বাবা ও ছেলে স্বদেশ দত্ত

92

বাবাতাঁর ছোট ছেলেকে গল্প শুনাচ্ছেনÑ
‘রাজ কন্যার বিয়ে হবে সেই ছেলের সাথে, যে গল্প শোনাতে পারে। গল্প তো অনেকেই শোনাতে পারে, তবে সেই গল্প একবার শুরু হলে, তা চলতে থাকবে। শেষ হবেনা। একজন দুইজন করে, অনেকেই এল। গল্প শুরু করে, কিছু দূর যেতে যেতে থেমে যায়। রাজার কপালে চিন্তার বলিরেখা। ‘রাজ কন্যার কি বিয়ে হবে না।’
এমন সময় সভা কবির ছেলে এলো। গল্প বলা শুরু করেছে।
বড় একটা ঘর। তার দুইপাশে দুইটি বড় বড় জানালা। একটা চড়–ই পাখি জানালার চৌকাঠে এসে বসেছে। ওখানে কিছুক্ষণ লাফা-লাফি করল। তারপর ফুরুত করে চলে গেল ও জানালায়। আবার ফুরুত করে চলে এল এ জানালায়।
রাজা মশায় জিজ্ঞেস করলেনÑ তোমার এই ফুরুত কত ক্ষণ চলবে?
ছেলেটি হেসে বললÑ মহারাজ, যতক্ষণ চড়–ই পাখি আসা যাওয়া করতে থাকবে, ততক্ষণ এই ফুরুত চলতে থাকবে। ফরুত এর ও শেষ নেই, আমার গল্পেরও শেষ নেই।”
ছেলের দু’চোখ জুড়ে ঘুম আসে। গল্পের চড়–ই পাখি কবিতা হয়ে ধরা দেয়। তখন সে চড়–ই পাখি আর বাবুই পাখির মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না।
মোদের বাড়ির পাশে আছে একটি তাল গাছ
সেই গাছে বাস করে চড়–ই পাখির ঝাঁক
ফুরুত করে উড়ে চলে চড়–ই পাখির ঝাঁক
সকাল সাঝেঁ শুনতে যে পাই চড়–ই পাখির ডাক
বাবা ছেলের কবিত্বে মুগ্ধ। কচি হাতের প্রথম কবিতা। সেই থেকে ছেলের আদুরে নাম ‘চড়–ই পাখির ঝাঁক’।
ছেলে বড় হতে থাকে। ইন্টার পাশ করেছে। বাবার সাথে শেয়ার করছে. কোন বিষয় পড়া যায় ?
ছেলের মনে ফিজিক্স উঁকি ঝুঁকি দিতে থাকে। বাবা বললেনÑ রসায়নে পড়।
ছেলের সায়নে ভর্তি হলো। রপ্ত করতে থাকে পদার্থ আর শক্তি।
বাবা স্বপ্ন দেখেন, ছেলে শেষ সার্টিফিকেট নিয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এবার ছেলেকে বিয়ে দিতে হবে।
বাবা শেষটুকু দেখে যেতে পারেন না।
বাবা এখন ছেলের কাছে, চড়–ই পাখির ফুরুত এর মতন। মনের মধ্যে আসা যাওয়া করে। আবার রসায়নের পদার্থ আর শক্তির মতন। যেখানে বাবা মূর্ত আর বিমূর্ত হিসেবে দেথা দেন।
ছেলে বাবাকে নিয়ে লিমিরিক লিখেÑ
বাবা তুমি আমার ছোট বেলার চড়–ই পাখি
মন মুকুরে নিত্য তোমার ডাকা-ডাকি
তোমার স্বপ্ন আমার সাথে
রসায়ন আর সে একই স্রোতে
দূর আকাশের তারা হয়ে দেখছ তুমি কি ?