ফুটপাতে দোকান বসানোর কৌশল আধুনিক যাত্রী ছাউনি!

234

নগরীতে নতুন যাত্রী ছাউনি নির্মাণ নিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিারজ করছে। আগের যাত্রী ছাউনিগুলো দোকানপাটের দখলে চলে যাওয়ায় উৎপাতমুক্ত যাত্রী ছাউনি নির্মাণে উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। এ জন্য নতুন করে ৬৬টি যাত্রী ছাউনি করা হচ্ছে নগরীর বিভিন্ন স্থানে। দোকানমুক্ত নতুন যাত্রী ছাউনির করার উদ্যোগ নেয়া হলেও বসানো হচ্ছে দোকান। নতুন প্রকল্পের আওতায় কিছু যাত্রী ছাউনির নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
জানা গেছে, যেখানে গণপরিবহনের কোনো যাতায়াত নেই, সেখানেও নির্মাণ করা হচ্ছে যাত্রী ছাউনি। মূলত ফুটপাতে দোকান বসানোর কৌশল হিসেবে অত্যাধুনিক যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। আবার যেসব ফুটপাত হকাররা দখল করে রেখেছে, সেসব ফুটপাতেও নির্মাণ করা হচ্ছে যাত্রী ছাউনি। এমনকি উদ্বোধনের আগেই তা দখল করে রেখেছে হকাররা। ছাউনিতে নির্মিত দোকান ২০ লাখ টাকায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ দেওয়া দোকানের কারণে দখল হয়ে গেছে ফুটপাত। ফলে পথচারীদেরকে বাধ্য হয়ে রাস্তা দিয়েই হাঁটতে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ১০০ ফুট দূরত্বের মধ্যে ৩টি যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হচ্ছে। যেখানে আগের দুইটি যাত্রী ছাউনিতে রয়েছে দোকান, তার পাশেই নির্মাণ হচ্ছে আরও একটি যাত্রী ছাউনি।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, সুষ্ঠু গণপরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে নগরীতে অত্যাধুনিক যাত্রী ছাউনি নির্মাণে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এ লক্ষ্যে ৬৬টি স্পটে অত্যাধুনিক এবং তথ্য-প্রযুক্তি সুবিধা সম্পন্ন যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হচ্ছে।
ফটোটাইপ মডিউলে এসব যাত্রী ছাউনির ডিজাইন করা হয়েছে। এসব যাত্রী ছাউনিতে থাকবে ওয়াইফাই সিস্টেম, ডিজিটাল ডিসপ্লেতে থাকবে সেবা ও জনসচেতনতামূলক প্রদর্শনী, লাল ও সবুজ আলাদা বিন, অপরাধ কার্যক্রম কমানোর জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা, রোডস সাইন, বাসের টিকিটের জন্য ওপেন বুথ ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা। এসব যাত্রী ছাউনিতে ১৫-২০ জন করে ব্যক্তি বসতে পারবেন। এছাড়া বাস দাঁড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখা হবে যাত্রী ছাউনির সামনে। যানজট নিরসনে যাত্রী ছাউনি প্রতিটি মোড় থেকে প্রায় ৫০-১০০ মিটার দূরত্বে স্থাপন করা হবে। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে চসিকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, ফুটপাতের উপর নতুন যাত্রী ছাউনিতে নির্মাণ করা হয়েছে দোকান। এভাবে দোকান নির্মাণে দখল হয়ে গেছে ফুটপাত। দেখে যে কারো মনে হবে, যাত্রী ছাউনির নামে ফুটপাতের উপর দোকান নির্মাণ করা হয়েছে।
তবে চুক্তি অনুসারে আগের যাত্রী ছাউনিগুলোতে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হলেও পরবর্তীতে নির্মিত যাত্রীছাউনিগুলোতে দোকান নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন চসিকের প্রধান পরিকল্পনাবিদ এ কে এম রেজাউল করিম।
নগরীর নিউমার্কেট মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মোড় থেকে ১শ গজ দূরে জিপিও’র সামনে রয়েছে একটি যাত্রী ছাউনি। তার কিছু দূরে রয়েছে আরও একটি যাত্রী ছাউনি। দুই যাত্রী ছাউনিতে ছিল না কোন যাত্রী। এমনকি সেখানে কোন যানবাহনও থামেও না। তবে দুই যাত্রীছাউনির নিচে দুইটি দোকান রয়েছে। মাসিক ভাড়ায় দোকানগুলো দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
দখল হওয়ায় দুই যাত্রী ছাউনির পাশে করা হচ্ছে আরেকটি নতুন যাত্রী ছাউনি। সেখানেও তৈরি করা হচ্ছে দোকান। ইতোমধ্যে তা বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে। তবে নব নির্মিত দোকানটির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে ফুটপাত। এছাড়া ৩৩নং ওয়ার্ড কার্যালয়ের সীমানার গা ঘেষে তৈরি করা হয়েছে আরেকটি যাত্রী ছাউনি। সেখানেও একই অবস্থায় নির্মিত দোকানের কারণে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে ফুটপাত।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ফিরিঙ্গিবাজার মোড়ে রিকশা আর ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া তেমন কোন গাড়ি থামে না। কোতোয়ালি মোড় থেকে নতুন ব্রিজ পর্যন্ত টেম্পো চলে। কোন ধরনের সিটি বাস এ মোড় দিয়ে যায় না। তাই এ মোড়ে কতটুকু যাত্রী ছাউনির প্রয়োজনীয়তা আছে, সে বিষয়েও প্রশ্ন রাখেন স্থানীয়রা।
নিউমার্কেট এলাকার শাহ আমানত মার্কেট ও জহুর হকার্স মার্কেটের মাঝখানে রয়েছে আরও একটি যাত্রী ছাউনি। এটি এখনো উদ্বোধন হয়নি। এর আগেই দখল হয়ে গেছে ছাউনিটি। ফুটপাত দখল করেছে ছাউনি আর দোকান। এছাড়া রাস্তা দখল করে বসেছে আরও দোকানপাট। নবনির্মিত ছাউনি থেকে ১শ গজের কম দূরত্বে রয়েছে পুরনো একটি যাত্রী ছাউনি। যেটি গত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে দখল করে রেখেছে হকাররা।
নিউমার্কেটের মোড় থেকে শাহ আমানত মার্কেটের মোড় পর্যন্ত এলাকাটিতে সবচেয়ে বেশি হকার বসেন। ফুটপাত ছাড়াও রাস্তার দ্ইু-তৃতীয়াংশ থাকে হকারদের দখলে। এমন জায়গায় যাত্রী ছাউনি কতুটুক প্রয়োজন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
যাত্রী ছাউনির দোকানটি বরাদ্দ পেয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হকার্স সমিতি। ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে দোকান নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন সমিতির সভাপতি মিলন পূর্বদেশকে বলেন, আমরা মেয়র মহোদয়কে জানিয়েছি। তিনি বলেছেন, হকার মার্কেট এলাকায় কোনো দোকান হলে, সেটা আমাদের বরাদ্দ দিবেন। তারই প্রেক্ষিতে আমরা ২০ লাখ টাকা দিয়ে দোকানটি বরাদ্দ নিয়েছি।
এ প্রসঙ্গে নগর পরিকল্পনাবিদ ড. ইদ্রিস আলী পূর্বদেশকে বলেন, নগরকে নান্দনিক করার যথেষ্ট সদিচ্ছা রয়েছে বর্তমান মেয়রের। নানা কারণে পেরে উঠছেন না তিনি। নগরে এ যাবত যত যাত্রী ছাউনি করা হয়েছে, তার সবগুলো দোকানের কারণে হারিয়ে গেছে। তবে এখনো যদি একই ভুল করা হয়, তাহলে সেটা হবে খুবই খারাপ, বিষয়টি মেয়রের দেখা দরকার। তৃতীয় কোনো কালো হাত যদি স্বার্থসিদ্ধির জন্য যাচ্ছেতাই কাজ করে যায়, সেক্ষেত্রে মেয়রের সজাগ থাকা উচিত।
চসিকের প্রধান পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী এ কে এম রেজাউল করিম পূর্বদেশকে বলেন, নগরীর বিভিন্ন ব্যস্ততম মোড় থেকে ১শ ফিট দূরে অত্যাধুনিক যাত্রীছাউনি স্থাপন করা হচ্ছে। যেগুলো আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের চুক্তির ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
যাত্রী ছাউনিতে দোকান নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রায় ৫০ শতাংশ ছাউনি আগে চুক্তি হয়ে গেছে। তাই দোকান বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। বাকিগুলোতে কোন দোকান রাখা হবে না।
ইতোমধ্যে নির্মিত ছাউনিগুলোতে দোকানের কারণে ফুটপাত ব্লক হওয়া বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে আমরা দেখে ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, আমরা নিরুৎসাহিত করছি দোকান না করার জন্য। কেননা মেয়র মহোদয় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যাত্রী ছাউনিতে দোকান করতে দেয়া হবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, যাত্রী ছাউনিতে কোনো দোকান থাকবে না। যারা আগের চুক্তির ভিত্তিতে দোকান নির্মাণ করেছেন সেগুলো দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া যাত্রী ছাউনির কারণে যাত্রী সমস্যা হওয়ার কোন বিষয় বরদাস্ত করা হবে না।