পাবর্ত্য শান্তি চুক্তির ২২ বছর আজ

79

পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ ও আঞ্চলিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) সাথে শান্তি চুক্তির ২২ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ ২ ডিসেম্বর। চুক্তির ২২ বছরেও পাহাড়ে শান্তি নিয়ে এখনো ভিন্নমত পাহাড়ি ও আওয়ামী লীগ এবং বাঙালি সংগঠনগুলোর।
তাদের মতে, শান্তি চুক্তির ২২ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো পরিপূর্ণ শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি পার্বত্যাঞ্চলে। গুম, খুন, চাঁদাবাজি, অপহরণের মতো ঘটনা এখনো চলছে পাহাড়ে। থামেনি অস্ত্রের ঝনঝনানিও। চুক্তির পরেও পাহাড়ে অশান্তি বিরাজ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাঙালি সংগঠনগুলোর নেতারাও।
বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি- এই তিন পার্বত্য জেলার দীর্ঘ দিনের পাহাড়ি-বাঙালিদের দ্ব›দ্ব-সংঘাত বন্ধ করে পার্বত্যাঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পাহাড়ের সশস্ত্র বাহিনীর (শান্তি বাহিনী) সাথে শান্তি চুক্তি করে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার।
রাজনৈতিক সহিংসতা, মামলা-হামলার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বিরোধ সমস্যাগুলোর সমাধান হয়নি আজও। দ্রæত চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন না হলে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে বলে দাবি করেন পাহাড়ি সংগঠনগুলোর নেতারা। পাহাড়ি উপজাতি নেতারা মনে করেন, চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সবার আন্তরিকতা দরকার। সরকার যেমন আন্তরিক তেমনি পার্বত্য অঞ্চলের নেতৃবৃন্দেরও আন্তরিকতা থাকতে হবে।
অন্যদিকে পাহাড়ের বাঙালি সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ মনে করেন, বাঙালিদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করে একটি পক্ষের সাথে শান্তি চুক্তি করা হলেও যে উদ্দেশ্যে শান্তি চুক্তি করেছিল সে উদ্দেশ্য এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। যার কারণে এখনো পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের আধিপত্য বিস্তার চলছে। পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ি-বাঙালি সবার নিরাপত্তার স্বার্থে পূণরায় নিরাপত্তা ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানান বাঙালি অধিবাসী নেতৃবৃন্দ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’র কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কেএস মং এর মতে, সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিক নয়। এ কারণে চুক্তির আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করার জন্য জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। চুক্তির মূলদাবিগুলো এখনো পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হয়নি। জুম্ম জনগণ ও পার্বত্যাঞ্চলের স্থানীয় পাহাড়িদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন করে শান্তি চুক্তি সম্পাদন করেছি। সরকারের উচিত শান্তি চুক্তির দ্রæত বাস্তবায়ন করা। তার মতে, চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে মিথ্যা মামলা দিয়ে নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে এবং নেতারা এলাকায় থাকতে পারছেন না। শান্তি চুক্তির ২২ বছরপূর্তিকে ঘিরে কোনো কর্মসূচিও থাকছে না বলে জানান জেএসএস এর এই নেতা। পাহাড়ের ইউপিডিএফও সংগঠনও আজ কোনো কর্মসূচি রাখেনি।
আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, শান্তি চুক্তির ফলে পাহাড়ে আজ অনেকটাই শান্তির সুবাতাস বইছে। শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের সাথে সাথে উন্নয়ন হচ্ছে পার্বত্য এলাকার সর্বক্ষেত্রে। তবে এখনো কিছু কিছু দুষ্কৃতিকারী এই শান্তিরধারা ব্যাহত করে পার্বত্য এলাকায় অশান্তি তৈরি করে শান্তি চুক্তিকে বিতর্কিত করার অপ্রয়াস চালাচ্ছে বলে মনে করেন তারা। তাদের মতে, সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিক বলেই শান্তি চুক্তির বেশিরভাগ ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে। যেগুলো বাকি রয়েছে সেগুলোও বাস্তবায়ন করা হবে। সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে কথা রাখলেও জেএসএস তাদের কথা রাখেনি। এখনো পাহাড়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, গুম, খুন বন্ধ করেনি তারা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে দুই যুগের অধিক অশান্তি, সংঘর্ষ, রক্তক্ষয়ী অবস্থা বিরাজ করছিল। সেই অবস্থা থেকে পার্বত্যাঞ্চলকে আজকে উন্নয়ন, শান্তি, সম্প্রীতির জায়গায় নিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চুক্তির অধিকাংশ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারা আছে তাও পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এই পার্বত্যাঞ্চলকে দেশের সম্ভাবনাময়, সম্পদশালী এলাকা করার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধারণ উন্নয়ন করেছেন, আগামিতে আরো করবেন। তৃতীয় কোনো পক্ষের সহায়তা ছাড়া একমাত্র শেখ হাসিনার আন্তরিকতার কারণে আন্দোলনকারীদের সাথে শান্তি চুক্তি করেছেন। শান্তি চুক্তির ২২ বছর পূর্তিতে তিন পার্বত্য জেলাসহ সারাদেশের মানুষকে শুভেচ্ছা জানান তিনি।