‘পার্বত্যাঞ্চলের প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানো হবে’

50

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর জন্য নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার দুপুরে দেশের চারটি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধনকালে এ নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সরাসরি গণভবন থেকে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একযোগে এ চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো হচ্ছে বাঘাবাড়ি ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র, জামালপুর ১১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বগুড়া ১১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে ৭ দশমিক ৪ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সারাদেশ বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবে। একটি গ্রামও অন্ধকারে থাকবে না। শহর থেকে গ্রামে প্রত্যেক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে। বর্তমানে আমরা ২২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। এ ছাড়াও ভারত থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। বাঘাবাড়ি, জামালপুর, বগুড়া ও কাপ্তাই সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আলোকিত বাংলাদেশ অভিযাত্রায় নতুন অধ্যায় সংযোজিত হলো। আমরা সারা দেশে দ্রæত শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে পারব। বিদ্যুৎ যাবে জেলা থেকে উপজেলা এবং উপজেলা থেকে ইউনিয়ন ও গ্রামে। যেসব প্রত্যন্ত এলাকায় সরাসরি বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না, সেসব এলাকায় প্রত্যেক ঘরে ঘরে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবস্থা নিয়েছি। বিদ্যুৎবিহীন এলাকায় প্রতেকটি ঘরে সোলার প্যানেল সরবরাহ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছাতে সোলার প্যানেল যাবে। পার্বত্য অঞ্চলের প্রত্যেকটি ঘর আলোকিত হবে। আমরা সে ব্যবস্থা নিয়েছি। রাঙামাটিতে মেডিকেল কলেজ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। পার্বত্য চট্টগ্রামকে মোবাইল নেটওয়ার্কে এনেছি। পাহাড়ে যেসব বিদ্যালয় রয়েছে, সেগুলো আবাসিক করা হবে। আবাসিক হলে প্রত্যন্ত এলাকার ছেলেমেয়েদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। এ সময় রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অগ্রগতি জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়টির ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) ড. প্রদানেন্দু বিকাশ চাকমা বিশ্বদ্যিালয়ের ক্যাম্পাস নির্মাণে ডিপিপি প্রস্তাবনা সংশোধন দরকার বলে উল্লেখ করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাড়াতাড়ি সংশোধনী ডিপিপি পাঠালে দ্রুত অনুমোদন দেয়া হবে।
এ উপলক্ষে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ। তিনি বলেন, পার্বত্য জেলা রাঙামাটির উন্নয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের একটি অধ্যায়। জাতির পিতা তিনবার রাঙামাটি সফর করেছিলেন। সর্বশেষ ১০৭৪ সালে বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধন করেছিলেন। বর্তমানে জাতির পিতার স্বপ্নে সারা দেশের সঙ্গে উন্নয়নে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি। এ জেলার উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপাশি ৭ দশমিক ৪ মেগাওয়াট কাপ্তাই সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশের বিদ্যুৎ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইনুর রহমান, জোন কমান্ডার লে. কর্নেল রফিকুল ইসলাম, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব বায়েদ মিঞা, চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, পুলিশ সুপার আলমগীর কবিরসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিয় করেন রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. প্রদানেন্দু বিকাশ চাকমা, মুরগি খামারী আক্তার হোসেন ও রাণী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। ২ একর জমির ওপর নির্মিত হয়েছে কাপ্তাই সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এর উৎপাদন ক্ষমতা ৭ দশমিক চার মেগাওয়াট। ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কেন্দ্রটি বাস্তায়িত হয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে।
প্রকল্প পরিচালক মুহাম্মদ ফারুক জানান, সৌর শক্তির সাহায্যে পরিচালিত কাপ্তাই সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুতের ২ মেগাওয়াট ব্যয় হবে কেন্দ্রে। বাকি ৫ দশমিক ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে জাতীয় গ্রীডে। কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ২৫০ মেগাওয়াট। এখন কাপ্তাইয়ে দুই কেন্দ্রে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে ২৫৭ দশমিক ৪ মেগাওয়াট।