প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন হোক

11

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত সরকারের মন্ত্রী পরিষদের প্রথম অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আসন্ন রমজানের আগেই নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এসময় তিনি বাজারে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। মহামারি করোনার পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানী ও খাদ্য সংকট তীব্র হয়। ‘বেড়ে যায় ডলারের দাম। সেই সাথে দেশে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। বাংলাদেশেও এসব সংকট উপচে পড়েছে। প্রায় দুই বছর ধরে সরকারের নানা উদ্যোগের মধ্যেও বাজারের অগ্নিমূল্য নেভানো সম্ভব হয়নি। এদিকে দেশের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে অসহনীয পর্যায়ে রয়েছে। সাধারণ মানুষের তরকারি আলুসহ প্রতিটি সবজির দাম আকাশছোঁয়া। ডিম, পেঁয়াজতো আছেই। এরমধ্যে সামনে আসছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস রমজান। রমজান মাসে দেশে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো যেন অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে অসাধু ব্যবসায়ীদের। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, মাস শুরু হওয়ার কয়েকমাস আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা দ্রব্যমূল্য বাড়াতে যথারীতি প্রতিযোগিতা শুরু করে দেয়। প্রতি বছরই এটা দেখা যায়। উৎসব ও বিশেষ উপলক্ষে বা ধর্মীয় প্রধান কোনো উৎসবের সময়ে ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশ তো বটেই, বিভিন্ন ইসলামি রাষ্ট্রসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই পণ্যের মূল্য কমে যায়; নিত্যপণ্যসহ নতুন-পুরোনো পোশাক-আশাক ও উৎসবসামগ্রী বিক্রি করা হয় বিশেষ ছাড়ে। অথচ আমাদের দেশে দেখা যায় এর উল্টোটা।
কেন পবিত্র রমজান মাস, ঈদুল আজহা বা ঈদুল ফিতরের মতো বড় উৎসবের আগে বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়? তা নিয়ে রয়েছে পরস্পরবিরোধী প্রধানত দুই রকমের অভিমত। ব্যবসায়ীরা বলে থাকেন, খরচ বৃদ্ধি ও চাহিদা জোগান তত্তে¡র স্বাভাবিক নিয়মেই এ সময় মূল্য বেড়ে যায়। অন্যদিকে নীতিনির্ধারক ও সাধারণ জনগণের বক্তব্য হলো, ভোগ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের লোভের স্ফীতিই এই মূল্যবৃদ্ধির বড় কারণ। এই বিতর্কের উপসংহার যেটাই হোক না কেন, রমজান সামনে রেখে বাজারের অগ্নিমূল্যের উত্তাপ মানুষকে যে দিশাহারা করে তোলে, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে ব্যবসায়ীদের লোভের স্ফীতিও ঘটে তখন। তাই রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। আগে যেখানে সামান্য মুনাফায় ব্যবসায়ীরা সন্তুষ্ট থাকত সেখানে এখন ২০ থেকে ৫০ গুণ বেশি টাকা মুনাফা করতে চান ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া সামর্থ্যবান মানুষদের মধ্যে একসঙ্গে বেশি পণ্য কিনে রাখার প্রবণতাও লক্ষ করা যায়। মূল্যবৃদ্ধির পেছনে এটিও একটি কারণ।
নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ না নিতে পারলে নিম্ন বা মধ্যম আয়ের মানুষদের ভোগান্তির শেষ থাকবে না। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে যে আলুর কেজি ছিল ২৫ টাকার মধ্যে, এক বছর পর বাজারে এখন একই আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। দাম দ্বিগুণেরও বেশি। শুধু আলু নয়, বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম এখন চড়া। বছরের শুরুতেই আওয়ামী লীগ সরকারের টানা চতুর্থবারের মেয়াদ শুরু হয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে। নিশ্চয়ই দ্রব্যমূল্য সাধারণের নাগালের মধ্যে রাখতে পরিকল্পনা রয়েছে এই সরকারের। রমজান মাসকে সামনে রেখে এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশও দিয়েছেন। এ বছরের রমজান শুরু হতে বাকি আর মাস দু-এক। পণ্যমূল্য বাড়াতে এবারও যে অসাধু ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাত দাঁড় করাবেন না সেটা বলা যায় না। সেজন্য আগেভাগেই ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করেছেন। তিনি গত শনিবার নতুন মন্ত্রীদের নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় টুঙ্গিপাড়ার নিজ বাসভবনে অনানুষ্ঠানিক মন্ত্রিসভার বৈঠকে নতুন মন্ত্রীদের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ যাতে স্বস্তিতে থাকতে পারে, সেজন্য নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। পবিত্র রমজান আসন্ন, এসময়ে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ খুব বেশি প্রয়োজন ছিল।
প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা আন্তরিক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবেন-এমনটি প্রত্যাশা দেশবাসীর।