বাংলাদেশিদের অধিকার রক্ষা করবে ব্ল্যাকচেইন

52

ব্যবসায়ী এবং প্রবাসী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় নানারকম নিয়মকানুন তৈরি করে যাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। তারপরও জনশক্তি ব্যবসা সবসময়ই অতিরিক্ত ফি এবং এজেন্টদের দীর্ঘতালিকার মুখে পড়ে ব্যাহত হচ্ছে। দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের জনশক্তি বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে ২০১২ সাল থেকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক আরব আমিরাত সফরের একটি লক্ষ্য ছিল দেশটির সাথে জনশক্তির ব্যাপারে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করা। আর সেই উদ্দেশ্যে ব্ল্যাকচেইনের মতো সর্বশেষ প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে আলোচনার জন্য এখনই হবে সঠিক সময়। ব্ল্যাকচেইন শ্রমিকদের সাথে চুক্তিকে স্বচ্ছ করার পাশাপাশি আরব আমিরাতের অর্থনীতিকেও সমৃদ্ধ করতে ভূমিকা রাখবে।
যে পদ্ধতিতে জনশক্তি বিদেশে পাঠানো হয় সেই পদ্ধতিকে আরো গতিশীল করতে কার্যকারিতা রয়েছে ব্ল্যাকচেইন প্রযুক্তির। আরব আমিরাত ভিত্তিক ব্ল্যাকচেইন কোম্পানি ই-মল-এর নেতৃত্বে একদল বিনিয়োগকারী সেই অঞ্চলে মাইগ্রেশন সেন্টার স্থাপনে এগিয়ে এসেছে। তাদের উদ্দেশ্য হলো আরব আমিরাতে জনশক্তি রপ্তানি ছয় বছর বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশি শ্রমিকদের সেদেশে যেতে সাহায্য করা।
মাইগ্রেশন সেন্টারগুলো গড়ে তোলা হবে জাতি, ভাষা নির্বিশেষে সব শ্রমিককে সহযোগিতা করার লক্ষ্যে। এর প্রথম ধাপে প্রতিটি আমিরাতে কমপক্ষে একটি সেন্টার গড়ে তোলা হবে যেগুলোতে থাকবে ফ্রি কল সেন্টার এবং অভিবাসী শ্রমিকদের দিন-রাতের আশ্রয়স্থল।
সেন্টারগুলো শ্রমিকদের শ্রম আইন, চাকরির চুক্তি, স্থানীয় আইন এবং আরব আমিরাতের সংস্কৃতি সম্পর্কে শিক্ষা দেবে। তাছাড়া মাইগ্রেশন সেন্টারগুলোগুলোতে একটি জায়গা থাকবে যেখানে আলোচনার মাধ্যমে চাকরিদাতা ও চাকরিজীবীর
মধ্যে যেকোনো বিষয় আপসে সমাধান করা যাবে।
এর ফলে বাংলাদেশি শ্রমিকদের তাদের বেতনের একটি বড় অংশ চাকরি পাওয়ার জন্য খরচ করার ব্যাপারে দুশ্চিন্তায় থাকতে হবে না। সেই সাথে আরব আমিরাতে কাজ করার জন্য তাদের পড়তে হবে না কোনো প্রতারক রিক্রুটিং এজেন্সির খপ্পরে।
নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে যে দেশ থেকে শ্রমিক যাবে সেই দেশেই। সেই দেশে ওই শ্রমিকের বায়োমেট্রিক ডাটা, পাসপোর্টের তথ্য, দক্ষতা, মেডিক্যাল রিপোর্ট, সার্টিফিকেট ইত্যাদি একটি যৌথ সিস্টেমে সংরক্ষিত থাকবে যা নিশ্চিত করবে যে শ্রমিকটি বিদেশে কাজ করার যোগ্য এবং ব্যাপারটি হবে সকলের কাছে স্বচ্ছ।
নিয়োগকারী অফিসও আরব আমিরাতের আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র পাবে এবং ডাটাবেজে সংরক্ষণ করে রাখবে যা পরবর্তীতে কাজে লাগানো যাবে। এসব কাগজপত্রের মধ্যে থাকবে সার্টিফিকেট, ট্রেনিং কোর্স, টেস্ট রেজাল্ট এবং টিয়ার স্কোরিং সিস্টেম। এর ফলে শ্রমিকরা নিয়োগের ক্ষেত্রে যে কোনো প্রতারণা কিংবা মানবপাচারের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না তা নিশ্চিত করা হবে।
আরব আমিরাতের মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় নিয়োগকারী ও শ্রমিক উভয়ের অধিকার রক্ষায় নিয়মিতভাবে দেশটির নিয়মকানুন ও নীতি হালনাগাদ করে চলেছে। এগুলোর মধ্যে আছে বেতন সুরক্ষা পদ্ধতি। সম্প্রতি ইন্স্যুরেন্স স্কিমও চালু করা হয়েছে যার মাধ্যমে শ্রমিকরা ২০ হাজার দিরহাম পর্যন্ত সুরক্ষা পাবেন যা অভিবাসীদের অধিকার নিশ্চিত করবে।
ব্ল্যাকচেইন ভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়া ই-মল শুরু হবে যেই দেশ থেকে শ্রমিক যাবে সেই দেশ থেকে যা আরব আমিরাতের মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সহায়ক হবে এবং সেইসাথে শুধু যোগ্য, সনদপ্রাপ্ত এবং শারীরিকভাবে উপযুক্ত শ্রমিকদেরই সংযুক্ত আরব আমিরাতে আসা নিশ্চিত করবে। আর এ সবকিছুই সংযুক্ত আরব আমিরাতকে সাহায্য করবে বিশ্বে সবচেয়ে সুখী বহুজাতিক দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে।