ফুটপাত ছাড়িয়ে সড়কও দখল করেছে অবৈধ কাঁচাবাজার

77

নগরীর সিরাজুদ্দৌল্লা সড়কের আন্দরকিল্লা সাব-এরিয়া। এক সময় ফুটপাতে হাতেগোনা কয়েকটি কাঁচা পণ্যের ভাসমান দোকান বসত। সময়ের বিবর্তনে সেটা এখন জমজমাট কাঁচাবাজার। চাহিদাকে পুঁজি করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা ফুটপাত দখলের পর সড়কজুড়েও বাজার বসিয়েছে চাঁদার বিনিময়ে। দুপুর থেকে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত চলে কাঁচাবাজারে বেচাকেনা। ফলে এ সমটায় যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠে নাগরিক জীবন। আন্দরকিল্লামুখী সবগুলো গাড়ির যাত্রীকে সইতে হয় যানজটের তীব্র যন্ত্রণা।
সাব এরিয়া এলাকায় রাস্তার ওপরেই রয়েছে দুটি ডাস্টবিন। সকাল থেকে জমা ময়লার দুর্গন্ধে চারপাশ ভারি হয়ে উঠে। এ অবস্থায় বাজারের কারণে ডাস্টবিনের ময়লা দুর্গন্ধে নাগরিকরা শিকার হচ্ছেন চরম দুর্ভোগের।
সময় তখন বিকাল ৩টা। তখনই শুরু হয়ে গেছে রাস্তা দখলের তোড়জোড়। সকালে যে দোকানটায় ওষুধ বিক্রি হত, বিকাল গড়াতেই সে দোকানের সামনের ফুটপাত দখল করে বসেছে মাছের দোকান। অবশ্য ওষুধের দোকানের কর্তা বিকেলে বাজার বসার জন্য ভাড়ার টাকা গুণেন। শুধু এ ওষুধের দোকান নয় মুদির দোকানের সামনেও ফুটপাত ছাড়িয়ে রাস্তা দখল করেছে কাঁচাপণ্যের দোকানগুলো। এদের সাথে মিতালি হয়ে রাস্তার ওপর বাজার জমিয়েছে কাঁচাপণ্যে সজ্জিত ভ্যানগুলো। দুপুরের পর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে এ বাজার । ফলে আন্দরকিল্লামুখী যানবাহনগুলো যানজটে আবদ্ধ হয়ে থাকে পুরো সময়। রাস্তার ওপর একটি অবৈধ বাজার নষ্ট করছে নাগরিকের কর্মঘণ্টা।
সরেজমিনে দেখা যায় নবনির্মিত একটি ভবনের পাশের ফুটপাতের ওপর খাসির মাংস বিক্রি করছেন আশরাফুল আলম। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মাসে ৩ হাজার টাকা দিয়ে জমিদার থেকে ভাড়া নিয়েছি। ফুটপাতের মালিক কি জমিদার? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এসব আমরা জানি না। তবে ওনাকে ৩ হাজার টাকা দিলে এখানে ব্যবসা করতে কোনো সমস্যা হয় না। ওই সময় বেশ কয়েকজন দোকানদারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় প্রভাবশালীরদের কয়েকটি গ্রুপ এখান থেকে দিনওয়ারি টাকা তুলেন। এমনকি একেক জনের অধীনে রাস্তায় কয়টি ভ্যানগাড়ি বসবে তাও নির্ধারিত।
এ কাঁচাবাজারের সাথে রাস্তার ওপর রয়েছে ডাস্টবিন। সাব এরিয়া পুলের পাশে ডাস্টবিনটির অবস্থান। বাজারের কারণে সৃষ্ট যানজটে যাত্রীদের হজম করতে হয় ডাস্টবিনের উৎকট গন্ধও। গতকাল সন্ধ্যার খানিক পূর্বে যানজটে আটকা পড়ে টেম্পুতে বসেছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী হাসিব রহমান। তিনি পূর্বদেশকে বলেছেন, একটু সামনেই সিটি কর্পোরেশন। যেখান থেকে নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা ও দুর্ভোগ লাগবে যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ নগর ভবনের পাশেই রাস্তার ওপর বসেছে বাজার। যার কারণে গাড়ি চলাচল করতে পারছে না। অফিস শেষ করে বাসায় ফিরছি। আর এ সময়টা আমাদের মত নাগরিকদের রাস্তার ওপর বাজারের কারণে ডাস্টবিনের গন্ধ সহ্য করে জ্যামে বসে থাকতে হচ্ছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন এমন দুর্ভোগ সহ্য করে আমরা কিভাবে বিশ্বাস করবো, নগরী ক্লিন হচ্ছে। মেয়রের পাশেই এমন অবস্থা কি নির্দেশ করে না পুরো শহরবাসী কেমন আছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চসিকের এস্টেট অফিসার এখলাস উদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, এটি একটি অবৈধ বাজার। নগরীতে এরকম ৩৭টি অবৈধ বাজার রয়েছে। যার সবগুলো তালিকা আমরা ম্যাজিস্ট্রেসকে দিয়েছি। যে কোনো মুহূর্তেই অবৈধ বাজার উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত আছি। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিদিন কোথাও না কোথাও অভিযান পরিচালনা করছে। এ রকম অবৈধ বাজারগুলো উচ্ছেদ করে নাগরিক দুর্ভোগ লাঘবের জন্য আমি কালকেই নির্দেশনা দিয়ে দিব।