‘প্রাণের উৎসবে মাতি উল্লাসে’

92

লাল, নীল, কমলাসহ নানা রঙের টি-শার্টে ছেয়ে গেছে নগরীর রাজপথ। হাতে ভুভুজেলা, ঢোল, ঢোলকি, বেলুনসহ সাজসজ্জা। সবার মাথায় রঙিন ক্যাপ। কেউ ছবি তুলছেন, কেউবা তুলছেন সেল্ফি; নেচে-গেয়ে উৎসবে অংশ নিয়েছেন তরুণ, যুবক, প্রবীণসহ নানা বয়সের হাজারো মানুষ। তারা সবাই দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রাক্তন শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত প্রথম পুনর্মিলনী উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী উৎসবের সূচনা হয় আনন্দ শোভাযাত্রার মাধ্যমে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর বাদশা মিঞা সড়কে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করেন কয়েক হাজার প্রাক্তন শিক্ষার্থী। এতে ঘোড়ার গাড়িসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী শাটল ট্রেনের প্রতীকী প্রদর্শন করা হয়। শোভাযাত্রাটি নগরীর সিআরবি শিরীষ তলায় গিয়ে মিলনমেলায় রূপ নেয়।
শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭তম ব্যাচের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মোখলেসুর রহমান মুকুল। জন্মের ছয় মাস পর চোখের আলো হারিয়েছেন তিনি। তবু মনের চোখে আয়োজনকে উদযাপন করছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এই প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, আমার হয়তো চোখ নেই। কিন্তু মনের চোখ দিয়ে এই রঙিন উৎসবকে উপভোগ করছি। মনে হচ্ছে, বন্ধুদের সাথে নিয়ে ফিরে গেছি তিন যুগ আগের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে।
এদিকে উৎসবের প্রথম দিনে আনন্দ শোভাযাত্রার পর শিরীষ তলায় আয়োজন করা হয়েছে বাউল সন্ধ্যার। মাগরিবের নামাজের বিরতির পর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা শুরু আগে মঞ্চে উঠেন অনুষ্ঠানের অতিথিবৃন্দ। উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গিয়াস উদ্দিনের সঞ্চালনায় এতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে উৎসবে অংশ নেওয়া প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও চট্টগ্রাম-৬ আসনের সাংসদ এবিএম ফজলে করিম, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সরকারের প্রাক্তন মূখ্য সচিব আবদুল করিম, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম ও পুনর্মিলনী উদযাপন পরিষদের আহবায়ক আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী নাসিম। সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্যের পর দেশ বরেণ্য বাউল শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও চট্টগ্রাম-৬ আসনের সাংসদ এবিএম ফজলে করিম বলেন, অনেক গুণীজন, রথী-মহারথীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ছিলেন। এর মধ্যে অনেককে আমরা হারিয়েছি, অনেকে এখনও আমাদের মাঝে আছেন। এই অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠনের মাধ্যমে সবাইকে এক প্ল্যাটফর্মে আনায় উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমিও অনেক উচ্ছ¡সিত ছিলাম এই পুনর্মিলনী নিয়ে। বন্ধু, সিনিয়র-জুনিয়রদের সঙ্গে সময় কাটাতে অনেক দূর থেকে ছুটে এসেছি। এসময় উৎসবের অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচ থেকে শুরু করে ৪৯তম ব্যাচের সবাইকে শুভেচ্ছা জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, এই আয়োজনের যখন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তখন আয়োজকরা ভেবেছিলেন দুই-তিন হাজার অংশ নেবেন। কিন্তু আট হাজারের বেশি প্রাক্তন শিক্ষার্থী পুনর্মিলনীর রেজিস্ট্রেশন করার মাধ্যমে আয়োজকদের অনুপ্রাণিত করেছেন। ফলে আয়োজনটি অনেক বড় হয়েছে। তাই ছোটখাট ভুল-ত্রæটি এড়িয়ে যাবেন আপনারা। আমরা সবাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্য। আজ আর বক্তব্য নয়, বাউল শিল্পীরা বসে আছেন। আজ সবাই পাখা মেলে উড়বেন।
উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব গিয়াস উদ্দিন পূর্বদেশকে জানিয়েছেন, শুরুতে দুই-তিন হাজার শিক্ষার্থী আয়োজনে অংশ নেবেন ভেবে আমরা কিং অব চিটাগাং ক্লাবে দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু আট হাজারেরও বেশি প্রাক্তন শিক্ষার্থী অংশ নেওয়ায় অনুষ্ঠানস্থল পরিবর্তন করে জিইসি কনভেনশন সেন্টারে নির্ধারণ করা হয়েছে। শুক্রবার মূল উৎসবে আলোচনা সভা, উপাচার্যবৃন্দের সম্মাননা, শোক প্রস্তাব, স্মৃতিচারণ, র‌্যাফেল ড্র, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ দিনব্যাপী নানা আয়োজন রাখা হয়েছে।