পাহাড়তলীতে যত ‘মধু’ ডিটিএনএল খোকনের

54

পাহাড়তলীর রেলঅঙ্গনে মো. শাহিদ হোসেন খোকনকে সবাই এক নামেই চিনে। দীর্ঘ আট বছর যাবত এক জায়গায় চাকরির সুবাধে সবার কাছে পরিচিত। শ্রমিক লীগের দাপুটে নেতা হিসেবেও আধিপত্য আছে বেশ। তাই বদলি হলেও পাহাড়তলী ছাড়তে চান না শাহিদ। পাহাড়তলী ঘিরেই বেশ আগ্রহ তার। শেষ পর্যন্ত পাহাড়তলী কন্ট্রোল অফিসের বিভাগীয় কন্ট্রোলার (ডিটিএনএল) শাহিদকে সিআরবিতে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের চীফ কন্ট্রোল অফিসে বদলি করা হয়। গত ৮ জুলাই বিভাগীয় পরিবহন দপ্তর থেকে তাকে বদলির ছাড়পত্র দেয়া হলেও গত ছয়দিনেও তিনি কর্মস্থলে যোগ দেননি। এতে সিআরবি কন্ট্রোলের ট্রেন মনিটরিং কার্যক্রমে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চীফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট এএমএম শাহনেওয়াজ পূর্বদেশকে বলেন, ‘একজনকে বদলি করা হয়েছে। যোগ দেয়নি এটি সঠিক নয়। যোগদান অবশ্যই করতে হবে। যেহেতু সময় আছে বিষয়টি আমি দেখছি’।
ডিটিও অফিসের এ সংক্রান্ত এক পত্রে দেখা গেছে, ডিটিএনএল/পাহাড়তলী শাহিদ হোসেনকে সিওপিএস (পূর্ব)/সিআরবি’র নির্দেশে ডিটিএনএল/সিআরবি’র শূণ্য পদে যোগদানের নিমিত্তে ৮ জুলাই তারিখে ছাড়পত্র প্রদান করা হয়। এ আদেশ একই দিন অর্থাৎ ৯ জুলাই থেকে কার্যকর বলে বিবেচিত হবে। কিন্তু এই ছাড়পত্র আদেশ প্রাপ্তির পরও অভিযুক্ত ডিটিএনএল শাহিদ হোসেন কাজে যোগদান না করে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে বদলি ঠেকাতে তদবির করছেন।
রেলওয়ের পরিবহন বিভাগ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিভাগের দু’টি ট্রেন কন্ট্রোল অফিসের মধ্যে চীফ কন্ট্রোল অফিসে ডিটিএনএল পদ আছে পাঁচটি। এই অফিস থেকে সম্প্রতি জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া নামের এক ডিটিএনএল পদোন্নতি পেয়ে ঢাকা কন্ট্রোল অফিসে চীফ অব ট্রেন কন্ট্রোলার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে বদলি হন। যে কারণে এ পদে দীর্ঘ আট বছর যাবত পাহাড়তলীতে কর্মরত ডিটিএনএল শাহিদ হোসেনকে স্থলাভিষিক্ত করা হয়। কিন্তু তিনি কর্মস্থলে অদ্যাবধি যোগ দেননি।
রেলের কন্ট্রোলে কর্মরত একজন বলেন, ‘পাহাড়তলী কন্ট্রোলে সমসংখ্যক ডিটিএনএল থাকলেও পর্যাপ্ত টিএনএলের কারণে কাজের পরিধি কিছুটা কম। অন্যদিকে সিআরবি জোনাল কন্ট্রোল রুম হওয়ায় ডিটিএনএলের উপর শতভাগ নির্ভরশীল এই কন্ট্রোলে শূণ্য পদ পূরণ না হলে ট্রেন চলাচল কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে’।
অভিযোগ উঠেছে, পাহাড়তলী কন্ট্রোল থেকে এর আগেও একাধিকবার বদলি করা হলেও শাহিদ হোসেন প্রত্যেকবারই বদলি ঠেকিয়েছেন। বাসার কাছে অফিস হওয়ায় এবং রেলের বিভিন্ন তদবির ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সক্রিয় থাকতেই বারবার পাহাড়তলীতেই থেকে যান তিনি। এছাড়াও পাহাড়তলীতে থেকে বাসা বাড়ি বরাদ্দ নিয়ে অন্যকে ভাড়া দেয়ার অভিযোগও আছে শাহিদের বিরুদ্ধে। এমনকি সরকারি চাকরি সত্তে¡ও রেলওয়ে সংক্রান্ত ব্যবসা, ঠিকাদারির সাথে যুক্ত তিনি। গত বছরের ২৬ জুন রেলওয়ের অতিরিক্ত সচিব বরাবর বিভাগীয় ব্যবস্থাপক চট্টগ্রামের অধীনস্থ দফতরের কর্মকর্তারা লিখিত অভিযোগ দিয়ে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরেন। পরে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ডেপুটি চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট জাকির হোসেনকে আহব্বায়ক করে গঠিত কমিটি শাহিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তও করেন।
জানতে চাইলে ডিটিএনএল মো. শাহিদ হোসেন খোকন বলেন, ‘আমাকে বদলির পর যাইনি এটা মিথ্যা কথা। কিছু বিল সংক্রান্ত কারনে ১৬ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করছি। কিন্তু আমাকে অনৈতিকভাবে বদলি করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে পাহাড়তলিতে কোনো অভিযোগ নেই। যারাই আমাকে অপছন্দ করে তারাই বারবার এমন ষড়যন্ত্রগুলো করেন। আমি কোনোরূপ অনিয়মের সাথে যুক্ত নই’।