বিএনপিকে ছাড়িয়ে গেছে আ. লীগের ‘বিদ্রোহীরা’

78

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে প্রচারণার শেষ সময়ে চাপেই আছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও প্রচারণাকালে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছেন তারা। যে কারণে প্রচারণা শুরুর গত ১৫ দিনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা পড়া ৫৩টি অভিযোগের মধ্যে প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ২২টি অভিযোগ জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
অভিযোগগুলোর বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত আটজন প্রার্থীও বিদ্রোহী প্রার্থীদের অভিযুক্ত করে অভিযোগ দিয়েছেন।
সবমিলিয়ে ভোটের মাঠে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উত্তাপ চলছে। বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরাও প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আটটি অভিযোগ দিয়েছেন ইসিতে।
অন্যদিকে মেয়র পদের সাত প্রার্থীর মধ্যে পাঁচ প্রার্থী প্রচারণায় পিছিয়ে থাকলেও উত্তাপ জিইয়ে রেখেছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলীয় দুই প্রার্থী। এরমধ্যে একে অপরের বিরুদ্ধে বিএনপি প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন ১২টি ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী তিনটি অভিযোগ দিয়েছেন ইসিতে।
চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান পূর্বদেশকে বলেন, ‘ভোটের মাঠের পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা কমে গেছে। আমরা কয়েকটি ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার পর্যন্ত করিয়েছি। কাউকে কোথাও ছাড় দেয়া হয়নি। বাকি যে কয়দিন আছে সেখানেও আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোন ঘটনা প্রমাণ হলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ পর্যন্ত ৫৩টি অভিযোগ পেয়েছি। যার বেশিরভাগই আমরা পুলিশী তদন্ত শেষে নিষ্পত্তি করেছি। একইভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় কয়েকজন প্রার্থীকে সরাসরি সতর্ক করে দিয়েছি।’
নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ২২টি অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছেন। এরমধ্যে ১১নং দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের প্রার্থী মো. নুরুল ইসলাম, মোরশেদ আকতার চৌধুরী দুটি, ১৭নং পশ্চিম বাকলিয়ার ওয়ার্ডের মোহাম্মদ সোয়েব খালেদ, ২৮নং পাঠানটুলী ওয়ার্ডের প্রার্থী আবদুল কাদের তিনটি, ১২নং সরাইপাড়া ওয়ার্ডে সাবের আহমদ সওদাগর দুটি, ৭নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আনজুমান আরা বেগম, ৩৩নং ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ডে হাসান মুরাদ বিপ্লব দুটি, ৪০নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডে ফরিদুল আলম, ১০নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে রাধা রানী দেবী, ২৬নং উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডে এক বিদ্রোহী প্রার্থী, ৯ নং উত্তর পাহাড়তলি ওয়ার্ডে মো. জহুরুল আলম জসীম, ১৭নং বাকলিয়া ওয়ার্ডে একজন বিদ্রোহী প্রার্থী, ১২নং সরাইপাড়া ওয়ার্ডে শামসুল আলম, ৭নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডে মোহাম্মদ এয়াকুব, ৪নং চান্দগাঁও ওয়ার্ডে আনিসুর রহমান আনিস, ১৩নং পাহাড়তলী ওয়ার্ডের প্রার্থী মাহমুদুর রহমান, ১৬নং চকবাজার ওয়ার্ডের দেলোয়ার হোসেন ফরহাদ অভিযোগ দিয়েছেন।
এরা সবাই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হলেও বেশিরভাগ অভিযোগ দিয়েছেন নিজ দল সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আধিপত্যের লড়াই চলছে।
অভিযোগ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অভিযোগগুলোর বেশিরভাগই আচরণবিধি লঙ্ঘন, দলীয় মনোনীত প্রার্থী দাবি, পোস্টার ছেঁড়া, হুমকি-ধমকি, মারধর, নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর, গণসংযোগে বাধা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অভিযোগ।
১৩নং পাহাড়তলী ওয়ার্ডের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী মাহমুদুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, ভোটের মাঠে আমাকে ঘায়েল করতে এক প্রার্থী মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। আমার নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করেছে। ওই প্রার্থী আমাকে নির্বাচনের মাঠে চাপে রাখতে নানারকম ফন্দি আটছেন।
আওয়ামী লীগের আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী হাসান মুরাদ বিপ্লব পূর্বদেশকে বলেন, ভোটের মাঠ ছেড়ে একদিনের জন্যই সরি নাই। আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থী প্রতিনিয়ত কর্মী-সমর্থকদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এগুলো পাত্তা না দিয়েই আমার নেতাকর্মীরা আমার পক্ষে মাঠে অবস্থান করছেন।
এদিকে নির্বাচনী পরিবেশ রক্ষায় ইতোমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় সার্বক্ষণিক ১৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে আছেন। তারা প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা পর্যবেক্ষণ করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি অভিযোগে প্রার্থীর সমর্থকদের জরিমানাও করা হয়েছে।