সাইফুজ্জামান।
এর আগে সীতাকুন্ডে মো. আসলাম চৌধুরীর বাড়ি থেকে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বাড়ির সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এক নেতাকে।
কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, মামলার আসামি ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ছাড়া অন্য কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। রাজনৈতিকভাবে কাউকে গ্রেপ্তারের সুযোগ নেই।